জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া মহা দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিটি যশোরের শার্শা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশ প্রহরী রুস্তম আলী। এই অফিসের আর এক মহাক্ষমতাশালী ব্যক্তি হলেন তরিকুল ইসলাম ঝন্টু। তিনি স্থানীয় দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
নিজে দলিল লেখক হলেও কারও দলিল লিখে দেন বলে শোনা যায় না। কিন্তু, অন্য দলিল লেখকরা তাকে না জানিয়ে কোনো জমির দলিল লিখতে পারেন না। নৈশ প্রহরী রুস্তম আলীর সাথে গাটছড়া বেঁধে তিনিও হয়ে উঠেছেন বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক।
মূলত-রু¯তম আলী আর তরিকুল ইসলাম ঝন্টুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ শার্শা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে আসা সাধারণ মানুষ। তাদের বাইরে এ অফিসে কোনো কাজ কেউ করাতে পারেন না। জমির দলিল করানো থেকে শুরু করে যে কোনো কাজ কেউ নিয়ে গেলে এই দু’ব্যক্তিকে দিতে হয় উৎকোচ। নানা খাত-উপখাত দেখিয়েও তারা টাকা হাতিয়ে নেন সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রুস্তম আলী নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার পিতা ইব্রাহিম শেখ সাধাসিধে কর্মজীবী একজন মানুষ। ৪০ বছর ধরে তিনি চায়ের দোকান দিয়ে সততার সাথে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সন্তানকে কোনোমতে দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে নৈশ প্রহরীর কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন শার্শা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। কিন্তু, পিতার সততার ঠিক বিপরীতে হাটতে শুরু করেন রুস্তম। যখন যিনি এই অফিসে সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তার ছাঁয়াসঙ্গী হিসেবে দু’হাতে কামিয়েছেন অবৈধ টাকা। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকার মাধ্যমে অন্য লোককে দিয়ে নিজের ডিউটি করিয়ে নেন তিনি।
রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, কর্মকর্তাদের পক্ষে সমস্ত অবৈধ কাজগুলো করেন তিনি। পরচা ছাড়া এবং খাজনা পরিশোধ না করে জমি রেজিস্ট্রি, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে কম টাকা রাজস্ব জমা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রিতে তিনি সিদ্ধহস্ত। এজন্য তিনি ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেন। যার একটি অংশ যায় কর্মকর্তাদের পকেটে। বাকিটা তিনি ও তরিকুল ইসলাম ঝন্টু ভাগ করে নেন। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রেজিস্ট্রি করাতে লাখে কমপক্ষে দু’লাখ টাকা উৎকোচ নেন এরা। শ্রেণি বা জমির বাজারদর অনুযায়ী এর পরিমাণ আরও অনেক বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে অফিসের নাম করে দলিলপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করেও আদায় করেন রুস্তম।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে রাতারাতি বড়লোক বনে যাওয়া রুস্তমের কনা ফ্যাশান নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শার্শা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে জলিল স্যারের বাড়ির পাশে নতুন বাড়ির কাজ চলমান। বেনামেও অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। একাধিক ব্যাংকে নামে-বেনামে তার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার মধ্যে উলেখযোগ্য হলো কৃষি ব্যাংক শার্শা শাখা, সোনালী ব্যাংক শার্শা শাখা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বেনাপোল শাখা। স্ত্রী ফাতেমার নামেও তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন। এছাড়া, স্ত্রীর নামে করা সম্পদের পরিমাণও বিপুল।
তরিকুল ইসলাম ঝন্টুর বাড়ি উপজেলার শ্যামলাগাছি। তিনিও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আর রুস্তম আলীর সহযোগী হিসেবে তিনিও গড়ে তুলেছেন বিত্তবৈভব। খোঁজ নিয়ে তরিকুলের এমন কিছু সম্পদের বিবরণ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো শার্শা কলকাকলী স্কুলের সামনে তিনতলা ফ্ল্যাট ও একতলা বাড়ি, যশোরে চারতলার ফ্ল্যাট, শ্যামলাগাছীতে দু’তলা বাড়ি, কামারবাড়ি মোড়ে দু’তলা বাড়ি, মেসার্স এশা আব্দুললাহ এন্টারপ্রাইজের ৫০ শতাংশ শেয়ার। কাগজপুকুর মসজিদের সামনে তরিকুলের একটি বাড়ির কাজ চলমান। এছাড়া, তরিকুলের আরও ছয়টি বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে।
মূলত কর্মকর্তাদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত নৈশ প্রহরী রুস্তম ও দলিল লেখক তরিকুল শার্শা সাব রেজিস্ট্রি অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস দেখান না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদ রয়েছে তাদের ওপর।
নৈশ প্রহরী রু¯তম ও দলিল লেখক তরিকুল ইসলাম জানান, তাদেরে কোন অবৈধ সম্পদের পাহাড় নেই। কস্ট করে মাথা গোজার একটি ঠাই ছোট একটি বাড়ি করেছি। একটি মহল তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার চালাচেছ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন