কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসী কায়দায় অন্যের জমি জবর দখলের সাথে যুক্ত হয়েছে ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি। এই চক্রের সদস্যরা নিজেরাই ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে অন্যের জমি কেনা-বেচা প্রক্রিয়ায় হাতিয়ে নিচ্ছে। ঘওউ বা জাতীয় পরিচয়পত্র ও ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতির এই চক্রের সাথে মোটা অংকের টাকা ভাগাভাগী বা হিস্যার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু সদস্য, রাজনৈতিক প্রভাশালী ও জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ার অভিযেগে মামলা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত আশরাফুল আলম নামের এক ব্যক্তি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৯নং ঝাউদিয়া ইউনিয়নের নি:সন্তান মৃত: জাহানারা খাতুন নামে এক ব্যক্তির ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে তার জমি কুক্ষিগত করার অভিযোগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কেরামত আলী বিশ্বাস সহ ১১জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান। তবে এমামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি নিজের ভুল স্বিকার করে আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে ইস্যুকৃত ওয়ারিশ সনদ বাতিলের অঙ্গীকার করেছেন। সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের মাছপাড়া গ্রামের ইসলাম মালিথার অভিযোগ, ২০, ৩০ বা ৪০ বছর ধরে ক্রয়সূত্রে স্বত্ত্বাধিকার হয়ে বাড়িঘর করেছি বা মাঠাল জমিতে চাষবাস করছি। আমার জমির স্ব-পক্ষীয় সব রকম কাগজপত্রও রয়েছে। হঠাৎ করে পুলিশ নিয়ে হাজির স্থানীয় বিটু মোল্লা নামে ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ট এক ব্যক্তি। তিনি দাবি করেন, ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ বানায়া জালিয়াতি করে নিজেরাই এসব জমি কেনা-বেচা করে জবর দখলের চেষ্টা করছে।সাবেক ইউপি সদস্য সুজা মেম্বার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান কেরামত আলী একজন নি:সন্তান মহিলার সন্তান দেখিয়ে ওয়ারিশ সনদ করে এসব করেছে। আমার বাপ-দাদার আমল থেকে পাওয়া এবং ক্রয়কৃত এসব জমিতে ওরা দখলবাজী করতে আসছে। এটা তো নিতে পারবেই না; আবার বেশী বাড়াবাড়ি করলে এখানে রক্ত বন্যা বয়ে যাবে। জালিয়াতি জোচ্চরী করে বেশী দিন টিকে থাকা যায় না।নি:সন্তান জাহানারা খাতুনের ছোট সতিন লতিফা বেগম বলেন, বড় সতিন জাহানারা মৃত্যুকালে একমাত্র ওয়ারিশ ছিলেন আমার স্বামী আব্দুল ওয়াদুদ। কারণ সাতকুলে জাহানারার কেউ ছিলো না। জরিনা খাতুন ওরফে রানু নেছা নামে একটি মেয়েকে পুষেছিলেন জাহানারা। আইন মতে, রানু জাহানারা কিংবা স্বামী আব্দুর ওয়াদুদের বৈধ কোন বৈধ না। সেকারণে বিধিমতে আব্দুল ওয়াদুদের মৃত্যুর পর পরবর্তী স্ত্রীর সন্তানরাই হবেন তার বৈধ ওয়ারিশ। কিন্তু ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সহযোগীদের যোগসাজসে জরিনা বেগম ওরফে রানু নেছা নামে এক মৃত: মহিলাকে নি:সন্তান মৃত: জাহানারা খাতুনের কন্যা হিসেবে ওয়ারিশ সনদ দিয়ে একাধিক খতিয়ানভুক্ত প্রায় পৌনে দুই একর জমি কেনা-বেচা করে জবর দখলের চেষ্টা করছেন। সেই কারণে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন তার পরিবার।এদিকে জালিয়াতি বা জবর দখল নয়; কাগজপত্র দেখেই জমি কিনেছেন দাবি করেন সনদ জালিয়াতির হোতা বিটু মোল্লাহ নামে এক ব্যক্তি।মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মিলন জানান, ৪২বছর পূর্বে স্বামী ব্যতীত সাত-কুলে আত্মীয় পরিজনহীন নি:সন্তান জাহানারা খাতুন একমাত্র ওয়ারিশ রেখে যান তার স্বামী ওয়াদুদ মিয়া’কে। এতে স্ত্রীর নামের কিনে দেয়া ভু-সম্পত্তির স্বত্ত্বাধিকার হন ওয়াদুদ মিয়া। ১৮ বছর পূর্বে ওয়াদুদ মিয়া মৃত্যুকালে তার ওয়ারিশ হিসেবে পরবর্তী স্ত্রী-সন্তানদের রেখে যান। মৃত: নি:সন্তান জাহানারা খাতুন ও মৃত: আব্দুল ওয়াদুদ দম্পতির জরিনা খাতুন ওরফে রানু নেছা নামের কোন ওয়ারিশের অস্তিত্ব নেই এমন কথা নিশ্চিত করে জানিয়ে এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ওই জমি কেনা-বেচার দলিল করা সম্পূর্ণ জালিয়াতি চক্রের কাজ। সদর উপজেলার ৯নং ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কেরামত আলী বিশ্বাস সাংবাদিকদের অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি কোন জালিয়াতির সাথে যোগসাজস করে কারো জমি জবর দখলের সাথে জড়িত নই’। ‘মামলা হয়েছে মোকাবিলা করব’। আদালত যদি বলে ইস্যুকৃত ওয়ারিশ সনদ অবৈধ বা জাল তাহলে তা বতিল করব। কুষ্টিয়া সিনিয়র জডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে করা ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, জাল ওয়ারিশ সনদ ইস্যুর মাধ্যমে জালিয়াতি করে জমি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১জনের বিরুদ্ধে নালিশী মামলা করেন মৃত: জাহানরা খাতুন ও আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া পরিবারের সদস্য আশরাফুল আলম। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিনের উপর। তদন্ত শেষ করে গত ২২অক্টোবর,২০২০ তারিখে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। প্রতিবেদনের সারাংশে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন নি:সন্তান মৃত: জাহানারা খাতুনের ওয়ারিশ সনদ ইস্যুর ক্ষেত্রে বৈধতা যাচায়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বিচ্যুতি ঘটেছে। এক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তে বাতিল গন্য হলে তা বাতিল করা হবে এবং ওয়ারিশ সনদ আইনে যদি স্বামী ওয়ারিশ হয় তাহলে তাকে ওয়ারিশ সনদ দেয়া হবে বলে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৯নং ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কেরামত আলী বিশ্বাস তদন্ত বোর্ডকে জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন