বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল এখনো অরক্ষিত উপকূল

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম ফরিদুল আলম : ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। উপক‚লে এ রাতে আঘাত হেনেছিল মহাপ্রলঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡¡াস। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চারদিক। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছিল। বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই ধ্বংসলীলা দেখে। কেঁদে উঠেছিল বিবেক। এত বছর পর কেমন আছেন তারা? দুর্যোগ মোকাবেলার কী অবস্থা এখন উপক‚লের?
আজ আবারো এসেছে সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। এই দিনে মহাপ্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡¡াসের আঘাতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপক‚লীয় এলাকার প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। চলছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। আবহাওয়া অধিদপ্তরে পূর্বাভাসে এপ্রিল-মে মাসে একাধিক নিম্নচাপের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ অরক্ষিত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপক‚ল। বাংলাদেশের অন্যতম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের বন্দর নগরীর পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, স›দ্বীপ, কক্সবাজারের পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ উপক‚লীয় এলাকার লোকজন এখনো রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡¡াসের আতঙ্কে। ’৯১ সালে এ ভয়াল রাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে এসব এলাকায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও এখন পর্যন্ত সেখানে নির্মিত হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ।
অতীতে লক্ষ্য করা গেছে, ঘোর বর্ষাকালে জোয়ারের পানি ঠেকানোর নামে রিংবাঁধ নির্মাণ, মেরামত, সংস্কারসহ নানা নামে প্রতি বছরই নেয় হয় বিভিন্ন প্রকল্প। কিন্তু এসব প্রকল্পে ঘটে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ নয় ছয় এর ঘটনা। নিরীহ উপক‚লবাসীর মা-বোনদের জীবনের ভাগ্য নিয়ে চলে নানান খেলা। বৃষ্টি হলে ভেঙে যায় বাঁধ। আবারো নতুন নতুন প্রকল্পের নামে নতুন বরাদ্দ। এভাবেই বছরের পর বছর উপক‚লীয় বাঁধের কাজের নামে চলে আসছে সরকারি অর্থের অপচয়। জাতীয় রাজস্বের শতকরা ৮০ শতাংশ অর্থ যোগদানকারী বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে পরিচিত বন্দর নগরীর পতেঙ্গা বেড়িবাঁধটি এখনো পর্যন্ত টেকসইভাবে নির্মিত হয়নি। ’৯১ সালের মহাপ্রলঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে এ বাঁধটি ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছিল নগরীর বিভিন্ন এলাকা, শিল্প কারখানা ও স্থাপনার। অনুরূপভাবে আমার জন্মস্থান বাঁশখালী উপক‚লীয় এলাকা মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছিল। ভয়াবহ প্রাণহানি আর বসতভিটা লন্ডভন্ড করে সেদিন বাঁশখালী উপক‚লকে তছনছ করে দিয়েছিল। সেইদিন থেকে এলাকাবাসী সবকিছু হারানোর নীরব দুঃখ-কষ্টের এত বছরের জোরালো দাবি ছিল টেকসই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার। অবশেষে বাঁশখালীর উপক‚লবাসীর প্রাণের দাবি ও স্বপ্ন শেখ হাসিনার সরকার পূরণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১৯ মে একনেক চেয়ারপার্সন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১০ কোটি অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে ২৫১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উপক‚লে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।
কেননা এটির সাথে জড়িত রয়েছে উপক‚লীয় অঞ্চলের অসংখ্য মানুষের জীবন মরণ প্রশ্ন। এই কাজকে ঘিরে সর্বত্রই খুশির শেষ নেই বটে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্থর গতি জনমতে ক্রমাগত ক্ষোভের সঞ্চার করছে। কারণ তারা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিম্নমানের উপাদান ব্যবহারে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে কাজ করছে। এহেন দুর্নীতি অনিয়ম ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বলয়ের বাইরে থেকে নিরাপদে উক্ত কাজ সুষ্ঠু ও সুনিপুণভাবে সেনাবাহিনী কিংবা নৌবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে আসছিল। তা যদি হতো তাহলে আজ কতিপয় প্রকল্প সম্পৃক্তগণ উক্ত অনিয়ম করার সুযোগ পেত না।
আমরা দেখেছি ২০১৫ সালে মে থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এই কাজের মেয়াদ রাখা হলেও কাজ শরু হয়েছে সকল প্রক্রিয়া শেষে, বিগত ২০১৬ সালের শেষ পর্যায়ে এসে। কাজ শুরু সময়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মারামারি ও হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়াতে প্রথম ২০ দিন কাজ বন্ধ থাকে। ইউএনও, পুলিশের হস্তক্ষেপে পুনরায় কাজ শুরু হয়। তখন কাজ বন্ধ থাকায় চলমান কাজের বাধাপ্রাপ্তিতে বিরাট ক্ষতি হয়েছে। তারমধ্যে সাধনপুর ইউনিয়নের ২১৭৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, পুকুরিয়ার তীর সংরক্ষণ ১২৬৯ মিটার বাঁধের কাজ ৮০০ মিটার ও ৪৬৯ মিটার। অপরদিকে খানখানাবাদ এলাকায় ৪০০ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ ৪ হাজার ৫শ মিটার, ঢাল সংরক্ষণ বাহারছড়ায় ৫শ মিটার, গন্ডামারায় ১৪শ মিটার, ছনুয়ায় ৩২ মিটার। তবে স্থানীয় জনগণের আশঙ্কা করছে দক্ষিণ প্রেমাশিয়ায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ এলাকাটি পুরো বাঁশখালী উপক‚লীয় এলাকার জন্য ভয়াবহ এলাকা। এই বেড়িবাঁধ টেকসই না হলে আগামীতে ব্যাপকহারে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
দীর্ঘ ২৬ বছর আগের সেই দিনটি ছিল সোমবার। সকাল থেকে আকাশে মেঘের আনাগোনার পাশাপাশি ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাস প্রবহমান ছিল হালকাভাবে। দুপুর গড়াতেই বেড়ে ক্রমশঃ বাড়ছিল বাতাসের গতিবেগ। বিকেলে ৪টার পর থেকে বাতাসের গতি বৃদ্ধি পায় একই সাথে বৃষ্টিও। চলতে থাকে প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস হাওয়া। রাত ১২টার পর ২২৫ কিলোমিটার বেগে বঙ্গোপসাগর থেকে বেয়ে আসা জলোচ্ছ¡াসে আছড়ে পড়ে পুরো উপক‚লীয় এলাকায় ২৫ ফুট জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত এসব এলাকা। মহাপ্রলয়ের এই রাতের ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপক‚লীয় এলাকা। বঙ্গোপসাগর ও শংখনদীর বেড়িবাঁধে বিলীন হয়ে ¯্রােতের সঙ্গে ভেসে গিয়েছিল পুরো এলাকার সমস্ত বাড়িঘর, গাছপালা, গবাদিপশু। হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর সলিল সমাধি ঘটেছিল সে রাতের জলোচ্ছ¡াসে এমনকি বাঁশখালী সমগ্র উপক‚লীয় এলাকা মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছিল। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ বছর সরকারি হিসেব মতে সেই ঘূর্ণিঝড়ে মারা গিয়েছিল সরকারি মতে বাঁশখালী উপজেলায় ৪০ হাজার আমাদের হিসাবে ৭০ হাজারের মতো প্রায় আর ১ লাখ ২৭ হাজার বেসরকারি হিসেবে ২ লাখেরও বেশি। স্বজন হারানোর স্মৃতি নিয়ে প্রতি বছরই এই দিন ফিরে আসে উপক‚লবাসীর কাছে।
লেখক : আজীবন সদস্য, উপক‚লীয় উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
জাহিদ ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৪৪ পিএম says : 1
প্রতিবছর শুধু বরাদ্দ দিলেই হবে না, সেটা টাকা সঠিক ব্যবহার হয়েছে কিনা সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
Total Reply(0)
Md Shamim Omar ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৫০ পিএম says : 1
ভয়াল ২৯ শে এপ্রিলে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি....
Total Reply(0)
Saifur Rahman ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৫১ পিএম says : 2
May Allah give them peace.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন