সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এপিএ চুক্তির বাস্তবায়ন আরো বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের পারফরমেন্স রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। রিপোর্ট অনুযায়ী, শীর্ষ অবস্থান অধিকার করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। দ্বিতীয় অবস্থানে কৃষি মন্ত্রণালয়। তৃতীয় অবস্থানে অর্থবিভাগ। আগের মতোই সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। আর গতবারের শীর্ষে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৬ নম্বরে । ১০০’র মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পেয়েছে ৯৮.৯৭ নম্বর। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৯৩.১৩। আর অর্থবিভাগ পেয়েছে ৯১.৯০ নম্বর। পক্ষান্তরে সর্বনিম্নে অবস্থানকারী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পেয়েছে ৬৫.৫৫ নম্বর। এক বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কী কাজ করবে, সে বিষয়ে প্রতি বছরের জুলাইয়ে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়, যা এপিএ বা কর্মসম্পাদন চুক্তি হিসাবে পরিচিত। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্ব গঠিত একটি জাতীয় কমিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর পারফরমেন্স বিবেচনা ও মূল্যায়ন করে নম্বর প্রদান করে এবং এই পারফরমেন্স রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়, পারফরমেন্সের তালিকায় শীর্ষে থাকা সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থাও আছে। এপিএ বা কর্মসম্পাদন চুক্তির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিশদ ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেনা। সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে একটা তাকিদ দৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, বার্ষিক মূল্যায়ন ও পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকায় কর্মসম্পাদনে একটা প্রতিযোগিতার ভাব বা পরিবেশও তৈরি হয়। নির্ধারিত ও গৃহীত কর্মসূচী যথাসময়ে ভালোভাবে সম্পাদিত হলে কর্মলক্ষ্য বা উন্নয়নলক্ষ্য অর্জিত হয়। কর্মপরিকল্পনা বা কর্মসূচী যা কিছুই নেয়া হয়, তার পেছনে থাকে জনকল্যাণ ও উন্নয়ন। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পারফরমেন্স যদি শতভাগ হয় তাহলে বলা যায়, শতভাগ কর্মলক্ষ্য বা উন্নয়নলক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগই শতভাগ কর্মলক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পারফরমেন্স হতাশাজনক। যেমন, বিগত দুই অর্থবছর যাবৎ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পেছনে পড়ে আছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে আমাদের অভিজ্ঞতা এমন যে, কোনো বছরই তা সন্তোষজনকভাবে বাস্তবায়িত হয় না। প্রতি বছরই শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। প্রথম প্রান্তিকের খতিয়ানে অবধারিতভাবে দেখা যায়, কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগেই ওই প্রান্তিকে যত শতাংশ কাজ করার কথা, তা করতে পারেনি। ১ টাকাও খরচ করতে পারেনি এমন নজিরও পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে, যথাসময়ে টাকা ছাড় না করার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন যথাযথভাবে ও যথাসময়ে হয় না। আরও একটা বড় অভিযোগ হলো, সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়ন সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে, সেটা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী অবাস্তবায়িত থাকার অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতিবছরই দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্ম সূচী মাঝপথে কাটছাঁট করা হয়। নির্ধারিত অর্থ কমিয়ে দেয়া হয়। আর এটাও প্রতি বছরেরই একটা সাধারণ চিত্র যে, অর্থবছর শেষ হওয়ার দুয়েক মাস আগে বাজেটীয় অর্থ খরচ করার একটা ধুম পড়ে যায়। এই ধুম খরচের বেশিরভাগই অপচয় ও লুট হয়ে যায়। কাজ যা হয়, তার মানও হয় অতি নিম্ন। বিশেষজ্ঞরা বহুবার তাকিদ দিয়েছেন প্রান্তিকভিত্তিক বাস্তবায়ন শতভাগ নিশ্চিত করতে, অর্থ দ্রুত ছাড় করতে এবং বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়াতে। তাদের কথায় কোনো কাজ হয়েছে বা হচ্ছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দুর্ভাগ্যজনক একারণে যে, উন্নয়নের জন্য অর্থ খরচ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না। সাতেভূতে জনগণের ট্যাক্সের টাকা ভাগবন্টন করে খাচ্ছে।

এপিএ চুক্তি বাস্তবায়নে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে এবং যারা ১০’র মধ্যে অবস্থান নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পারফরমেন্স এই করোনাকালে সকলেরই নজর কেড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাও অত্যন্ত ইতিবাচক হয়েছে। কৃষি উৎপাদন পড়ে যায়নি। এক্ষেত্রে কৃষকদের অবদানও অনস্বীকার্য। আর অর্থবিভাগ তার কর্মসম্পাদন ও দায়িত্বপালনে এগিয়ে না থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই অনেক অসুবিধা ও সংকট তৈরি হতে পারতো। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মসম্পাদনের হার এত নিম্ন কেন, সঙ্গতকারণেই সে প্রশ্ন উঠবে। সরকারি অবকাঠামো নির্মাণের একটি বড় অংশের দায়িত্ব পালন করে এই মন্ত্রণালয়। চুক্তি অনুযায়ী তার কর্মসম্পাদন সম্পন্ন না হওয়ার অর্থ অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত ও সংরক্ষণ ব্যহত হয়েছে। এর ফলাফল নেতিবাচক হতে বাধ্য। নির্মাণ ও সংস্কার ব্যহত হলে ব্যয় বৃদ্ধি অবধারিত। আমাদের দেশে যে কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এরপর সময়ক্ষেপণ হলে ব্যয় আরো বেড়ে যায়। আমরা জানি, রড, সিমেন্ট বালুসহ সব ধরনের নির্মাণসমগ্রীর দাম লাগাতার বাড়ছে। এমতাবস্থায়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অপারগতা ও ব্যর্থতা নির্মাণব্যয় আরো বাড়িয়ে দেবে। যে কোনো প্রকল্প বা কাজের ব্যয় বাড়ার মানে অর্থের অপচয় এবং কিছু লোকের লুটপাটের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। এ দুটি অপকর্ম কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা আশা করবো, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তার পারফরমেন্স বাড়ানোর, শতভাগ করার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগও, যাদের পারফরমেন্স উল্লেখযোগ্য নয়, কার্মসম্পাদনে যথোচিত গুরুত্ব ও জোর দেবে। এব্যাপারে পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি তিরস্কার করার ব্যবস্থাও থাকা উচিৎ। নিয়মিত তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে এক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া সম্ভব হবে বলে ধারনা করা যায়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MD. AFZAL HOSSEN ৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১:০৭ পিএম says : 0
ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন