বৃদ্ধ খুঁজছে তোমায়
তানজিনা সকাল
উত্তপ্ত কালো জলের কিনারায় কোঁচকানো বাতাসে বৃদ্ধ খুঁজছে তোমায়।
বোতলে ভরা আহ্লাদে মেঘে টানা পচা কটু বৃষ্টিগুলো ঠুকরে খাচ্ছে তোমায় কারুশিল্পের মূর্তিতে।
লজ্জা নিবারণের জন্য পাটের বস্ত্র পরিধান করে শিরোর্ধ্বে জয়ের নিশানা থেকে হেঁটে চলার শেষ মুহূর্তে বৃদ্ধ খুঁজছে তোমায়।
তোমার হাসিগুলো আজ আমার বাম নিঃশ্বাসে আটকে গেছে।
গুলতি মেরে পড়া আমের মতো জাল দিয়ে আটকে দিয়েছি আমার শ্রী তোমার ভেজা সাদা চুলেতে।
মুখ ভ্যাঙচানো চাঁদের হাসিতে ডুকরে কেঁদে ওঠার মতো যৌবনে এক পেয়ালা দুধে
শেষবারের মতো চুমুক দিয়ে আত্মসন্মানকে ফেলে দাও ডিমের খোসায়।
তুমি তো বৃদ্ধ হতে চেয়েছিলে!
সূর্য তোমার তারারন্ধ্রে জ্বলছে, দেরি করছো কেন যৌবনের মর্মরে অতীতের রাঙানো কোনো প্রেয়সীর কথা ভেবে?
চোখদুটো বন্ধ করে আলোটুকুকে গলাধঃকরণ করে নাও প্রিয়তম।
মসলিন শাড়ির পাতলা পাড়ে নিজের অঙ্গকে মুড়িয়ে পরাজয় মেনে নাও,
শুকনো কালির কলমে নিজের তৈজসপত্র গুছিয়ে নাও।
গৃহসজ্জা ত্যাগ করো শানকি ভরা নকশাতে।
মৃত্যুবরণ করে নাও প্রিয়তম;
তোমার নাকের বিন্দুঘামে জমা অসহায়ত্বকে ঠাঁই না দিয়ে,
বুকভরা শুকনো পকেটের রাইফেলকে সুখের বুলেট ভেবে ছেড়ে দাও তোমার গৃহের মণিপুরী তৈলচিত্রে।
আমিও আসছি।
তুমি তো বৃদ্ধ হতে চেয়েছিলে, বৃদ্ধ খুঁজছে তোমায়।
সময়ের ব্যবধান
বুলবুল হাসান
একটা সময় থাকে
যখন পৃথিবীর সব রঙ একেবারেই ভাললাগে
ভাললাগে ভ‚-মৃত্তিকার সব কিছুরই আপাদমস্তক
নক্ষত্র, আকাশ, বায়ু, মাটি, নদ, নারী ইত্যাদি।
জীবনে একটা বসন্ত আসে
সে সময় শক্তি, সাহস আর পৌরষে
বলীয়ান হয় মন,
হৃদয় আন্দোলিত হয় ফাগুনের মতো
পিচ্ছিল পথও সহজ হয় মনের জোয়ারে।
কখনো ভাল লাগে পৃথিবীর নিশ্চুপ নির্জনতা
আর নিঃসঙ্গ একাকী বসিবার হৃদয়ের আকুতি,
কখনো পথভোলা পথিকের মতো
বেসামাল হতে হয়
যা নিজের কাছেই অস্বস্তি লাগে।
পৌঢ়ত্বে এসে
সমস্ত হিসাব গুনতে হয় একে একে
সুদীর্ঘ এক বিশাল সময়ের,
স্মৃতিগুলো পিছন দিকে দৌড়ে ছুটে চলে
সামনে দাঁড়ায় অচেনা ভবিষ্যৎ
এবং দুরাশার এক স্বপ্নালোক
এই তো সময়ের ব্যবধান।
মৃত্যুর প্রহর গুনে গুনে
হাসান নাজমুল
কলাগাছের একটি ছোট্ট ভেলা ভাসিয়ে চলছি
ঝড়ো আবহাওয়ার উত্তাল সমুদ্র বুকে,
আমি সঙ্গীহীন, সভ্যতার মানুষেরা নেই পাশে,
উত্তাল ঢেউয়ে কখন যে ডুবে যায়-
দুর্বল ভেলাটি,
এই শঙ্কায় আমিও দুর্বল ভেলার মতো
নুয়ে পড়ে বসে আছি একা।
সমুদ্রের বুকে বিশ্বের সভ্যতা নেই,
নেই সভ্যতার মিটিমিটি আলো,
এখানে একাকী বসে-
বিশ্বের সভ্যতা বড় মেকী মনে হয়।
যারা সুবিশাল কেদারায় বসে আছে
তারা দেখছে না আমার বেহাল দশা,
তাদের খেয়াল সুবৃহৎ কোন-
অট্টালিকার ভেতর বন্দি হয়ে আছে
তাদের খেয়াল ব্যাংকের ব্যালেন্সে আটকে আছে,
ঢেউয়ের তালে তালে দিন-রাত
দুলছে ভেলাটি,
আমিও দুলছি মৃত্যুর প্রহর গুনে গুনে।
তোমার ঠোঁটে কলঙ্ক নাই
দালান জাহান
হেমলক পেয়ালায় ভেসে ওঠে-
চুম্বনরত পৃথিবীর মুখ,
আকাশের বুকে বাজে রোদনভরা ঢেউ,
অশ্রæ-ফোয়ারা ধুলোর পাহাড়,
অপেক্ষার দীর্ঘ আঘাতে,
ফ্লার্টবাজ যুবক-পিষে পিষে লুল!
পালিশ করা সেই নকশি ললা ঠোঁট।
এই প্রথম মৃত্যু আমাকে ফিরিয়ে দিলো!
আমি মেঘ হয়ে উড়ে গেলাম-
অভিমানী সমুদ্রের কাছে,
সমুদ্র আমাকে বিরহীর দুয়ারে পাঠালো,
যেথায় পাহাড়ের কান্না-জলে-
নৃত্যরত নগ্ন নদী,
খই খই করে হেসে ছুটছে বহুকাল।
নিয়তি এখন কান্না আঁকে,
হামাগুড়ি দিয়ে ধরে রৌদ্র ছাই,
নিয়তি এখন আমারি কঙ্কাল,
ভ‚মি তোমার ঠোঁটে কলঙ্ক নাই।
ভাঙনের ঝড়
আকিব শিকদার
আসমানের নীলে কিছু মেঘ ঘোরে একা
কিছু বৃষ্টি ঝরে অশ্রæ হয়ে অঙ্গনে
জানালা খুলে দেখি আলোটা বিবর্ণ
বাতাস খেলা করে কাননের ফুলে নিজমনে।
সবুজ পাতারা গুচ্ছবদ্ধ তবু নীরব অসহায়
আঁধারটা মনে হয় অনন্ত অসীমের সীমানায়।
স্মৃতির রোমন্থনে রাত ফুরায় বিছানায় নির্ঘুম
কষ্টগুলো ফেরারি বাদুড়ের মতো নিশাচর
কিছু বাসনা রয়ে যায় অপূর্ণ আজীবন
নিঃস্বহায় দিনগুলো অসহ্য অবিনশ্বর।
তবে কি ভাঙনের ঝড় এ জীবনে দিয়েছিল হানা
তা না হলে এত কিছু কেমনে হলো জানা!!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন