শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরে প্রাণ গেল ছাত্রের

রাজধানীতে হঠাৎ বেড়েছে ছিনতাই

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্নস্থান হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য। প্রায় নির্জন সড়কে নানা কৌশলে ছিনতাই করে তারা। সর্বস্ব লুটে নেয়। এমনকি কখনো কখনো ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ দিতে হচ্ছে অনেককে। স¤প্রতি হঠাৎ করেই বেড়েছে ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির উৎপাত। গত বুধবার দিবাগত রাতে উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে জিসান হাবিব (১৮) নামে সদ্য এসএসসি পাস করা এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার সঙ্গে থাকা রুহুল আমিন (১৭) নামে আরেক শিক্ষার্থী। হতাহতরা পরস্পর আত্মীয় ছিলেন। এ ঘটনায় জিসানের মামাতো ভাই উত্তরা-পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই শামসুল হক জানান, আশুলিয়া ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসের যাত্রী ছিলেন জিসান ও রুহুল আমিন। রুহুল আমিন বাসের জানালার পাশে বসেছিলেন। আব্দুল্লাহপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছলে জানালা দিয়ে এক ছিনতাইকারী তার মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। মোবাইল উদ্ধারের জন্য তারা বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারীর পিছু নিলে ওই দুর্বৃত্ত তাদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হলে তাদের শহিদ মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক জিসান হাবিবকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে রুহুল আমিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

নিহতের মামাতো ভাই ইকবাল বলেন, জিসান ও রুহুল সম্পর্কে আত্মীয়। গত ২৭ নভেম্বর জিসান সাভারের নবীনগরে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসে। বুধবার দিবাগত রাত ২টায় আমাদের এক আত্মীয়ের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে বাসে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও জানান, নিহত জিসানের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বিহেরগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল বাশার। সে নোয়াখালী খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে জিসান ছিল তৃতীয়। আহত রুহুল আমিন ঢাকার ধামরাইয়ের একটি স্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি। যেসব জায়গায় রাস্তার আলো নেই সেখানে তারা আক্রমণ করে। মাদকাসক্ত ও কিশোর গ্যাং এসব অপকর্ম করছে। পুলিশ এদের বলছে ‘টানা পার্টি’। বাস, ট্রেন ও নৌ টার্মিনালের কাছে সড়কে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে ওত পেতে থাকে এরা। রাতের শেষ ভাগ থেকে দিনের আলো ফোটার আগের সময়টায় রাজধানীতে পুলিশের টহলসহ নিরাপত্তা অনেকটা ঢিলেঢালা থাকছে। এই সুযোগ কাজে লাগায় টানা পার্টি। শহরের অর্ধশতাধিক রাস্তায় তাদের অপকর্ম বেশি। এদিকে ব্যস্ত সড়কেও এখন পথচারী ও যাত্রীদের সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তির অভিনয় করে ছিনতাই করছে সংঘবদ্ধ চক্র।

স¤প্রতি ছিনতাইয়ের শিকার কাওসার নামের তরুন বলেন, ঢাকায় এসেছি ব্যবসার কাজে। ঢাকার পথ ঘাট তেমন জানা শোনা নেই। স¤প্রতি বন্ধুর সঙ্গে হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে গিয়ে ফেরার পথে ছিনতাইয়ে শিকার হই। এসময় হাতে থাকা হ্যান্ডপার্স আর মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি রাজধানীতে ছিনতাই কিছুটা বেড়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাজধানীর কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে জয়ই মামুন (৪০) নামে এক ব্যক্তির অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধারের পর তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি অচেতন অবস্থায় কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ দ্রæত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ওই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এছাড়াও গত সোমবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মগবাজার রেললাইন ধরে বাসায় ফেরার পথে মিথুন চৌধুরী নামের এক সংবাদকর্মীর চোখে মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে পকেটের টাকা নিয়ে গেছে ছিনতাইকারী। ছিনতাইয়ের শিকার মিথুন আরটিভিতে কর্মরত আছেন। তিনি মগবাজার এলাকাতে থাকেন। মিথুন বলেন, গত সোমবার রাতে রেললাইন ধরে রাতে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ পেছন থেকে এসে কেউ আমার চোখে শুকনো মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে আমার পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। প্যান্টের অন্য পকেটে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও আমার বাধার মুখে ব্যর্থ হয়। তিনি আরো জানান, এ ঘটনার পর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন। সুস্থ হয়ে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন