শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

আর নয় সাদা পোশাকে গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ

সৈয়দ মুজতবা আলীর অনন্য উপন্যাস ‘দেশে বিদেশে’র অবিস্মরণীয় চরিত্র গৃহসেবক আফগান আগা আবদুর রহমানের মাতৃভূমি প্রীতির সুবাস মাখানো উচ্চারণ ‘ইনহাস্ত ওয়াতানম’ : এই তো আমার স্বদেশভূমিÑশিক্ষিত কাকে না আলোড়িত করেছে? প্রতিটি মানুষের কাছেই তার জন্মভূমি প্রিয়। এত প্রিয় যে তা মায়ের মতো প্রিয়। মা যেমন শিশুকাল থেকে বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত সন্তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয়, শান্তি ও নির্ভরতার স্থল, মাতৃভূমিও তো তাই। গরিব-ধনী নির্বিশেষে সকলের কাছেই নিজের ঘর-বাড়ি যেমন একান্ত আশ্রয়, একটি দেশের মানুষের কাছে তার দেশটিও ঠিক সে রকমই। তাদের কাছে বাংলাদেশ বিনা নাই আর কোনো ঠিকানা। যারা সাময়িকভাবে বিদেশে যান, তারা দেশে না ফেরা পর্যন্ত স্বস্তি-শান্তি পান না। আর যারা বিদেশে থাকেন তাদের কাছে ফেলে যাওয়া দেশের কথা অমর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের প্রতি সেই গভীর ভালোবাসা জড়ানো উক্তি ‘সততঃ হে নদ তুমি পড় মোর মনে’-র মতো সততঃ মনে পড়ে।
এই পরম প্রিয় দেশটি যখন এ দেশের সন্তানদের কাছে ভীতি, আতংক, অনিশ্চয়তা, গুমের দেশ হয়ে যায় তখন? কেউই যখন জানে না তাকে কখন ধরে নিয়ে যাওয়া হবে, তার পরিবার জানে না সে আর ফিরে আসবে কিনা, সে মারা গেছে না বেঁচে আছে তা জানতে পারে না, তখন? আর সে কাজটি যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে করা হয়, তখন দেশকে কি আর নিজের পরম আশ্রয়স্থল বলে মনে হয়? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মানে তো রাষ্ট্র। রাষ্ট্র মানে আশ্বাস, নিরাপত্তা, নির্ভরতা, পায়ের নিচের শক্ত মাটি। সে মাটিই যদি পায়ের নিচে না পাওয়া যায়, তখন? রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের পরম আস্থার স্থল না হয়, তাহলে নাগরিকদের উপায় কী? তারা কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? তারা কি শূন্যতার মধ্যে অসহায়ভাবে ঘুরপাক খেতে থাকবে আর আর্তনাদ করতে থাকবে?
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অপহরণ ও গুমের ঘটনা শংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেরই স্মরণ আছে রমনা-শাহবাগ এলাকার তৎকালীন কমিশনার বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের কথা। ২০১০ সালের ২৫ জুন সাদা পোশাক পরা লোকেরা তার গাড়ির গতিরোধ করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। ধারণা করা হয়, তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক ছিলেন। তারপর ডিবি অফিসে তার খোঁজ নিতে গেলে তারা কিছু জানেন না বলে জানান। একই জবাব দেয় র‌্যাব। আজ পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ। ২০১২ সালে অপহরণ করা হয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে। র‌্যাব-পুলিশ তারও কোনো সন্ধান করতে পারেনি। এ রকমভাবে বিভিন্ন সময়ে অনেককেই অপহরণ ও গুম করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নিখোঁজ, দু’একজন ফেরত এসেছে, বাকিদের লাশ পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাবে ২১ মে প্রকাশিত ‘থামছে না সাদা পোশাকে আটক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই সাদা পোশাকধারীদের আটক কর্মের পরিণতিতে জনমানুষের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বে নিয়োজিত আইনের মানুষদের বেআইনি কাজ- নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতা, ঘটনার শিকারদের স্বজনের কান্না-আর্তনাদ ও অনিঃশেষ প্রতীক্ষার এক মর্মস্পর্শী চিত্র ফুটে উঠেছে। এ প্রতিবেদনে জানা যায়, যে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে (২০১৩-১৫) সারা দেশে ১৮৮ জন অপহরণের পর নিখোঁজ হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩২ জনের লাশ পাওয়া গেছে। বাকি ১১৫ জনের হদিস নেই। সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাউকে আটকের কথা স্বীকারই করেনি প্রশাসন। র‌্যাবের সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৯৬টি অভিযান চালিয়ে ১৫৪ অপহৃতকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় গ্রেফতার করা হয় ১১০ জনকে। অপহরণের ১৪০টি মামলা নিয়ে কাজ করেছে র‌্যাব। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, অপহরণ এবং নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা প্রশাসন যে হিসাব দিচ্ছে তার চেয়েও অনেক বেশি। বছরে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ অপহরণের শিকার হচ্ছে, যাদের অনেকেই পরে আর উদ্ধার হয়নি। বছরের পর বছর নিখোঁজ তারা। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে চার হাজার ৩৯৭টি অপহরণের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৮০৬, ২০১৪ সালে ৯২০, ২০১৩ সালে ৮৭৯ এবং ২০১২ সালে ৮০৬টি মামলা হয়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে অপহরণের মামলা হয়েছে ১৯১টি, যার মধ্যে মার্চে ৬৯, ফেব্রুয়ারিতে ৫৬ এবং জানুয়ারিতে ৬৬টি।
এই যে বিবরণ, আটক ও নিখোঁজের ভীতি সঞ্চারকারী তথ্য, তার সাথে বাস্তবতা ও সত্যের নিবিড় সংযোগ বাংলাদেশের জনজীবনকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কয়েকটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত পুনঃউপস্থাপনের মাধ্যমে এর ভয়াবহতা ও মানুষের কান্নার রূপটি কিছুটা উপলব্ধি করা যেতে পারে। যেমন- ১. আবুজার গিফারী (২২) ও শামীমের ঘটনা। ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ পৌরসভা শিবিরের সভাপতি আবুজার ১৮ মার্চ জুমার নামায শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় সাদা পোশাকের চার ব্যক্তি তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। সেদিনই দুপুরের পর ঝিনাইদহ কে সি কলেজের অনার্সের ছাত্র শিবির নেতা শামীমকে সাদা পোশাক পরা চার ব্যক্তি একইভাবে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একমাস পর যশোরের বিরামপুর শ্মশান থেকে যশোর পুলিশ দু’জন গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। আত্মীয়রা গিয়ে লাশ দু’টি আবুজার ও শামীমের বলে সনাক্ত করেন। ২. গত ১২ মে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় খুলনার খালিশপুরের মো. মনিরুল ইসলাম (২৮), হরিণটানা থানা এলাকার বিসমিল্লা নগর মাদরাসার এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের শিক্ষক মো. আবদুল্লাহ আল সায়েম তূর্য (২৫) ও একই মাদরাসার আরেক শিক্ষক সোয়াইবুর রহমান (২৬)কে। ২০ মে ঐ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুলিশকে জানালে তারা তাকে খুঁজছে বলে জানায়। তাদের জন্য গভীর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন পরিবারের লোকজন। ৩. ১৯ মে ফজরের নামাজের পর নরসিংদী জেলার ভেলানগর গ্রামের দ্বীন ইসলামকে (২৫) ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। তিনি ব্রাহ্মণদি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে টিফিন সরবরাহ করে পরিবার প্রতিপালন করতেন। কয়েকঘণ্টা পরে ছেলের লাশ পান মা সাবিয়া বেগম। এ ব্যাপারে পুলিশের ভাষ্য অবাক করার মতো। নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম ২০ মে বলেন, নিহত দ্বীন ইসলাম একজন বড় ধরনের অপরাধী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও ছিনতাই মামলাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি অপরাধের ঘটনায় তার জড়িত থাকার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে ১৯ মে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পালিয়ে যাবার চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। পরে পুলিশ তাকে চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে পাঠালে সেখানে সে মারা যায়। ৪. সোহানুর রহমান সোহান ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের নূর আলী কলেজের ছাত্র। মা পারভিনা খাতুন জানান, ১০ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে ঈশ্বরবার জামতলা নামক স্থান থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চারজন লোক তাকে ইজিবাইকে তুলে নিয়ে যায়। তারও সন্ধান মেলেনি। তিনি জানান, তার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না।
বর্ণিত চারটি ঘটনার একটি সাদামাটা বিশ্লেষণে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো এই কথিত সাদা পোশাকধারী বা ডিবির লোকেরা মৃত্যুর দূত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, তাদেরকে মৃত্যুদূত হিসেবে প্রেরণ করছে কারা, কী উদ্দেশ্যে? তারপরের কথা হলো, তাদের হাত থেকে কেউই নিরাপদ নয়। প্রথম ঘটনায় ধরে নেয়া যাক যে ছাত্র শিবিরের ছেলেরা নাশকতামূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাই তাদের আটক করে পুলিশ। কিন্তু বাকিরা? দেখা যাচ্ছে, মাদরাসার শিক্ষকেরও রেহাই নেই কিংবা রেহাই নেই ছাপোষা কর্মজীবী মানুষের বা রাজনীতি করে না এমন ছাত্রেরও। অন্যদিকে পুলিশ একটি লোককে হত্যা করার পর সেই অপরাধকে জায়েজ করতে এগিয়ে এসেছেন জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। তার বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি যেভাবে বলেছেন এভাবে ঘটনা ঘটে না। পুলিশের হাত থেকে কথিত পলায়নপর ব্যক্তিকে লোকজন গণপিটুনি দিতে যায় না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে তার বক্তব্যের সত্যতা চ্যালেঞ্জ করবে কে? আবার এ বিষয়ে তদন্ত চাইলে অতি উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশের প্রয়োজন হবে। কেন, সে বাস্তবতাও সবারই বোধগম্য। সে তদন্তও যে প্রভাবিত হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বছরের পর বছর ধরে এসব অপহরণ, গুমের এসব ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে। অপহৃত বা ধরে-তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দু’একজন ফিরছে বা তাদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তা হচ্ছে যদি অপহৃত ব্যক্তির অপহরণ বা তুলে নেওয়ার সাথে সাথে সকল মিডিয়া সোচ্চার হয়, তিনি যদি অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ হন, যদি তাতে বিদেশী দূতাবাস-সংস্থাগুলোর উদ্বেগ ব্যক্ত হয়, তাহলে তিনি অক্ষত অবস্থায় ফেরত আসতেও পারেন। যেমন পরিবেশ নেত্রী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানের স্বামী ফিরে এসেছেন। তার মতো আরো দু’একজন ভাগ্যবান আছেন। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এই ফিরে আসা ব্যক্তিরা কেউই অজ্ঞাত কারণে তাদের সে অজ্ঞাতবাসের বিভীষিকাময় জীবন সম্পর্কে কোনো কথা বলেন না। কারো নামে মামলাও করেন না। এসব অপহরণ বা গুমের শিকার মানুষদের স্বজনরা গত বছর জাতীয় প্রেসক্লাবে একাধিক দফায় সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। তাদের কেউ জানেন না অপহৃত বা গুম হওয়া লোকটি বেঁচে আছেন কি না, মারা গেলে তার লাশটি তারা চান। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গুম হওয়া মানুষগুলোর জন্য মা-স্ত্রী-সন্তান-ভাই-বোনের চলছে অন্তহীন প্রতীক্ষা। তাদের অবর্তমানে সংসারে কত সমস্যা, কত সংকট, অচলাবস্থা। হতভাগ্যদের স্বজনের কান্না-আহাজারিতে উপস্থিতদের অনেকেই সেদিন কেঁদেছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। সরকারের টনক নড়েনি। তাদের সন্ধান জানার বা উদ্ধারের ব্যবস্থা করেনি কেউ।
এ ব্যাপারে দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো কী করছে? প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা বলছেন, সাদা পোশাকে গ্রেফতার চলছেই। আদালতের নির্দেশনা, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবাদ কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও থেকে ডিবি পুলিশ কিংবা র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে কাউকে না কাউকে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তুলে নেওয়ার পর মিলছে লাশ। কেউবা হচ্ছে গুম। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ডিবি পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট থানা ও ডিবি অফিসে গিয়ে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। বরাবরই ডিবি, র‌্যাব ও পুলিশ গ্রেফতার বা আটকের কথা অস্বীকার করে আসছে। অথচ গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া সাদা পোশাকে ধরে নেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, পুলিশ বা ডিবি সাদা পোশাকে কাউকে আটক করেনি। এখন অপহরণকারীরা তাদের কৌশল পাল্টিয়েছে। ডিবি পরিচয় দিয়ে কাউকে ধরে নেওয়া অপরাধীদের একটি কৌশল। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন- ‘ডিবি, র‌্যাব কিংবা পুলিশের কিছু সদস্য অনেক ক্ষেত্রে আইন মানে না। সাদা পোশাকে যখন তখন যাকে খুশি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর মিলছে লাশ। এটা ভয়াবহ অপরাধ এবং মানবাধিকার লংঘন। গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে ধরে নেওয়া আইনের লংঘন। আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, সাদা পোশাকে কাউকে ধরে নেওয়া যাবে না। অথচ এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এজন্য সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-।’
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ১৩ বছর আগে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ-সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনা প্রদান করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার পক্ষ। গত ১৭ মে এ আপিলের শুনানি শেষ হয়। এ সময় আপিল বিভাগ ইউনিফর্ম ছাড়া (সাদা পোশাকে) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতারের ঘটনা গুরুতর বিষয় বলে আখ্যায়িত করেন। আপিল বিভাগ ২৪ মে এ মামলার রায় দেয়ার তারিখ ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের সে রায়ে বলা হয়েছিল, ডিটেনশন (আটকাদেশ) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয় পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃতর নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে। গ্রেফতারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের ভেতরে কাচ দিয়ে নির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন, জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকতে হবে ইত্যাদি। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।
২৪ মে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছে। রায়ে কিছু সংযোজনসহ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়েছে। এর সহজ অর্থ পুলিশ ৫৪ ধারায় কাউকে আটক করতে পারবে। তবে বিনা পরোয়ানায় ও সাদা পোশাকে কাউকে আটক করা যাবে না। গ্রেফতার করতে হলে নিয়ম মানতে হবে। পুলিশ পরিচয়পত্র না দেখিয়ে গ্রেফতার করতে পারবে না।
বর্তমানে মানুষকে আটক করা নিয়ে যে যথেচ্ছাচার চলছে, আপিল বিভাগের এ রায় সে ক্ষেত্রে এক মাইল ফলক হিসেবে গণ্য হবে। আর নয় সাদা পোশাকে গ্রেফতার। এতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে। তবে সব কিছু নির্ভর করবে রায়ের নির্দেশনা সমূহ বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছার উপর। প্রিয় জন্মভূমি নিশ্চিন্ত, নিরাপদ আবাসভূমি হোক, জনজীবনে উদ্বেগ ও শংকা দূর হয়ে স্বস্তি ও শান্তি নামুক, এটাই প্রত্যাশা।
য় লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন