শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উজ্জীবিত পূর্বাঞ্চলের শ্রমিকরা

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশের পূর্বাঞ্চলে শ্রমজীবীরা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমজীবীরা এখন আর আগের মতো কাজের জন্য ছুটোছুটি করতে হচ্ছে না। বিগত কয়েক মাস করোনার জন্য ঘরে বন্দি থাকলেও এখন চারদিকে বিরাজ করছে একটা কর্মমুখর পরিবেশ। মাঠে-ঘাটে সর্বত্র কর্মব্যস্ততা। বেড়ে গেছে পারিশ্রমিকও। যার ফলে দেশের পূর্বাঞ্চলের প্রায় দশ সহস্রাধিক নির্মাণ ও কৃষি শ্রমিকের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি শ্রমিক, বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ভবনে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। দেশে করোনা বিস্তারের পূর্বের মতো না হলেও ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করেছে তাদের উপার্জন।
গত কয়েকদিনে সরেজমিনে দেশের পূর্বাঞ্চলের ফেনী, ব্রাক্ষবাড়িয়া ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন কনস্ট্রাকশান ভবনের কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। কেউবা রড কাটছেন, কেউবা বালি ও পাথর গাড়িতে ভরছেন, আবার কেউ কেউ ঢালাই কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এরআগে দেশে করোনার বিস্তার শুরু হলে ২৫ মার্চ থেকে দেশের সব দোকান এমনকি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বন্ধ হয়ে যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ে কাজ। এতে বিপদে পড়ে যান এসব নির্মাণ শ্রমিকরা। প্রায় তিন মাসেরও বেশি বন্ধ থাকার পর পুনরায় সেইসব বিল্ডিংগুলোতে পুরোপুরিভাবেই কাজ শুরু হওয়ায় আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে শ্রমিকের চাহিদা তাদের মাঝে ফিরে এসেছে স্বস্তি।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবায় দুই বছর ধরে পূবালী কনস্ট্রাকশান ভবনে শ্রমিকের কাজ করছেন রংপুরের আলমগীর হোসেন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনায় দেশের সব দোকানপাঠসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পূবালী কনস্ট্রাকশান ভবনের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমরা একেবারেই বেকার হয়ে পড়ি। গত দুইমাস পুনরায় কাজ শুরু হওয়ায় এতে আমাদের মত শ্রমিকের চাহিদা আগের মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইনকামও ভালো হচ্ছে।
অপর শ্রমিক জাবেদ মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনার আগে দিনপ্রতি আমরা কাজ করে ৭০০-৮০০ পেতাম। এখন আবার পুনরায় কাজ শুরু এখনও সেই পরিমানে টাকা ইনকাম করি। তিনি আরও বলেন, করোনায় অনেকদিন খারাপ গেছে, এখন আমাদের কোন অসুবিধা নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে দেশের পূর্বাঞ্চলের শ্রমিকদের একটি বড় অংশ দিনমজুর। তারা প্রতিদিনের মজুরিতে কাজ করেন। বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ শিল্প এবং উন্নয়নমূলক কাজের শ্রমিকরা দৈনিক মজুরিরভিত্তিতে কাজ করার ফলে এখানকার কৃষি জমির মালিকের চেয়ে এখন কৃষি শ্রমিকরা স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছেন। তোফায়েল আহমেদ সকালে ঘুম থেকে ওঠে বাড়িতে টুকিটাকি কাজ সেরেই রওনা হন মাঠের দিকে। উদ্দেশ্য কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করা। এই কাজে যে অর্থ তিনি আয় করেন তা ব্যয় করেন সংসারে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে হাতে যা থাকে তা দিয়ে ঘরবাড়ির উন্নয়নে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যয় করছেন তিনি। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়কে উপেক্ষা করে তাদের সংগ্রামী পথ চলা। বদলে ফেলছেন নিজের ভাগ্য। তাদের কর্মচেষ্টায় বলতে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও।
পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনী মহিপাল এলাকার এক স্কুলশিক্ষক আল-আমিন জানান, এ অঞ্চলের একসময় অভাবের তাড়নায় অনেক খেটে খাওয়া মানুষ কাঁচি, নিড়ানি, দা ও কোদাল নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাট-বাজারে শ্রম বিক্রি করার জন্য বসে থাকতে হতো। এখন দিন বদলেছে, কাজ ও পারিশ্রমিকও বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। যার ফলে এখানকার কৃষি, নির্মাণ এবং উন্নয়ন কাজের শ্রমিকরা ভালোই আছেন। কৃষি শ্রমিকরা বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। রোপা আমন ধান কাটার পর বোরো ধানের বীজতলা তৈরি, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ ও উৎপাদন কাজ করছেন কৃষি শ্রমিকরা।
কুমিল্লার বৃহৎ সবজির আড়ত কুমিল্লার নিমসার। আড়তকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন সবজি আর কাঁচা তরিতরকারি বোঝাই ট্রাক কুমিল্লার নিমসার আসে মাঝরাতে। তাই প্রতিরাতেই ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকিতে সরগরম হয়ে উঠে নিমসার বাজার। এই মালামাল খালাস করা থেকে শুরু করে বৃহত্তর কুমিল্লার প্রতিটি ঘরে ঘরে সবজি পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করে এখানকার শ্রমিকরা। এদের কল্যাণেই পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় প্রতিদিন সকালে ঘর ভরে যায় টাটকা সবজিতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন