দিনাজপুর শহর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে গাবুড়া বাজার। দিনাজপুর অঞ্চলের সর্ববৃহৎ টমেটো বাজার। ঢাকা-নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেপারীদের আনাগোনা। এ বাজারে দুই থেকে আড়াই টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। তারপরেও ক্রেতা নেই। অথচ এর কিছু দূরেই শহরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের অস্থায়ী কাঁচা বাজারসহ আশ-পাশের সব বাজারে এ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। বেশি পাকা হলে ১৫ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
এ হচ্ছে দিনাজপুরে বাজারের হালচাল। প্রশাসনের নেই কোন তদারকি। জেলার হাট-বাজার ও পাইকারি দোকানে পণ্যমূল্যে কোন লাগাম নেই। যে যেভাবে পারছে দাম নিচ্ছে। প্রশাসনের কার্যকর কোন মনিটরিং না থাকায় বাজারের বেহাল অবস্থা। শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার ব্যাপারে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আদা, পিয়াজ, রসুন, ছোলা সব জিনিসের দাম বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে।
অথচ দাম না পাওয়ায় জমি থেকে কৃষক টমেটো তুলছে না। পঁচে যাচেছ সেখানেই। বাজারে ওঠানোর পর বিক্রি করতে না পেরে মনের দুঃখে ফেলে দিচ্ছে। কৃষক বলছে, প্রশাসন যদি মনে করে পঁচে যাওয়ার চেয়ে এসব টমেটো ত্রাণ হিসাবে বিতরণ করা যেতে পারে।
সদর উপজেলার গাবুড়া এলাকায় একরের পর একর জমিতে পড়ে আছে কাঁচা-পাকা টমেটো। দাম না থাকায় তুলছে না কৃষক। অসহায় মানুষেরা ইচ্ছেমত তুলে নিয়ে যাচেছ। গরু-ছাগল খাচ্ছে টমেটো। কৃষক আছিমউদ্দিন বললেন, আমাদের ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে এখন এসব টমেটো নষ্ট হতে না দিয়ে ত্রানের সাথে দিয়ে করোনাভাইরাসে অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা যেতে পারে। এজন্য দরকার প্রশাসনের উদ্যোগ। কারণ, ক্ষেত থেকে তুলতেও টাকা দরকার। তাই প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রাণের সাথে দিলে কৃষক কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুড়িয়া গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান প্রায় ৯ একর জমিতে টমেটো আবাদ করেছে। টমেটো তুলে আউশ ধান লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১’শ থেকে ১২০ টাকা মন দরে। যা কেজি হিসাবে পড়ে আড়াই টাকা। জমি থেকে টমেটো তোলা এবং ভ্যানে করে বাজারে নিতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে আড়াই থেকে তিন টাকা। তাই জমিতেই পড়ে আছে টমেটো। এসব টমেটো আবাদে তার ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যার প্রায় পূরোটাই ক্ষতি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে দিনাজপুরে এবার প্রায় ১১৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হবে আশা করা হচ্ছে। পঁচনশীল হওয়ায় কৃষক কোনভাবেই টমেটো মজুদ রাখতে পারে না। নেই কোন বিষেশায়িত কোল্ড ষ্টোর। এজন্য টমেটো বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়মিত বাজার এবং সস প্রস্তুতকারি কোম্পানির ওপর নির্ভর করতে হয় কৃষক ফড়িয়াদের। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না। সস উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলিও অজানা ভয়ে সংরক্ষণের জন্য টমেটো ক্রয় করছে না।
অপরদিকে আদা নিয়ে ঢাকায় হৈ চৈ হলেও দিনাজপুর বা আশপাশের এলাকায় এর কোন প্রভাব নেই। এক’শ টাকার আদা ৩’শ টাকায় ঠেকেছে। শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ টাকায়। যা কয়েকদিন আগেও ছিল তিনশ’র নিচে। ছোলা চিনি এমনকি লবনের দামও বাড়তি। করোণাভাইরাসে সবকিছুই স্থবির, কাজ নেই, মানুষের হাতে টাকা নেই। তাহলে বাজারের এ অবস্থা কেন। একজন ক্রেতা বললেন প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এ অবস্থা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন