ফিলিপাইনে আঘাত হানল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় গনি, যা ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে, সঙ্গে ছিল মুষলধারে বৃষ্টিপাত। তাতে বিরাট অঞ্চলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় গনির আঘাতে অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রবল বেগে পানি ঢুকে পড়ায় রাস্তাঘাটে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে কাতানদুয়ানেস দ্বীপে প্রথমে আঘাত হানে সুপার টাইফুন গনি। এরপর ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে মূল দ্বীপ লুজন অতিক্রম করে, যেখানে রাজধানী ম্যানিলা অবস্থিত। খানিকটা দুর্বল হয়ে এলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সতর্ক করে দিয়ে বলা হচ্ছে, বাতাস আর মুষলধারে বৃষ্টি এখনো বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে, ঘটাতে পারে আকষ্মিক বন্যা, ভূমিধস ও পলল বাহিত স্রোত। ২০১৩ সালে আঘাত হানা হাইয়ানের পর এটাই ফিলিপাইনের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। গনি ফিলিপাইনে পরিচিত রোলি নামে। কাতানদুয়ানেস দ্বীপের ছোট্ট শহর ভিরাকে ৭০ হাজার মানুষের বাস। ঘূর্ণিঝড়টি এখানে প্রথম আঘাত হানার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অনেকটাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি থেকে দেখা যায়, গনি যে পথে অতিক্রম করে সেই পথে টিনের বাড়ির চালা উড়ে গেছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে, আশ্রয় সেন্টারের ছাদ ভেঙে গেছে এবং নানা অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও রাস্তায় যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অ্যালবে প্রদেশে পাঁচ বছরের এক শিশুসহ মোট চারজন মারা গেছে ঘূর্ণিঝড় গনির ছোবলে। এর মধ্যে দুজন পানিতে ডুবে গেছে, একজন অগ্নেয়গিরির লাভার তোড়ে ভেসে গেছে এবং আরেকজন মারা গেছে গাছ পড়ে। এ বছর এশিয়ায় এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। ঝড়ের প্রভাবে ফিলিপাইনে ভ‚মিধসের ঘটনাও ঘটেছে। সক্রিয় দুই আগ্নেয়গিরি মায়োন ও টালের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন কর্মকর্তারা। লুজোন ও কাতানদুয়ানেস দ্বীপে তীব্র ঝড়ো বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। রবিবার বিকালে বা সোমবার সকাল নাগাদ ঝড়টি দুর্বল হতে যেতে পারে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। মূল ঝড়টি এরইমধ্যে লুজোন দ্বীপ অতিক্রম করেছে। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা এই দ্বীপে অবস্থিত। আগেই সতর্কতার অংশ হিসেবে সেখানকার প্রায় ১০ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। রাজধানী ম্যানিলার বিমানবন্দর সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে-র একজন সহযোগী সিনেটর ক্রিস্টোফার গো। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আমরা এমনিতেই একটি কঠিন সময় পার করছি। তার মধ্যেই আরেকটি দুর্যোগ হানা দিলো। উল্লেখ্য, ফিলিপাইনে বছরে গড়ে ২০টি ঝড় আঘাত হানে। ২০১৩ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দেশটিতে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ম্যানিলা থেকে বিবিসির সাংবাদিক হাওয়ার্ড জনসন বলছেন, ক্যাটানডুয়েনিস দ্বীপের ছোট্ট শহর ভিরাক নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। সেখানে বসবাস করেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। উদ্বেগের কারণ হলো সেখানে গণি আঘাত হানার পর ওই দ্বীপের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে। সেখানে কি ঘটছে তা কেউ বলতে পারছেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গণির চলার পথে বাতাসের তোড়ে উড়ে যাচ্ছে বাসার ছাদের অংশ। স্থানীয় সরকার সেখানে বিদ্যুতের ভয়াবহ সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রের ছাদ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। অবকাঠামোর হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। দেখা দিয়েছে বন্যা। বন্ধ হয়ে আছে সব সড়ক। আলবে প্রদেশে ৫ বছর বয়সী এক শিশু সহ মোট চার জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দু’জন ডুবে মরেছে। একজনকে লাভার মতো উদগীরণ হওয়া কাদামাটি ভাসিয়ে নিয়েছে। একজন মারা গেছে গাছের নিচে চাপা পড়ে। লেগাজপি উপকূলীয় শহর আলবে’র ফ্রান্সিয়া মাই বোরাস (২১) বলেছেন, বাতাসের গতি ভয়াবহ। গাছ মড়মড় করে ভেঙে যাওয়ার শব্দ পাচ্ছি। বাতাসের গতি আরো বাড়ছেই। উল্লেখ্য, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই দ্বীপরাষ্ট্রটির। গড়ে প্রতি বছর সেখানে কমপক্ষে ২০টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। গত সপ্তাহে একই এলাকার ওপর দিয়ে যখন ঘূর্ণিঝড় মোলাভে বয়ে যায়, তখন তাতে ২২ জন মারা যান। এ বছর করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে পূর্ব প্রস্তুতি জটিল আকার ধারণ করেছে। বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন