শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে হুমকি ও উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ৬:২৪ পিএম

ডেট্রয়েট শহরের একটি কেন্দ্রে মঙ্গলবার রাতে ভোট গণনার সময় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।


ভোট জালিয়াতির কারণে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে পারেননি বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আসছেন। তিনি জনগণের রায় প্রত্যাখ্যান করায় রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সুইং রাজ্যগুলোতে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা বাড়ছে। যার ফলে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের কর্মকর্তাদের উপরেই সহিংসতার হুমকি সৃষ্টি হয়েছে এবং নির্বাচন পরবর্র্তী নির্ধারিত প্রক্রিয়াগুলোও থমকে গেছে।

বুধবার অ্যারিজোনায় ডেমোক্র্যাটিক সেক্রেটারি অফ স্টেট কেটি হবস একটি বিবৃতি জারি করেন। সেখানে তিনি নির্বাচনের উপরে ‘ধারাবাহিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আনাস্থা সৃষ্টি’ হওয়ায় শোক প্রকাশ করেন এবং রিপাবলিকান কর্মকর্তাদের প্রতি ‘অব্যাহত ভুল তথ্য দেয়া’ বন্ধ করার আহ্বান জানান। তার রাজ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জো বাইডেন জেতায় তাকে এবং তার পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। জর্জিয়াতে বাইডেন অল্প ব্যবধানে বাইডেন জিতেছিলেন। সেখানে রিপাবলিকানদের অনুরোধে পুনরায় ভোট গণনা করা হয় যা বুধবার রাতে শেষ হয়। তবে তাতে ফলাফলের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না বলেই জানা গেছে। রাজ্যটির রিপাবলিকান সেক্রেটারি ব্র্যাড রাফেন্সপার্গার জানিয়েছেন, তিনিও হুমকি লেখা বার্তা পেয়েছেন। তিনি আরও জানান, ভোট বাতিল করার জন্য তার উপরে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সিনেট বিচার বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম চাপ সৃষ্টি করেছেন।

পেনসিলভেনিয়ায় স্টেটহাউস রিপাবলিকানরা বুধবার রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল পুণরায় নিরীক্ষণের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল যেটিতে ‘অসংখ্য অসঙ্গতি’ রয়েছে বলে তারা দাবি করেছে। ডেমোক্র্যাটরা তাদের এই পদক্ষেপ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘বাধা প্রদান’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ হিসাবে অভিহিত করেছে। উইসকনসিনে রিপাবলিকানরা ভোট পুনঃগণনার জন্য বুধবার রাজ্যের দুটি বৃহত্তম কাউন্টিতে নতুন করে মামলা দায়ের করেছে। এই দুই রাজ্যেই ২০১৬ সালে ট্রাম্প জিতেছিলেন কিন্তু এ বারের নির্বাচনে বাইডেন উভয় রাজ্যই পুনরুদ্ধার করেছেন।

তবে মঙ্গলবার রাতে মিশিগানে যে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, অন্য কোন জায়গার সাথে তার তুলনা হয়না। সেখানকরা ওয়েইন কাউন্টিতে, যার মধ্যে ডেট্রয়েটও অন্তর্ভুক্ত, তালিকায় সামান্য ভুল থাকায় ক্যানভাসিং বোর্ডের দুই রিপাবলিকান সদস্য প্রথমদিকে নির্বাচনের ফলাফলকে সত্যায়িত করতে অস্বীকার করেছিলেন। এটি খুবই আশ্চর্যজনক ও পক্ষপাতমূলক একটি পদক্ষেপ ছিল যার কারণে একটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্যতম কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত শহরের হাজার হাজার ভোটারের ভোট বাতিল হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে এ ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায়, পরে বোর্ডের ওই দুই সদস্য তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং ফলাফল সত্যায়িত করতে রাজি হন। ডেট্রয়েটের ডেমোক্র্যাটিক মেয়র মাইক দুগগান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভোটের ফলাফল আটকাতে রিপাবলিকান প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘তাদের এই আচরণের মাধ্যমে তাদের বর্ণবাদী মনোভাবই প্রকাশ পায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকান গণতন্ত্রে গতরাতে ফাটল ধরেছিল, তবে তা ভাঙ্গেনি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে, আমাদের সবকিছুর উপরেই হুমকীর সৃষ্টি হয়েছে।

এরপরে সেখানে আবারও দুই দলের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নির্বাচন বোর্ডের সেই দুই রিপাবলিকান সদস্য যারা নজিরবিহীনভাবে ফলাফল সত্যায়িত করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং পরে জনগণের আন্দোলনের মুখে সত্যায়িত করেন, তারা আবার তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। একটি হলফনামা জমা দিয়ে তারা বলেন, ফলাফল সত্যায়িত করার জন্য তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছিল এবং তারা মনে করেন যে, ওয়েন কাউন্টিতে স্বাধীনভাবে ফলাফল নিরীক্ষণে বাধা দিয়ে ডেমোক্র্যাটরা তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কোর্টরুম, স্টেটহাউস এবং নির্বাচন বোর্ডের সভাগুলোতে ভোটের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্রমবর্ধমানভাবে তার ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছেন। পাশাপাশি, মাঠ-পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরকে প্রভাবিত করতে তিনি তার নির্বাহী ক্ষমতারও অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপরে ট্রাম্প এবং তার সহযোগীদের অব্যাহত হামলায় বেশ কয়েকটি রাজ্যে চূড়ান্ত সময়সীমায় মধ্যে ফলাফলের প্রকাশের বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ, একবার ফলাফল ঘোষিত হলে ট্রাম্পের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। কিছু ক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্থ হলেও, যে সব রাজ্যে ভোট গণনা শেষ হয়েছে চূড়ান্ত ফলাফল সাপেক্ষে তাদের নির্ধারিত ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট দিতে যাচ্ছে, সে সব জায়গায় ঝামেলা সৃষ্টি করে প্রক্রিয়াটি আটকে রাখাই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ট্রাম্পের মূল কৌশল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন