মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২৫ অ্যাকাউন্টে ৯৩০ কোটি টাকা লেনদেন গোল্ডেন মনিরের

চলছে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথেই প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে পটু ছিলেন নব্বই দশকে গাউছিয়ার একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির। প্রভাবশালী ৫ ব্যক্তির সেল্টারে থেকে লাগেজ ব্যবসা, হুন্ডি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাকারবারি ও ভূমি দখলের মাধ্যমে এক হাজার ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ২৫ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৯৩০ কোটি ২২ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন গোল্ডেন মনির। এর মধ্যে ৪১২ কোটি ২ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং ৫১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময় উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে গোল্ডেন মনির। রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তের এসব তথ্যের সত্যতা পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তাছাড়া রিমান্ডে তাকে স্বর্ণ চোরাচালান, প্লট জালিয়াতি, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা করছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

গোল্ডেন মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত করছেন একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মনিরের এই উত্থানের পেছনে যারা জড়িত ও সহায়তা করেছেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক অবস্থায় একজন প্রতিমন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের সাথে মনিরের সখ্যতার তথ্য পাওয়া গেছে। এ সব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

র‌্যারের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, মনির হোসেন একদিনে ‘গোল্ডেন মনির’ হয়ে ওঠেননি। সে মূলত একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন। শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মনিরের এই উত্থানের পেছনে যারা জড়িত ও সহায়তা করেছেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, র‌্যাব শুধুমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে কাজ করে। গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো র‌্যাবের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয় বিধায় আমরা সরকারের চার সংস্থাকে তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, গোল্ডেন মনির দেশের বাইরে কি পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বা কি পরিমাণ সম্পদ তার রয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করবো। তিনি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে কসমেটিকস পণ্য ও চোরাচালানির মাধ্যমে কি পরিমাণ স্বর্ণ দেশে এনেছিলেন, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুসন্ধান করতে অনুরোধ করবো। এদিকে অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি (প্রত্যেকটি তিন কোটি টাকা মূল্যের) আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) অনুসন্ধানের জন্য আমরা বলবো। এছাড়া গোল্ডেন মনির জাল-জালিয়াতি করে ভূমি দখল করেছে সেসব বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) অনুসন্ধানের জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।

একটি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা সোনারগাঁও জনপথ সড়কের ১৩ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের অংশীদারী চার মালিকের মধ্যে একজন গোল্ডেন মনির। গত এক মাস আগে এই জমজম টাওয়ারের মালিকানা বাকি অংশীদারদের কাছে ৬০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন তিনি। এছাড়াও উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে সাফা টাওয়ারের মালিক গোল্ডেন মনির। তবে ওই টাওয়ারটি এখনও নির্মাণাধীন। বারিধারায় রয়েছে তার আলিশান অফিস কার‌্যালয়। অটোকার সিলেকশন নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে তার। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে উমা জুয়েলার্স নামে একটি জুয়েলারি দোকান রয়েছে তার। রাজউক’র পূর্বাচলে, বাড্ডা, মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে, নিকুঞ্জে, উত্তরায় এবং কেরানীগঞ্জে রয়েছে ২০২টি প্লট ও জমি। এর মধ্যে শুধুমাত্র মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে রয়েছে ৩৯টি প্লট ও বাড়ি।

উল্লেখ্য গত ২১ নভেম্বর শনিবার রাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্টে তার নিজ বাসা থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণ, অস্ত্র, মাদকসহ বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ ও ১০টি দেশের বিদেশী মূদ্রাসহ গ্রেফতারের পর বাড্ডা থানায় গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে র‌্যাব বাদি হয়ে অন্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছে। মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোঃ দুলাল মিয়া ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫১ এএম says : 0
সত্যিই যদি তাহার বহিত টাকা হইলে লোন দেন কি অসুবিধা।
Total Reply(0)
Protap Kumar ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 0
অসৎ কাজ, অসৎ টাকায় গড়া বাড়ী বেশী দিন টিকে না
Total Reply(0)
Nizam ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 0
যারা মানুষের সম্পদ দখল করে আছে,তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?
Total Reply(0)
Md Rofiqul Islam Panjeree ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 0
এর কিছুই হবে না,শুধু এর সামাজিক পরিচিতির জন্য একে ধরা হয়েছে। সবই নাটক।
Total Reply(0)
Md Omar Faruk ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১২ এএম says : 0
বাহ! সাধারণ এই ব্যক্তির যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অসাধারণ ব্যক্তিদের যে কি অবস্থা?
Total Reply(0)
Wahid Hasan ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৩ এএম says : 0
সকল অপরাধদের পাকড়াও অভিযান শেখ হাসিনা সরকার নিজ উদ্যোগেই নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাত এবং অন্যান্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মকারীদের সাবধান করে দিয়ে বলছি, কেউ ছাড় পাবেন না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন