লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সদ্য নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমানকে রাজাকারের সন্তান দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় তাকে (মোস্তাফিজুর রহমান ফারুককে) জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা’র) উপজেলা প্রতিনিধি থেকে অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান তাঁরা।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিসে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সফিক উদ্দিন বলেন, '১৯৭১'র সালের রাজাকারের সংগঠক পিস কমিটির চেয়ারম্যান মৃত আবদুল গফুর চেয়ারম্যানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ফারুক যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে যাতায়াত ছিল। পরবর্তীতে সে বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র পূরণ করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন'। সেই রাজাকারের ছেলেকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা’র) প্রতিনিধি হিসাবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে সভাপতি হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। উক্ত পদে থেকে তাকে বাদ দেওয়ার দাবি জানান সাবেক এ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
এ সময় সাবেক এই কমান্ডার আক্ষেপ করে বলেন- সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে ভুল বুঝিয়ে কেউ কেউ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যাচাই বাছাইয়ের নামে হয়রানি করছেন।আবার অনেক ক্ষেত্রে অমুক্তিযোদ্ধারাও তালিকাভুক্ত হতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
স্বাধীনতার ৫০বৎসর পর সুবর্ণজয়ন্তীর ঊষালগ্নে কমলনগরে এমন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আত্মসম্মান হারাতে বসেছেন।কতিপয় কর্মকর্তারা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কমলনগরে যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।
তিনি আরো বলেন,কমলনগরে প্রশিক্ষণধারী সম্মুখ সমরে অংশ গ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার মফিজ উল্লাহ,সিরাজুল ইসলাম,নিজাম উদ্দিনসহ প্রথম সারির এসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূনরায় যাচাইয়ের নামে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত একটি মহল।কুচক্রী মহলের ইন্ধনে ভারতে সুনামের সাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চৌকস মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার মফিজ উল্লাহ (ভুলক্রমে) লালমুক্তি বার্তায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার ধুয়া তুলে যাচাই বাছাইয়ের নামে তাঁর সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে।অথচ তিনি গেজেটধারী ও মুক্তিবার্তার নাম্বারপ্রাপ্ত ভারতে প্রশিক্ষণধারী প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা। এতে একমাত্র তিনি বা তাকে নন পুরো মুক্তিযুদ্ধ ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার মানসে ষড়যন্ত্রকারীরা লিপ্ত রয়েছেন।
সাবেক এ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আরো বলেন,'আমরা অচিরেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার মফিজ উল্লাহসহ অন্যদের যাচাই বাছাইয়ে সঠিক তথ্য প্রদানে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করি, সাথে সাথে ভবিষ্যতে আর যেন কোন মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাইয়ের নামে হয়রানির শিকার না হন সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আহবান জানাই"।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান, আবুনূর সেলিম, আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী, নাছির উদ্দিন, আবদুল ওদুদ, মফিজুর রহমান, সুলতান আহমেদ হাওলাদার, খোরশেদ আলম, সাহাব উদ্দিন, হাফিজ উল্লাহ ও বাশার মাস্টার প্রমুখ।
উল্লেখ্য,বিগত ২৫ জানুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা’র) মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বেসামরিক গেজেট যাচাই-বাছাই নির্দেশিকা ২০২০ অনুযায়ী গঠিত কমিটির কমলনগর উপজেলা সভাপতি হিসাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমানকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন