বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

ক্যান্সার প্রতিরোধে টমেটো

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

শুধু পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি হিসাবেই নয়, টমেটো অনন্য ভেষজ গুণেরও আধার। অর্থাৎ টমেটো শুধু ফল আর সবজিই নয় ওষুধও বটে। টমেটো শরীরের প্রতিরোধক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে, কিডনিকে সক্রিয় রাখতেও বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে। এটি একটি ক্ষারীয় তরকারী বলে শরীরের ক্ষারের পরিমাণ বাড়ায়। আর এ ক্ষার শরীরে অম্ল উৎপাদনকারী উপাদান যেমন-ফসফেট, ইউরিয়া এবং এমোনিয়াকে প্রশমিত করে বলে শরীরে অম্লক্ষারের সমানুপাতিক হার বজায় থাকে এবং শরীর সুস্থ রাখে। এতে শ্বেতসার থাকে বলে যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য টমেটো উপকারী। প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ থাকার কারণে রাতকানা ও ভিটামিস ‘সি’ থাকার দরুন ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। চোখের অপটিক নার্ভের সুস্থতার জন্যও টমেটো উপকারী। এটি মূত্রথলির অম্লতাকে নিরপেক্ষ রাখতে সাহায্য করে, মূত্রাশয়ের সংক্রমণ ও পাথর তৈরীতে বাঁধার সৃষ্টি করে। এটি বদ হজমসহ পাকস্থলীর যন্ত্রণা বা আলসারের লক্ষণ দূরীভ‚ত করে ও যকৃত বা লিভারকে সুস্থ রাখে। তাই পেপটিক আলসার ও জন্ডিসের রোগীর জন্য এটি উপকারে আসে। এছাড়া টমেটো ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং এর রস মুখমন্ডলের ত্বককে সজীব রাখে।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্যানসার-এ প্রকাশ, উত্তর ইউরোপের গবেষকরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছেন যে, যারা প্রতি সপ্তাহে ৭টারও বেশী কাঁচা টমেটো খান, তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৬০% কম। টমেটো প্রেমী মানুষের মধ্যে কোলন, রেক্টাল এবং ষ্টমাক ক্যান্সার হওয়ায় প্রবনতা খুবই কম। সম্প্রতি বৃদ্ধ বয়সের আমেরিকানদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েও একই তথ্য পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানী কোনডিজের মতে, অল্প যে কয়েকটি লাইকোপেন নামক এন্টি অক্সিজেন্ট থাকে, ‘তার অন্যতম। এছাড়াও এতে থাকে ভিটামিন সি, পিকোম্যারিক ও ক্লোরোনিক এসিড, এগুলো এন্টি অক্সিজেন্ট হিসাবে কাজ করে। আমাদের শরীরে ক্যান্সার রুখতে এগুলোই কার্যকরী মহাঔষধ। হার্ট অ্যাটাকেও এটি মোক্ষম দাওয়াই বলে বিবেচিত। শরীরের রক্তবাহী নালীগুলোতে স্নেহ পদার্থ জমতে তো দেয়ই না উপরন্ত রক্তে অতিরিক্ত স্নেহ পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতি রোগ ক্যান্সারে মৃত্যুহার এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে ১৯৮১ সালে দু’জন বৃটিশ বিজ্ঞানী অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। অপরদিকে আমেরিকার ক্যান্সার ইনষ্টিটিউটও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মতামত দেয়। বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, নিরামিষ ভোজীদের ক্যান্সার হওয়ার হার আমিষ ভোজীর চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। যে সব লোক শাক-সব্জি নিয়মিত আহার করেন তারা তুলনামূলকভাবে ক্যান্সার ও হার্ট এটাকে কম আক্রান্ত হন। কারণ, শাক-সব্জিতে এমন কিছু বিশেষ উপাদান রয়েছে যা শরীরের কোষ তৈরী হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধা দিতে সহায়তা করে। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ একমত পোষণ করেন। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, ক্যারোটিন সমৃদ্ধ ফল এবং সব্জিতে এমন কোন উপাদান আছে যা দীর্ঘ দিন ধরে হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে। এ উপাদানটি হচ্ছে লাইকোপেন যার কারণে টমেটো লাল হয়। আগেই বলা হয়েছে যে, লাইকোপেন বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে প্রোষ্টেট কোলন এবং পায়ুপথের ক্যান্সার প্রতিরোধে এর ভেষজগুণ প্রমানিত। উল্লেখ্য যে, আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডাঃ লেনোরি কোহলামিয়ার তাঁর ১০ জন ইউরোপীয় গবেষকসহ তাদের গবেষণালব্ধ তথ্যে জানিয়েছেন যে, লাইকোপেন হলো এমন এক খাদ্য উপাদান যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সার উভয় রোগই প্রতিরোধ করতে পারে। লাইকোপেন সবচেয়ে বেশী পরিমাণে আছে টমেটোতে। কিন্তু শরীর এ লাইকোপেন সহজে গ্রহন করতে পারে না। তবে এ লাইকোপেন শরীর সহজে গ্রহন করতে পারে কেবল রান্না করা হলে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত টমেটো যেমন পেষ্ট, সস ইত্যাদি থেকে দেহকোষ সহজে লাইকোপেন গ্রহন করতে পারে। টমেটো জুস থেকে সহজে গ্রহনীয় লাইকোপেন পাওয়া যায় যদি গরম করে নেয়া হয়। বোতলে ভরা বা টিনজাত টমেটো জুস যেহেতু গরম করে প্রক্রিয়াজাত করা হয় সে জন্যে এর থেকেও লাইকোপেন পাওয়া যায়।

ডাঃ কোহলমিয়ার বলেছেন কাঁচা টমেটো থেকে যে পরিমাণ লাইকোপেন পাওয়া যায় তার পাঁচগুণ বেশী লাইকোপেন পাওয়া যায় সমপরিমাণে টমেটো রস থেকে। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন যখন কোন খাবার প্রক্রিয়াজাত করা হয় তখন কিছু স্নেহ পদার্থ তৈরী হয় যা মানব দেহের চর্বির সাথে সহজে রাসায়নিক বিক্রিয়া করতে পারে এবং দ্রুত আত্মীকরণও হয়। এ পদ্ধতিতেই প্রক্রিয়াজাত টমেটো থেকে লাইকোপেন মানবদেহের মেদের মধ্যে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে। ডাঃ লেনোরির নেতৃত্বে গবেষক দলটি প্রমান করেছেন যে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে লাইকোপনই শ্রেষ্ঠ। খাবারের সাথে লাইকোপেন গ্রহনের উপকার সম্বন্ধে তারা শুধু নিশ্চিত কিন্তু লাইকোপেনের সাথে অন্য কোন পুষ্টি উপাদান শরীরে প্রবেশ করে কিনা সে বিষয়েও গবেষণা চলছে।
আমাদের দেশে শীতকালে এবং তার পরবর্তী সময়ে সকল হাটে-বাজারে টমেটো পাওয়া যায়। টমেটো বাজারে প্রথম আসার সময় দাম একটু বেশী থাকলেও পরে অনেক সস্তায় সেগুলি বাজারে বিক্রি হয়। যে কেউ ইচ্ছা করলে নিজের বাড়ীর আঙ্গিনায় বা ছাদের উপর টবের মাধ্যমেও টমেটোর চাষ করতে পারেন। মানবদেহে ভয়াবহ রোগের আক্রমণ প্রতিহত করতে টমেটোকে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন, এটা বিশেষজ্ঞের অভিমত।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
taijul+Islam ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:২২ এএম says : 0
Allah Is almighty
Total Reply(0)
Mohammed mukitul islam ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:২২ এএম says : 0
الحمد لله رب العالمين ...good news thanks
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন