হলুদের চাদরে ঢাকা মানিকগঞ্জের ফসলের মাঠগুলো। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ আর হলুদ। সরিষা ক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌচাষিরা। এ চাষে লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় চাষিদের। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও পাবনা, জামালপুর, সাতক্ষীরা, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ৪২টি মৌ-খামারি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিষা ফুল থেকে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছে। তাদের সংগৃহীত এই মধু রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে সাতটি উপজেলায় ৩৫ হাজার ১শ’ ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এই সরিষা ফুল থেকে প্রায় ৩২ মেট্টিকটন মধু সংগ্রহ করা হবে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৪২টি মৌখামারিরা মধু সংগ্রহের জন্য ৬ হাজার ১শ’ ৩১টি বাক্স বসিয়েছে। ইতোমধ্যে ২৬ হাজার ৫শ’ ৮ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এই মধু সংগ্রহ চলবে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে সরিষার ভালো আবাদ হয়েছে। মধু সংগ্রহের জন্য ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে কয়েকশ মৌবাক্স। সকালে মধু সংগ্রহের জন্য খোলে দেয়া হয় মৌবাক্সগুলো। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বসে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের চাকে জমা করে। আর প্রতি সপ্তাহে একবার মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালীরা। মেশিনের মাধ্যমে মধু সংরক্ষণ করে বাজারজাতের ব্যবস্থা করেন।
সাতক্ষীরা থেকে আসা মায়ের দোয়া মৌ-খামারের মালিক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০০৩ সালে আমি ৫০টি বাক্স নিয়ে মৌখামার শুরু করি। বর্তমানে আমার ২০০টি বাক্স রয়েছে। এ সব বাক্স মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মাইলাগিচকে সরষে ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতি সাপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়। তিনি আরো বলেন, মানিকগঞ্জে সরিষার আবাদ ভালো হয়। তাই প্রতি বছর আমরা এ জেলাতে আসি। সংগৃহীকৃত মধু বিক্রি করতে তেমন একটা কষ্ট করতে হয় না। কারণ অনেক ক্রেতা খাঁটি মধুর জন্য খামারে এসে কিনে নিয়ে যান।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চান্দরা গ্রামের আব্দুল হালিম বলেন, সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে দেখেছি। এ খামারে খাঁটি মধু পাওয়া যায়। গুনগত মান ভালো হওয়ায় ৪শ’ টাকা দিয়ে ১ কেজি ক্রয় করছি।
কৃষি কর্মকর্তা আব্দু কাদের বলেন, মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় দিনে দিনে বেকার যুবকদের আগ্রহ বাড়ছে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহায়তা করে থাকে।
মন্তব্য করুন