করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহার জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে, কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কীভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন কিংবা কি করবেন, কি করবেন না, সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
যা করবেন-মাস্ক স্পর্শ করার আগে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। মাস্ক ছেঁড়া বা ময়লা কি না, দেখে নিন। মাস্ক মুখের সঙ্গে এঁটে যায় এবং কোনো ফাঁক না থাকে সেটি নিশ্চিত করুন। মাস্ক খোলার আগে হাত ভালো করে ধুয়ে নিন। কানের বা মাথার পেছন দিকে ফিতা ধরে মাস্ক খুলুন। মাস্ক পূনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিস্কার প্লাস্টিক ব্যাগে রাখুন। গরম পানি আর সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে মাস্ক পরিস্কার করুন। মাস্ক মুখ থেকে খোলার পর হাত পরিস্কার করে নিন।
যা করবেন না- ঢিলেঢালা মাস্ক ব্যবহার করবেন না। মাস্ক পরার সময় নাক বের করে রাখবেন না। এক মিটারের মধ্যে অন্য কেউ থাকলে মাস্কটি খুলবেন না। শ্বাস কষ্ট হয় এমন মাস্ক ব্যবহার করবেন না। আপনার ব্যবহার করা মাস্ক অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমেছে বলার কোনো কারণ নেই। ইউরোপ আমেরিকায় প্রথম ঢেউয়ের চেয়েও বেশী মাত্রার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। অনেকেই এই ঢেউ শেষ পর্যন্ত সুনামিতে গিয়ে ঠেকবে বলে সতর্ক করছেন। ধনী দেশ গুলোই এটা নিয়ন্ত্রনে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের মহামান্য প্রধানমন্ত্রীও সতর্ক করছেন, সতর্ক হতে বলছেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভাইরাসের প্রকোপ বাড়বে বললেও বিধিনিষেধ বা সতর্কতা সংক্রান্ত কোনো অগ্রিম নির্দেশনা জানানো হয়নি। এখন সব কিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে এমন একটি ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে সামনে যে বিপদ অপেক্ষা করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের মনে হচ্ছে, পুরনো নির্দেশনাই নতুন করে মানুষকে গুরুত্বের সঙ্গে বললেও কিছুটা সচেতনতার মধ্যে থাকার কথা। যেমন-ঘরে থাকা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া, মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ইত্যাদি। এখন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বের হতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সম্ভব নয়। তবু নিয়ন্ত্রণ একেবারে ছেড়ে দিলে শীতের আগমনে করোনা পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যেতে পারে সে বার্তাই আমরা পাচ্ছি। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় এখনও উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে অনেকে।
আমরা মনে করি, এখনও সরকারের কড়াকড়ি আরোপ অব্যাহত রাখা জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংক্রামক রোগ আইন, ২০১৮ এর ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে আরোপিত বিধিনিষেধ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কঠোর না হওয়ার মানসিকতা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করছে। এমনিতেই এখন দেশের কোথাও ‘লকডাউন’ নেই। অবশ্য এত দীর্ঘসময় থাকারও কথা নয়। কিন্তু স্যানিটাইজার বা মাস্ক ব্যবহার করা হবে না, তা তো হতে পারে না। ভাইরাসের বিস্তার রোধে আলাদাভাবে অধিকাংশ জেলা, উপজেলা, অঞ্চল নিরাপদে রাখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সর্বত্র চরম ঢিলেঢালা ভাব। সারাদেশে যান চলাচল কোভিড-১৯ এর আগের মতোই স্বাভাবিক। গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের সামনেই যান চলাচল করছে, অধিকাংশের মুখেই কোন মাস্ক নেই। গাড়ির ড্রাইভার হেলপারও মাস্ক ছাড়াই চলছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান খোলা। খোলা নিয়ে আমাদের কথা নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হবে না, এটা কেমন কথা। মূলকথা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি একেবারেই মানা হচ্ছে না। মানুষ জনসমাগম করছে নির্বিগ্নে। কোনো ভয়, চিন্তা নেই। দু:খজনক হলেও সত্য, মানুষ যেমন জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছে তেমনি অপ্রয়োজনেও বের হওয়ার চিত্র স্পষ্ট। শহরের মানুষ যতটা সতর্কতা অবলম্বন করছে, মফম্বল ও প্রত্যন্ত গ্রামে ততটাই ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। যে কারণে সরকার পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করল, সেখানে সিনেমা হল খোলা, টুরিস্ট স্পটে, রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ভীড় আর নিয়ম না মানার সংস্কৃতি আমাদেরকে হতাশ করছে।
এই মহামারিতেও দেশে অপরাধ ও শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। ধর্ষণ, খুন, হত্যা বেড়েছে। নানা দাবিতে দেশের মানুষ রাস্তায় অবরোধ, মানবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোনো শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হয়ে এসে আন্দোলন করছে। এভাবে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন হুমকির সম্মুখীন। আমরা জানি, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে অবস্থান ও চলাচলে বিধিনিষেধ কেবল আমাদের দেশেই নয়. বরং ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়ছে গোটা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ভাইরাসটি আরও শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পরেছে। বিশ্বে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রতিবেশী ভারতের অবস্থাত খুবই নাজুক। পরিস্থিতি কঠোরভাবে মোকাবিলা করেও তারা হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদেরও কঠোর হতে হবে। আমাদের প্রতিদিন যদি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলে পাল্লা দিয়ে বাড়বে মৃতের সংখ্যা। সেটি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের সবাইকে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন