অপার সম্ভবনাময় নোয়াখালীর উপক‚লবর্তী অঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটছে। ধান, শাক সবজি, রবিশস্য ও ফলমূল আবাদে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি করছে। উপক‚লীয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘিরে আরো নিত্য নতুন চমক অপেক্ষা করছে। আর এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিনির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এক সময় নোয়াখালী অঞ্চলের অধিবাসীরা তরিতরকারি ও শাক সবজির জন্য কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন পাশর্^বর্তী জেলাগুলোতেও সরবরাহ হচ্ছে এখানকার উৎপাদিত ফসল। জানা যায়, চলতি বছর নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী, ৩ হাজার হেক্টর চিনাবাদাম, ৫ হাজার হেক্টর তরমুজ, ৫ হাজার হেক্টর মিষ্টি আলু, ২৫শ’ হেক্টর ফেলন ডাল, ৫ হাজার হেক্টর শাক-সবজি, ৩৫০০ হেক্টর খেসারি, ৫০০ হেক্টর মশুর, ২৫ হেক্টর হেলন, ৫০ হেক্টর মরিচ, ৫ হেক্টর পেঁয়াজ, ৫ হেক্টর রসুন চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সূর্যমুখী চাষ লাভজনক বিধায় কৃষকরা আরো অধিক পরিমাণ ভ‚মিতে সয়াবিন চাষ করেছে। অপরদিকে, গত কয়েক বছর নতুন ফসল হিসেবে সূর্যমুখী, বিটবেগুন, তরমুজ, আখ, সরিষা চাষ হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তত্ত¡াবধানে।
এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রযুক্তিগত এবং কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে আসছে। তাছাড়া কৃষি কাজ জোরদারের লক্ষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী কার্যক্রম, কৃষকদের উদ্ভুদ্ধকরণ, ভ্রমণের লক্ষে বিভিন্ন ঠিকানা, কৃষকের জানালা, অ্যাপসের মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে। এতে কৃষক কিষাণীরা দলীয় ও সমষ্টিগত সেবার পাশাপাশি ঘরে বসে কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ করে ফসলের বাড়তি উৎপাদনের প্রতি মনযোগি ও উপকৃত হচ্ছে। নোয়াখালীর উপক‚লীয় অঞ্চলে লবনাক্ত এলাকায় লবনসহিষ্ণু ধান, সূর্যমুখী, মুগডাল আবাদের ফলে পতিত জমিগুলো ক্রমান্বয়ে আবাদের আওতায় চলে আসছে। ফলে প্রতি বছর এ জেলায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও নোয়াখালীতে প্রতি বছর কৃষি জমির পরিমাণ দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভ‚মি পুন:রুদ্ধার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি বছর যে পরিমাণ ভ‚মি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে তার অন্তত দশগুণ ভ‚মি নদীগর্ভে জেগে উঠছে।
লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা এস এম বাবুল (বাবর) জানান, লক্ষ্মীপুরে ব্যাপক হারে শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার ৫ উপজেলার কৃষকরা বাজারে লাল শাক, মুলা শাক, সীম, লাউ শাক ও ধনিয়া পাতা সরবরাহ শুরু করেছেন। জমিতে বর্ষার পানি জমে থাকায় কোনো কোনো চাষি এখনও সবজির জন্য জমি তৈরি করছেন। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও শীতকালীন সবজি রফতানি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ৫ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ সম্পন্ন হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার চররমনি মহন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। আবার অনেকের সবজি বড় হয়ে গেছে এবং বিক্রিও শুরু করেছেন। অধিকাংশ জমিতে লাল শাক, মুলা শাক, ধনিয়া পাতা, খিরাই, কুমড়া, লাউ, পুঁই শাক, টমেটোর আবাদ হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি স¤প্রসার অধিদফতরের উপ-সহকারী আবুল হোসেন বলেন, জেলায় শীতকালীন সবজির যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে আবাদ শেষ হয়েছে, চলিত মাসের মধ্যে বাকী জমিতে আবাদ সম্পন্ন হবে। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাজারে স্থানীয় সবজি পুরোপুরি আমদানি শুরু হবে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন।
কাল পড়–ন পাহাড়ে বারি মাল্টা চাষে সাফল্য
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন