শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সাদা পোশাকে পুলিশ নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে : আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

উচ্চ আদালতে জামিনের পরেও সাদা পোষাকে পুলিশ নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, উত্তরার তুরাগ থানার সভাপতি-সম্পাদক বুধবার হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর পথে সাদা পোষাকে পুলিশেরা তুলে নিয়ে গেছে। এখনো ওদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এটা অহরহ ঘটছে এখন। আমি খুব স্পষ্ট করে সরকারকে বলতে চাই যে, অবিলম্বে এদেরকে ফিরিয়ে দেন তাদের পরিবারের কাছে, অবিলম্বে এদেরকে মুক্তি দিন। অন্যথায় জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে সেই তরঙ্গ কিন্তু আপনাদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি অনলাইন যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে বন্দি, আমাদের তরুন সম্ভবনাময় নেতা তিনি নির্যাতিত হয়ে মিথ্যা মামলায় বিদেশে অবস্থান করছেন। আমাদের লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ৩৫ লাখের বেশি, গুম হয়ে গেছেন প্রায় ৫‘শ উপরে নেতাকর্মী এবং নিহত হয়েছেন সহস্রাধিক এবং গত কয়েকদিন আবারো গুম হয়েছেন ৩/৪ জন। বুধবার হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর সাদা পোষাকে পুলিশ তুরাগ থানা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক মামুন পারভেজ তন্ময় ও সহসভাপতি তৌহিদুল ইসলাম হাসিবকে তুলে নিয়ে যায়। উত্তরার পশ্চিম থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মজুমদার মাসুমকে বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় উত্তরা ৫ নং সেক্টার থেকে ধরে নিয়ে যায়। সাদা পোষাকে পল্টন থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক লিয়ন হক বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এদের কাউকে এখনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, দেশে এখন প্রকৃতপক্ষে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। এই সময়ে সুশাসন দূরের কথা এখানে শাসন বলতে কিছু নেই। প্রতিদিন পত্র-পত্রিকার তাদের (ক্ষমতাসীন) দুর্নীতির খবর আসছে। ভয়াবহ দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই, দুই-একটা চুনোপুটিদের ধরে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।

তারেক রহমানের জন্মদিনে দলের পক্ষ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের নেতার জন্মদিনে কোনো উৎসব পালন করতে পারছি না। তার এই জন্মদিনে আমরা কেক কাটবো না। আজকে আমরা তার জন্য দোয়া করব। আল্লাহ যেন তাকে দীর্ঘজীবন দান করুন এবং তাকে সেই শক্তি দিন যে শক্তি দিয়ে সে তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদেশের জনগণকে মুক্ত করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তি জন্য স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে এবং এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের নেতা (তারেক রহমান) ব্যক্তিগত জীবনে অনেক দুঃখকষ্টে আছেন। তার পিতাকে হারিয়েছেন তিনি খুব ছোট বয়সে, মা অন্তরীণ। তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো চলে গেছেন এই সরকারের নির্যাতনের কারণে। নিজে নির্বসিত অবস্থায় বাস করছেন। সুতরাং তাকে (তারেক রহমান) সাহস দিতে হবে আমাদেরই।

তিনি বলেন, আমাদের এই নেতার ওপরে শুধু বিএনপি নই, সারা দেশের মানুষ তাঁকিয়ে রয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্ত হবে আরেকবার, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পাবে তাদের অধিকার সেই আশা-ভরসা নিয়ে এদেশের মানুষ তাঁকিয়ে আছে। আমরা সবাই আজকে শপথ নেবো তার জন্মদিনে তার হাতকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশের জনগণকে একত্রিত করে, ঐক্যবদ্ধ করে দানবকে পরাজিত করব।

কোয়ারেন্টাইনে মির্জা ফখরুল:
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি দুঃখিত যে, আপনাদের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি। কারণ এখন আমার বাসাতে করোনা ধরা পড়েছে। যার ফলে আমি এখন ১৪ দিনের আইসোলেশনে আছি। চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, মহাসচিবের শ্যালক কাজী একরামুল রশীদ উত্তরার বাসায় করোনায় পজেটিভ ধরা পড়ে। বর্তমানে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা এখন সব জায়গাতে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের সিনিয়র লিডার মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমাদের মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসসহ অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক নেতাকে আমরা এই করোনায় হারিয়েছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসানসহ এরকম অনেক নেতাকে ইতোমধ্যে আমরা করোনার কারণে হারিয়ে ফেলেছি। আমি অনুরোধ করবো সবাইকে, এখন একটা কঠিন সময়, একটা দুঃসময়। এই দুঃসময় আমাদের কিন্তু জাগ্রত হতে হবে, জেগে উঠতে হবে এবং জেগে উঠতে হবে মনের দিক থেকে।

ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ও এম সাব্বির আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির বিশেষ সম্পাদক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, এনামুল হক চৌধুরী, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, ছাত্র দলের নাজমুল হাসান, মিজানুর রহমান শরীফ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন