শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ক্ষেতে পঁচছে টমেটো॥ কৃষকদের দাবী নষ্টের চেয়ে ত্রাণের সাথে টমেটো দেয়া হোক

প্রশাসনের তদারকি নেই - আদা, রসুনসহ অন্যান্য জিনিসের মুল্য অস্বাভাবিক

দিনাজপুর অফিস | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২০, ৫:২৫ পিএম

দিনাজপুর শহর থেকে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে গাবুড়া বাজার। দিনাজপুর অঞ্চলের সর্ববৃহৎ টমেটো বাজার। ঢাকা-নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেপারী। এই বাজারে দুই থেকে আড়াই টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। তারপরেও ক্রেতা নেই। অথচ এর কিছু দুরেই শহরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের অস্থায়ী কাঁচা বাজারসহ আশে-পাশের সকল বাজারে এই টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। বেশী পাকা হলে ১৫ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। 

এই হচ্ছে দিনাজপুরের বাজারের হালচাল। প্রশাসনের নেই কোন তদারকি। জেলার হাট-বাজার ও পাইকারী দোকানে জিনিসপত্রের মুল্যে কোন লাগাম নেই। যে যেভাবে পারছে দাম নিচ্ছে। প্রশাসনের কার্যকর কোন মনিটরিং না থাকায় বাজারের এই বেহাল অবস্থা। শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্ত মূল্য বৃদ্ধি নেয়ার ব্যাপারে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আদার, পিয়াজ, রসুন, ছোলা সব জিনিসের দাম বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে।
অথচ দাম না পাওয়ায় জমি থেকে কৃষকেরা টমেটো তুলছে না। পচে যাচেছ সেখানেই। বাজারে আনার পর বিক্রি করতে না পেরে মনের দুঃখে ফেলে দিচ্ছে। কৃষকেরা বলছে পঁচে যাওয়ার চেয়ে টমেটোগুলি ত্রাণ হিসাবে বিতরণ করা যেতে পারে। প্রশাসন যদি মনে করে তাহলে টমেটোগুলি তুলে ক্ষুদার্ধ মানুষদের মধ্যে বিলি করতে পারে। ­­­­

সদর উপজেলার গাবুড়া এলাকায় একরের পর একর জমিতে পড়ে রয়েছে কাঁচা-পাকা টমেটো। দাম না থাকায় তুলছে না কৃষক। অসহায় মানুষেরা ইচ্ছেমত তুলে নিয়ে যাচেছ। গরু-ছাগল খাচ্ছে টমেটো। কৃষক আছিমউদ্দিন বললেন, আমাদের ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে এখন এসব টমেটো নষ্ট হতে না দিয়ে ত্রানের সাথে দিয়ে করোনা ভাইরাসের কারনে অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা যেতে পারে। এজন্য দরকার প্রশাসনের উদ্যোগ। কারণ ক্ষেত থেকে তুলতেও টাকা দরকার। তাই প্রশাসনের উদ্যোগে মজুর দিয়ে ক্ষেত থেকে তুলে নিয়ে ত্রাণের সাথে দিলে কৃষকেরা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুড়িয়া গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান। সে প্রায় ৯ একর জমিতে টমেটো আবাদ করেছে। টমেটো তুলে আউশ ধান লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্ত বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১’শ থেকে ১২০ টাকা মন দরে। যা কেজি হিসাবে হিসাবে পড়ে আড়াই টাকা। জমি থেকে টমেটো তোলা এবং ভ্যানে করে বাজারে আনতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে আড়াই থেকে তিন টাকা। তাহলে এই টমেটো তুলে লাভ কি। তাই জমিতেই পড়ে রয়েছে টমেটো। টমেটো আবাদ করতে তার ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। যার প্রায় পূরোটাই ক্ষতি। একইভাবে সে টমেটোগুলি ক্ষেতে নষ্ট না করে অসহায় মানুষদের মধ্যে ত্রাণের সাথে বিতরণ করা যেতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে দিনাজপুরে এবার প্রায় ১১৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পঁচনশীল দ্রব্য হওয়ায় কৃষক কোনভাবেই মজুদ রাখতে পারে না। নেই কোন বিষেশায়িত কোল্ড ষ্টোর। এজন্য টমেটো’র বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়মিত বাজার এবং সস প্রস্তুতকারী কোম্পানীগুলি’র উপরই নির্ভর করতে হয় কৃষক থেকে ফড়েয়াদের। কিন্ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না। সস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলিও অজানা ভয়ে সংরক্ষনের জন্য টমেটো ক্রয় করছে না। অন্যান্য শাক-সবজির দামও কম।
অপরদিকে আদা নিয়ে ঢাকায় হৈ চৈ হলেও দিনাজপুর বা আশপাশের এলাকায় এর কোন প্রভাব নেই। এক’শ টাকা আদা ৩’শ টাকায় ঠেকেছে। শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ টাকায়। যা কয়েকদিন আগেও ছিল তিনশ’র নিচে। ছোলা চিনি এমনকি লবনের দামও বাড়তি। করোণা ভাইরাসে সবকিছুই স্থবির, কাজ নেই, মানুষের হাতে টাকা নেই। তাহলে বাজারের এই অবস্থা কেন। একজন সচেতন ক্রেতা এককথায় বললেন প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এ অবস্থা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন