শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বর্জ্যে হার মেনেছে সৌন্দর্য

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করলেও নতুন করে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে মহাসড়কের পাশে বর্জ্যেের ভাগাড় নিয়ে। আগেও ভাগাড় থাকলেও গত কয়েকমাসে নতুন করে বেশ কয়েকটি ভাগাড় তৈরি হয়েছে। আর এতে বর্জ্যরে উৎকট দুর্গন্ধে যেমন চলাচলকারী লোকজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় তেমনি চার লেনের সৌন্দর্যও বিনষ্ট হচ্ছে।

নাক চেপে ধরে এসব এলাকায় পথ চলতে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। নাক ছাড়লেই দুর্গন্ধে পেট ফেঁপে যায়। ওইটুকু সড়ক অতিক্রম করা মানেই জীবন হাতে নিয়ে যাওয়া। এমন মন্তব্য একজনের নয়, হাজার হাজার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ পথচারী মানুষের। বিশেষ করে যারা ঢাকা ময়মনসিংহ রুটে যাতায়াত করেন।

মহাসড়কের পাশে বর্জ্যরে ভাগাড়গুলো লেন দখল করে গড়ে উঠলেও কর্তৃপক্ষ শুধু ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায় সেরে ফেলছেন। অথচ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পথ চলাচলরত মানুষদের। স্থানীয় প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বয়হীনতার ফলে মিলছে না কোনো প্রতিকার। যার ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোর লেনের ময়মনসিংহ অংশের ৫৬ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে অসংখ্য ময়লার ভাগাড়ে ঘটছে। দূষণ হচ্ছে মারাত্মক পরিবেশ ।

গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভালুকা উপজেলার নাসির গ্লাস ফ্যাক্টরি থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ শহরের বাইপাস পর্যন্ত অন্তত ২০টি ভাগাড় গড়ে উঠেছে। প্রতিরাতে বিভিন্ন কল-কারখানা, বাসা-বাড়ি, হোটেল-রেষ্টুরেন্টের পাশাপাশি ভালুকা ও ত্রিশাল পৌরসভার আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এসব ভাগাড়ে। পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লা পুড়িয়ে ফেলায় ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ বিরুপ প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপর। পশুপাখি ও কীটপতঙ্গের মাধ্যমে নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। ভাগাড় অপসারণে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সওজ। সড়কের পাশে ময়লা ফেলা বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানায়, পরিবেশ অধিদফতরও। তবে, অব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন এই সড়কে যাতায়াত কারীরা।

পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সড়কের হবিরবাড়ী, মাস্টারবাড়ী, আমতলী, সিডস্টোর বাজার, মেহেরাবাড়ি উপজেলা সীমান্ত থেকে ভালুকা ব্রিজ পর্যন্ত ফাঁকা জায়গালোতে মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য ফেলা হয়। অনেক বছর ধরে ওই এলাকাগুলোতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা আর বর্জ্যেের উৎকৃষ্ট দুর্গন্ধ আর বিপন্ন পরিবেশের কারণে ওই সড়কটি দিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরছে। প্রতিদিন রিকশা, ভ্যানগাড়ি ও ট্রাকে করে বিভিন্ন বাজারের অলিগলি ও বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্যগুলো সেখানে ফেলা হচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর ও রাতের আঁধারে এসব বর্জ্য ফেলার সময় দুর্গন্ধে বাতাস দূষিত হয়ে পড়ে। কাকপাখিরা সেখান থেকে উচ্ছিষ্ট নিয়ে যাওয়ার সময় সড়কে চলাচলকারী ছাত্র-ছাত্রী, জনসাধারণ ও যানবাহনের ওপর পড়ে। এতে সড়কে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি পথচারীর শরীরে পড়ায় জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। আশপাশের শতাধিক পরিবার একই অবস্থার মুখোমুখি বছরের পর বছর ধরে। সারা দিনই পশুপাখির উৎপাতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
একাধিক অভিভাবক দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, পাশেই স্কুল ও মাদরাসার কয়েকশ’ ছাত্র-ছাত্রী দুর্গন্ধের মধ্যেই লেখাপড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাছাকাছি স্কুল বা মাদরাসা থাকায় এবং দুর্গন্ধের কারণে শিশু-সন্তানদের স্কুলে লেখাপড়া করানো সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের দাবি। ভালুকা এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে কমপক্ষে ৫০টি ট্রাক বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে এসে মহাসড়কের ওপর ফেলে চলে যায়। ফলে হাজার কোটি টাকা খরচ করে মহাসড়ককে চার লেনে গড়ে তোলা হলেও নানাধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় এর সুফল পাচ্ছে না সাধারন মানুষ। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী একটি বাসের যাত্রী আমিরুল ইসলাম বলেন, গন্ধে বমি আসার উপক্রম। চরকালীবািড় এলাকার পথচারী আমির মিয়া বলেন, প্রতিদিন এই পথ দিয়ে ময়মনসিংহ শহরে যাই। দুর্গন্ধে দম আটকে আসতে চায়। হালুয়াঘাটের বাসিন্দা মমিনুর রহমান ব্যবসার কাজে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ময়মনসিংহ শহরে যান। বললেন, এখানে আসার আগে নাক চেপে ধরাটা এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সওজের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ দৈনিক ইনকিলাব বলেন, খুব শিগগিরই মহাসড়কের পাশ থেকে আবর্জনাগুেেলা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন