শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ১৯ কোটি টাকার আখ

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার আওতায় পরিচালিত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে চলতি আখ মাড়াই মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে ৬টি চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আধুনিকায়নের কার্যক্রম শুরুর কথা বলে হঠাৎ করেই ৬টি চিনিকলে মাড়াই বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। এমন সিন্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে চিনিকল এলাকায়। মাড়াই বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা জেলার কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারীশিল্প কারখানা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষীরা কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু করেছে। এতে রংপুর চিনিকল এলাকায় উৎপাদিত প্রায় ১৯ কোটি টাকার আখ জমিতে পড়ে আছে। তাদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে এই আখ সংগ্রহ করে পার্শ্ববতী চিনিকলে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার (বিএসএফআইসি) আওতায় পরিচালিত ১৫টি চিনিকল পরিচালিত হয়। এই সংস্থার পরিচালিত চিনিকলগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি লোকসানের অজুহাতে চলতি আখ মাড়াই শুরুর পূর্ব মূহুর্তে ৬টি চিনিকলে মাড়াই বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। মাড়াই বন্ধ ঘোষিত চিনিকলগুলো হলো পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় চিনিকল, দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ চিনিকল, রংপুর জেলার শ্যামপুর চিনিকল, গাইবান্ধা জেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল, পাবনা জেলার পাবনা চিনিকল ও কুষ্টিয়া জেলার কুষ্টিয়া চিনিকল। বাঁকি ৯টি চিনিকলের কয়েকটিতে পর্যায়ক্রমে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করা হয়। বন্ধ ঘোষণা করা মিলের আওতাধীন আখ পাশর্^বর্তী চিনিকলে নিয়ে মাড়াইয়ের ঘোষণা দেয়া হয়। এই দাবি বাস্তবসম্মত নয় বলে আখচাষী ও শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন।

রংপুর চিনিকল আখচাষী কল্যাণ গ্রুপের সভাপতি জিন্নাত আলী প্রধান বলেন, রংপুর চিনিকলের চেয়ে অনেক কম ক্ষমতাসম্পন্ন জয়পুরহাট চিনিকল। তারা তাদের নিজেদের উৎপাদিত ৩২ হাজার মেট্রিক টন আখই সময়মত মাড়াই করার সক্ষমতা রাখে না। সেখানে রংপুর চিনিকলের উৎপাদিত ৫২ হাজার মেট্রিক টন আখ কিভাবে মাড়াই হবে? অবাস্তব এ সিদ্ধান্ত থেকে সংস্থা সরে না এলে রংপুর চিনিকলের সকল আখ জমিতেই শুকিয়ে যাবে। আখচাষীরা এক বছর থেকে ১৪ মাস সময়ে জমিতে আখ ফলানোর পরও তা সময়মত চিনিকলে দিতে না পারলে আরও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

অন্যদিকে, রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল বলেন, চিনিকলের চিরাচরিত নিয়মের কারণে আখ সংগ্রহ ও পরিবহণজনিত সকল ক্ষয়ক্ষতি কর্মচারীকেই কাঁধে নিতে হয়। ১০ কিলোমিটার দূরের ক্রয় কেন্দ্র থেকে চিনিকলে আখ পৌঁছাতেই অনেক আখের ঘাটতি হয়ে যায়। সেখানে ১০০ থেকে দেড়শ’ কিলোমিটার দূরত্বের রাস্তার কিভাবে এই আখ সরবরাহ করা হবে। এতো দুরত্বের দায়িত্ব নিতে শ্রমিক কর্মচারীরা আগ্রহী নয়। এই দায়িত্ব নিলে তাদের বাপ-দাদার বা নিজের জমি-জমা বিক্রি করেও ক্ষতিপূরণ দিয়ে বাঁচা সম্ভব হবে না। আখ পরিবহণজনিত সমস্যার কারণেই এতো দূরের আখ ক্রয় ও সরবারহ কার্যক্রমে তারা সম্পৃক্ত হচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, বাস্তবতা বুঝে রংপুর চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু না করলে প্রায় ১৯ কোটি টাকার আখ মাঠেই পড়ে থাকবে।

রংপুর চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারীরা গত পাঁচ মাস বেতন পায় না। এমন অবস্থায় অন্য মিলে তাদের আখ সংগ্রহ করে প্রেরণ মরার উপর খাঁড়ার ঘ্যাঁ এর মতো। সংস্থার এই সিন্ধান্ত বাস্তব সম্মত হয়নি বলে তিনি মনে করেন। সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার চেয়ারম্যানসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বিলাসবহুল গাড়িসহ সকল ধরণের কেনাকাটায় ব্যাপক লুটপাটের জন্য পুরো চিনিশিল্প সংস্থাকে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার দায়িত্ব শ্রমিক-কর্মচারীরা নেবেনা। সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যানসহ বেসরকারি চিনিকলের দালাল এই আমলাদের কথা শুনে সরকার চিনিকল বন্ধ করার অপচেষ্টা থেকে সরে না আসলে রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ আরও কঠোর আন্দলোনের কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন।

অন্যদিকে এ বছর রংপুর চিনিকলে আখ মাড়াই না হলে কোটি কোটি টাকায় কেনা আখ ছোট একটি কারখানায় মাড়াই বিড়ম্বনায় অথবা পরিবহনের সময় আখ রাস্তায় পড়ে নষ্ট অথবা না কিনতে পারলে জমিতেই শুকিয়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবু সুফিয়ান সুজা।

রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূরুল কবির শ্রমিক আন্দোলনের কারণে আখ সংগ্রহ করে জয়পুরহাট চিনিকলে পাঠানোর জন্য কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন।

এদিকে গত শনিবার মহিমাগঞ্জে অনুষ্ঠিত রংপুর চিনিকল আখচাষী সমিতি ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী শুক্রবারের মধ্যে চিনিকল চালুর ব্যবস্থা না নেয়া হলে হরতাল, রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ আরও বড় আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন