বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ময়মনসিংহে শ্রমিকদের প্রাণচাঞ্চল্য

মো. শামসুল আলম খান | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সারাদেশের ন্যায় য়মনসিংহের ৬ জেলায় শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রা। শ্রমিকের মুজুরি বৃদ্ধিতে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আধুনিক জীবনযাত্রায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন এসব শ্রমজীবী মানুষ।
বর্তমান সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেবার উদ্যোগে ডিজিটাল সুযোগ সুবিধায় অভ্যস্থ হচ্ছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী এসব মানুষ। বিনোদনসহ যোগাযোগ রক্ষায় আধুনিক সব ডিজিটাল সরঞ্জামাদির ব্যবহার অনেকটাই সহজ করেছে তাদের জীবনযাত্রা। কর্মমুখর জীবনে স্ত্রী সন্তান আত্মীয় পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতেই কাটছে তাদের দিন। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ,জামালপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের শ্রমজীবীদের একটি অংশ এখন প্রান্তিক চাষিতে পরিণত হয়েছে।

নিজের জমি বা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তারা চাষাবাদ করছেন। যা থেকে আসছে অতিরিক্ত অর্থ। জীবন যাত্রার মানকে সহজতর করতে এই অর্থ রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এসব শ্রমজীবী মানুষের ছেলে মেয়েদের অনেকেই এখন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বর্তমান সরকারের বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষায় বর্তমান সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছে এসব অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ। বছরের শুরুতে নতুন বই, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি প্রদান শিক্ষায় অনগ্রসর এই জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার যে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তাতেও আর্থসামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে এসব মানুষের জীবন।

কৃষি শ্রমিক, রিকশাচালক, ড্রাইভার, নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রতিদিনের চুক্তিতে কাজের সুবাদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় হয় তাদের। কখনও তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারেন, যদি কাজটি চুক্তিতে করতে পারেন। তখন স্বল্প সময়ে অধিক শ্রমিক এবং মুজুরি খাটিয়ে অধিক টাকা পান। বেঁচে যাওয়া সময়টুকুতে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন উৎপাদনশীল নানা কাজে। ফলে অনেকটাই নির্ভার ও অভাবমুক্ত হয়েছে তাদের জীবন।

কয়েকদিন হলো আমন ধান ঘরে তুলেছে কৃষক। বাম্পার ফলনের পর নতুন করে ইরি মৌসুমের বীজতলা তৈরি, কোথাও কোথাও চারা রোপনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই সুযোগে কৃষিতে চাহিদা বেড়েছে শ্রমিকের দ্বিগুণ দামে কাজের সুযোগ পেয়ে অধিক টাকা আয় করছেন তারা। দাবিও করছেন বেশি মুজুরি।
নতুন নতুন অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে ময়মনসিংহের জেলাগুলোতে বেড়েছে নির্মাণ শ্রমিকের কদর। সরকারি, বেসরকারি এসব নির্মাণ কাজে দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে তাদের আয় বেড়েছে। আগের চাইতে বেশি আয়ের জন্য তাদের জীবন যাত্রার মানও বেড়েছে।

মৎস্য খাতে বাংলাদেশের যে সাফল্য তাতেও অবদান রেখে চলেছে এই এলাকার শ্রমজীবীদের একাংশ। পুকুরে মাছ চাষ করে লাভবান অনেক শ্রমজীবী। ময়মনসিংহের আশপাশের এসব জেলায় উৎপাদিত মাছ রফতানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। সৃষ্টি হয়েছে মৎস্যখাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের। মাছ আহরণ, পরিবহন, বিপননের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে লাভের মুখ দেখেছেন এসব শ্রমজীবীদের অনেকেই। শ্রমজীবীদের একটি বড় অংশ এখন ধীরে ধীরে মুরগির খামার, গবাদিপশুর খামারভিত্তিক কৃষিতেও আগ্রহী হচ্ছে। শিল্পেও শ্রম বিনিয়োগ করছে এসব শ্রমজীবীদের অনেকে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মাঝারি এবং ভারী কলকারখানায় কাজ করছে তারা। অনেকে আবার চাকরি করছে তৈরি পোশাক শিল্পে।

ময়মনসিংহের এসব জেলার ছোট ছোট গ্রামীণ হাট বাজারে চায়ের দোকানে সন্ধ্যার পর অড্ডাবাজি এখন শ্রমজীবীদের মধ্যে অগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দিনমজুর এবং শ্রমজীবীদের একটি বড় অংশই এসব চায়ের দোকানে আনন্দ বিনোদনের পাশাপাশি নতুন দিনের কাজের জন্য এখানেই চুক্তিবদ্ধ হন। এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত পরাণগঞ্জ বাজারে মতিনের চায়ের দোকানে অড্ডারত দিনমজুর তাইজদ্দিন বলেন, সন্ধ্যায় এই দোকানেই আমরা জড়ো হই। মজুরীর (মায়নার) হিসেব নিকেশ করি। যাদের শ্রমিক দরকার তারা এখানেই আসেন। আমাদের লেনদেনের জায়গাও এই দোকান। চা খেতে খেতে টিভিতে ছবি দেখতে ভালই লাগে। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি।তাদের আর এ পেশায় আনতে চাইনা। অন্যের জমিতে আর কত? যদি তারা কখনও জমির মালিক হতে পারে সেই পথেই এগুচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন