থার্টিফার্স্ট নাইট ও বর্ষবরণের নামে উন্মাদনার যে তুফান বইছে তা অপরিণামদর্শিতা ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রবণতা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জেনে-শুনে আমরা আজ ইহুদি-নাসারার
কৃষ্টি-কালচারে আবদ্ধ হচ্ছি অথচ একবারের জন্যও ভবছি না যে, আমাদের ধর্মে এ সবের কোনো বৈধতা আছে কি-না? আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত নসিব করুন। আমীন! আজ রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতীবরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নগরীর মসজিদগুলোতে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় মুসল্লিদের রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, নতুন বছরের সূচনালগ্নে আমাদের জীবনের হিসাব মিলিয়ে নিতে হবে। বিগত দিনের কর্মকান্ডের হিসেবে কতটুকু আমল করতে পেরেছি এবং কী পরিমাণ ভুল-ত্রুটি হয়েছে। পেশ ইমাম বলেন, আল্লাহপাক সূরা আল ইমরানের ৩০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু সে ভালো কাজ করেছে চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যাকিছু মন্দ কাজ করেছে তাও। ওরা তখন কামনা করবে যদি তার এবং এসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান অনেক দূরের হতো।’
আল্লাহ তার নিজের সর্ম্পকে তোমাদেরকে সাবধান করেছেন। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) হাদীসে ইরশাদ করেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব নেয়ার আগেই নিজেরা নিজেদের হিসাব মিলিয়ে নাও। অতএব অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিনগুলোতে আল্লাহর মর্জি মাফিক সাজিয়ে নিতে হবে। প্রত্যেককে বেশি বেশি নেকীর কাজ, নিজের এবং দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। ঢাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান যুগকে সেরা যুগ বলা হলেও প্রকৃত অর্থে চারিত্রিক অবক্ষয়, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিদায় এবং বিজাতীয় কৃষ্টি-সভ্যতার অন্ধ অনুসরণের কারণে এই যুগ হলো সর্বনিকৃষ্ট যুগ। থার্টিফাস্ট নাইট ও বর্ষবরণের নামে উন্মাদনার যে তুফান বইছে তা অপরিণামদর্শিতা ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রবণতা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। খতীব বলেন, জেনে-শুনে আমরা আজ ইহুদী-নাসারার কৃষ্টি-কালচারে আবদ্ধ হচ্ছি অথচ একটি বারের জন্যও ভাবছি না যে, আমাদের ধর্মে এ সবের কোনো বৈধতা আছে কি-না? একবারের জন্যও আমাদের এই ভাবনা আসে না যে, আমি একজন মুসলিম হয়ে এসব অনাচারে লিপ্ত হতে পারি কি-না? মাওলানা আফেন্দী বলেন, উম্মুল মুমিনীন হযরত জয়নাব বিনতে জ্বাহশ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ আমাদের মাঝে জীবিত থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধংস হয়ে যাব? প্রতিত্তোরে হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ-যখন পাপাচার ও অনাচার বৃদ্ধি পাবে। (বুখারী-মুসলিম)। অন্য এক হাদীসে তিনি বলেছেন ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে’।
মানবসৃষ্ট ফেতনা আজ যত দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে পৃথিবীর চিত্রও তত দ্রুত বদলাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে এই ধারণা ক্রমশই বদ্ধমূল হচ্ছে যে, সম্ভবতঃ এই পৃথিবীর শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদীসে ইরশাদ করেন, ‘মানুষের সামনে এমন এক জমানা আসবে যখন ঈমানের ওপর টিকে থাকা প্রজ্জলিত অঙ্গার হাতে রাখার মতো কঠিন হয়ে পড়বে’।
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা মনিরুল ইসলাম জুমার বয়ানে বলেন, বিবাহ-শাদী আল্লাহ তায়ালার এর মহা নেয়ামত। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমতো দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিয়ে করো।(সূরা নেসা: ৩) । মহান আল্লাহ তা’য়ালা আরো ইরশাদ করেছেন, আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। (সূরা নূর: ৩২)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ রাখে সে যেন তা করে নেয়। কারণ বিয়ে চোখ অবনতকারী এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজতকারী। আর যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ রাখে না সে যেন সিয়াম রাখে। কেননা সিয়াম যৌন উত্তেজনাকে কমিয়ে দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, বিবাহশাদী আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করবে না, সে আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিবাহ হওয়া দরকার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত মোতাবেক। মহান আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেছেন, তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে উজ্জ্বল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিলসমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে। (সূরা ইউনুস ১০:৫)
ইংরেজি নতুন বছর প্রসঙ্গে পেশ ইমাম বলেন, একজন মুমিনের কাজ হলো আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করা। যে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে হায়াত দান করেছেন। আর গত বছরে তার আমলের যে ঘাটতি রয়েগেছে তা এবছরে সে পূরণ করে নেবে। নতুন বছরে পাপ না করে বেশি বেশি নেক আমলের চেষ্টা করতে হবে। এক কথায় আমি আমার জীবনকে এ নতুন বছরে উত্তম রূপে সাজাতে চাই। আল্লাহর মুমিন বান্দাদের এমনটিই প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে ছহী আমল করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।
মিরপুর বাউনিয়াবাদ ই ব্লক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদ-এর খতীব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে মুসল্লিদের উদ্দেশ্য বলেন, আজ ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন। বর্তমানে আমাদের দেশে এ দিনে বর্ষবরণ নামে বেহায়াপনা, হৈ-হুল্লোড়, অশ্লীলতা ও নগ্নতা প্রদর্শনের যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা একজন নিম্নমানের মুমিনের জন্যও শোভা পায় না। বছরের সূচনালগ্নে যখন একজন মুমিন উপস্থিত হয়, তখন তার অনুভূতি এ ধরনের হওয়া উচিত, যে দিনগুলো আমার শেষ হয়ে গেল, তা আমার জীবনের একটি মূল্যবান অংশ। অর্থ্যাৎ আমার জীবন সঙ্কীর্ণ হয়ে এলো। এ দিন আনন্দের নয় বরং চিন্তা, ফিকির ও হিসাব-নিকাশের সময়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, মানুষের হিসাব নিকাশের সময় সমাগত, অথচ তারা বে-খবর, গাফলতের কারণে মুখ ফিরিয়ে আছে। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ১)। হযরত ওমর (রা.) বলেন, ‘হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও। (জামে তিরমিযি, ৪/৬৩৮)। তাই দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তিতে জীবন যাপন করার লক্ষ্যে নিজে কতটুকু নেক আমল করতে পেরেছি তার হিসাব করি। দ্বিতীয়ত : ইতিহাসের তথ্যানুযায়ী খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে রোমের খ্রিষ্টান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ‘জানুয়াস’ প্রতিমার নিকট প্রার্থনার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন’। আর আমরা অজ্ঞতা বশতঃ এ দিনে মূলত তারই অনুসরন করছি। আর গুনাহের অংশীদার হচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সর্ব প্রকার গুনাহ থেকে হেফাজাত করুন। আমীন!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন