১। উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেমন সংশ্লিষ্ট হিজড়াকে পুরুষ গণ্য করা হবে, না কি নারী? সেক্ষেত্রে যেমন বলা হয়েছে যে, যদি তার সৃষ্টিগত বাহ্যিক অবস্থা ও আভ্যন্তরীণ অবস্থা- উদাহরণত, দাঁড়ি-মোচ গজানো, পুরুষের অনুরূপ আচরণ এবং পুরুষের অনুরূপ বা তার কাছাকাছি প্রস্রাবের স্থান অথবা তার দ্বারা কোন নারীর গর্ভ সঞ্চারিত হওয়া; কিংবা নারীসুলভ আচরণ, স্তন-গুপ্তাঙ্গ নারীদের অনুরূপ বা কাছাবাছি হওয়া অথবা তার মাসিক স্রাব হওয়া, ইত্যাদি লক্ষণীয় হয় এবং সে একজস পুরুষ বলে ধর্তব্য হয়; তা হলে একজন অহিজড়া মুসলিম পুরুষের সমপরিমাণ অংশ সেও পায়। আর নারী বলে ধর্তব্য হলে, একজন অহিজড়া মুসলিম নারীর সমপরিমাণ অংশ একজন হিজড়া নারীরও প্রাপ্য; যদিও ক্ষেত্রবিশেষে অর্থাৎ কেবল ‘জটিল হিজড়া’র ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হয়ে থাকে এবং তাও সাময়িক বিবেচনায়। কেননা সে সাবালক হয়ে গেলে তখন আর জটিলতা অবশিষ্ট থাকছে না। আবার ব্যতিক্রম হিসাবে ২/১ জন সাবালক হওয়ার পরও যদি জটিলতা বহাল মর্মে প্রমাণ যায়, সেক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসান্তে আর জটিল থাকবে না।
সেই ব্যতিক্রম কি?
উত্তরাধিকার এর ক্ষেত্রে সেই ব্যতিক্রম বা সতর্কতামূলক বিধান হচ্ছে: সম্পদ বন্টন প্রশ্নে ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর গবেষণাপ্রসূত চূড়ান্ত মতানুযায়ী তাকে ছোট অংশটি দেওয়া হবে। তার প্রক্রিয়া হবে: তাকে পুরুষ গণ্য করলে তার অংশ কত হয় এবং নারী বলে গণ্য করলে তার অংশ কত হয়? -তা বিবেচনা করতে হবে এবং তার পর তাকে সে হিসাবে ছোট অংশটি প্রদান করা হবে অর্থাৎ যা তুলনামূলক ছোট হয়। আর উক্ত উভয়বিধ বিবেচনা কালীন কোনো ক্ষেত্রে সে যদি ফারায়েয শাস্ত্রের ‘হিজাব’ নীতি অনুযায়ী প্রতিবন্ধকতার দরুন বঞ্চিত হয়; তা হলে সেক্ষেত্রে সে কোনো অংশ পাবে না (প্রাগুক্ত: আল-ফিকহুল হানাফী ফী ছাওবিহিল জাদীদ: দ্বিতীয় খন্ড, ২৭২ পৃষ্ঠা; দারুল কলম, দিমাশক/কাহেরা, মিসর)। অর্থাৎ অন্য অহিজড়ারা যেমন (হিজাব) প্রতিবন্ধকতার কারণে বিশেষক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়ে থাকেন তেমন কারণে হিজড়ারাও সেক্ষেত্রে বঞ্চিত হবে। এমন নয় যে, কেবল হিজড়া হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট লোকটি বঞ্চিত হচ্ছে।
২। উল্লেখ্য, উক্ত বিধানের ক্ষেত্রে “সাহেবাইন’ তথা ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ র. এর গবেষণাগত অভিমত ছিল: তাকে পুরুষ ও নারী কল্পনা করলে উভয়টির সমষ্টি যা হবে তার অর্ধেক প্রদান করা হবে। কিন্তু ‘ফাতওয়া’ তথা ‘চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ হচ্ছে ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর অভিমত অনুযায়ী। আর তা-ই হচ্ছে, সকল সাহাবীরও অভিমত” (‘আল-ফিকহুল হানাফী ফী ছাওবিহিল-জাদীদ’ : দ্বিতীয় খন্ড, ২৭২ পৃষ্ঠা; দারুল কলম, দিমাশক/কাহেরা, মিসর)। সুতরাং প্রান্তিক বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত প্রশ্নে সাহেবাইন এর অভিমত টেনে আনা এবং এখন আর নতুন করে গবেষণা’র নামে বিরোধ-বিতর্কে জড়ানো যাবে না।
৩। হযরত ইমাম আবূ হানীফা (র)-কে হিজড়াদের উত্তরাধিকার প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, “তাদের পেশাবের স্থান বিবেচনায় তা নির্ধারিত হবে” -যা কিনা মূলত মহানবী স.-ই সাহাবাদের প্রশ্নের জবাবে ইরশাদ করেছিলেন (‘দারেমী’ সূত্রে প্রাগুক্ত: খ-০২/৪৬১)।
“উক্তরূপ বর্ণনা হযরত আলী (রা) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। ইসলাম-পূর্ব জাহেলিয়া যুগেও তাদের ক্ষেত্রে তেমন বিধানই প্রচলিত ছিল; তাই ইসলামও তা-ই বহাল রেখেছে” (প্রাগুক্ত: আল-মুসতালিহাত: পৃ-৬০)।
এখানে লক্ষণীয়, “তাদের পেশাবের স্থান বিবেচনায়” হাদীসের যে নির্দেশনা আমরা পেলাম এবং একই বক্তব্য ইমাম আবূ হানীফা র. এরও। এটিকে আমাদের অনিবার্যরূপে ধরে নিতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট হিজড়া লোকটিকে হয়তো পুরুষ অথবা নারী যে-কোনো একদিকে গণ্য করতে হবে; তার বিকল্প হবে না। তার কারণ, বিকল্প তৃতীয় আরেকটি প্রকার বা শ্রেণিতে ফেলা যদি শরীয়তের তথা আল্লাহ্ ও রাসূল স. এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হত সেক্ষেত্রে তার (জটিল হিজড়া) প্রাপ্য অংশ কত হবে? তাও তাঁরা বলতেন বা নির্দেশনা অবশ্যই প্রদান করতেন। কেননা মীরাস তথা সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়টি এতো অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর যে, মহান আল্লাহ্ নিজেই বলেছেন, “(এ হল) আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ফরযকৃত (নির্ধারিত) বিধান” (নিসা: আয়াত নং-১১)। একই সূরার ৭নং আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলে দিয়েছেন, “তা কম হোক বা বেশিই হোক, নির্ধারিত অংশ”।
বিধি মোতাবেক গবেষক পর্যায়ের একজন বিজ্ঞ আলেম যিনি হবেন, এক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য হতে পারে: “আয়াতাংশকে উসূল মোতাবেক আমরা যদি ‘ইজমাল’ বা ‘মুজমাল’ ধরে নেই সেক্ষেত্রে তার ‘তাফসীল’ অবশ্যই রাসূল স. এর হাদীস বা সুন্নাহ্ বা সাহাবাগণের জীবনাদর্শে থাকবে। কিন্তু কই সে তাফসীল-ব্যাখ্যা? কোথায়, কোন্ হাদীসে এমন ‘নস্’ বিদ্যমান যে, হিজড়াদের নারী বা পুরুষ দুই কাতারে বিভক্ত বা চিহ্ণিত করার পরও ২/১ জন জটিল হিজড়া যারা থাকবে, তারা নিশ্চিতভাবে ‘এত অংশ’ বা ‘অমুক পরিমাণে’ সম্পত্তির নির্ধারিত উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবে? অর্থাৎ ‘জটিল হিজড়া’ এর ক্ষেত্রে সাধারণ অহিজড়া নারী বা পুরুষের বেলায় প্রযোজ্য নিয়ম ও নির্ধারণ এর বাইরে নতুন বা ‘পৃথক পরিমাণ’ সম্বলিত কোনো অংশ শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। (চলবে)
লেখক : মুফতী : ইসলামী ফাউন্ডেশন, বায়তুল মোকাররম, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন