আতিকুর রহমান নগরী
হজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা আর্থিক ও শারীরিক ইবাদতও বটে। হজের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা, সংকল্প করা। শরিয়তের পরিভাষায় হজের মাসসমূহে বিশেষ কিছু কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু স্থানের যিয়ারত করাকে হজ বলে। হজের মাসসমূহ : শাওয়াল, যিলক্বাদাহ ও যিলহাজ্জার দশ দিন। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে হজ যখন ওয়াজিব হয় তখনই পালন করা এবং একবারই পালন করা ফরয। হজ ফরয হওয়ার শর্ত আটটি : (১) মুসলমান হওয়া (২) জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া (৩) বালেগ হওয়া (৪) স্বাধীন হওয়া (৫) হজের সময় হওয়া (৬) মধ্যম ধরনের ব্যয় হিসেবে সফরের ব্যয় বহনের সামর্থ্য থাকা, যদি হজ পালনকারী মক্কা শরিফে অবস্থান করে তবুও (৭) যারা মক্কা শরিফের বাহিরে থাকেন তাদের জন্য হজ পালনের শর্ত হল মালিকানা বা ভাড়া সূত্রে স্বতন্ত্রভাবে একটি বাহন বা অন্যকিছু ব্যবহারের সামর্থ্য থাকা যেমন : আমাদের দেশের হাজিগণ বিমান ব্যবহার করে থাকেন। তবে কেউ যদি বিনিময় ছাড়া তার বাহন বা সওয়ারি ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাহলে তা সামর্থ্য হিসেবে গণ্য হবে। যারা মক্কার আশেপাশে অবস্থান করেন, তাদের উপর তখন হজ ফরয হয়। যখন তারা কষ্ট সহ্য করে নিজ শক্তিতে পায়ে হেঁটে হজ করতে পারে। কিন্তু হাঁটতে সক্ষম না হলে সেই ব্যক্তি মক্কার অধিবাসি হোক বা না হোক তার জন্য অবশ্যই বাহনের প্রয়োজন হবে। (৮) অমুসলিম দেশে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির “হজ ইসলামের একটি রুকন (ফরয)”একথা জানা থাকা বা সে ব্যক্তি মুসলিম দেশের অধিবাসি হওয়া। হজ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাঁচটি : (১) সুস্থ থাকা (২) হজে যাওয়ার বাহ্যিক বাধা দূরিভূত হওয়া (৩) রাস্তাঘাট নিরাপদ থাকা (স্থল ও সামুদ্রিক পথে যদি অধিকাংশ লোক নিরাপদে ফিরে আসে তবেই রাস্তা নিরাপদ বলে ধর্তব্য হবে।) (৪) মহিলাগণ তাদের ইদ্দত অবস্থায় না থাকা (৫) নারীর বেলায় হজে তার সাথে একজন মুসলমান আস্থাভাজন, জ্ঞানসম্পন্ন, বালেগ মাহরাম পুরুষ বা স্বামী থাকা। মাহরাম ব্যক্তি স্তন্যসূত্রে মাহরাম হতে পারে অথবা বৈবাহিক সূত্রেও হতে পারে। চারটি কাজে হজ পালন : চারটি কাজ করলে স্বাধীন ব্যক্তির হজের ফরয বিশুদ্ধভাবে পালিত হয়। এক. ইহরাম। দুই. ইসলাম। এ দুটি হল হজের শর্ত অতঃপর হজের অপর দুই ফরয পালন করা। অর্থাৎ যিলহজের নবম তারিখে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর থেকে কোরবানির দিনের ফযর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অন্তত এক মুহূর্ত আরাফাতের ময়দানে ইহরাম অবস্থায় থাকা। তবে শর্ত হল এর পূর্বে ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস না করা চাই। দ্বিতীয় ফরয হল তাওয়াফে যিয়ারতের অধিকাংশ চক্কর যথাসময়ে অর্থাৎ দশম তারিখের ফযরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর পালন করা। হাজীদের জন্য জরুরি বিষয়সমূহ : (১) মিক্বাত হতে ইহরাম বাধা (২) সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা (৩) যিলহজের দশ তারিখে ফযরের সময় শুরু হওয়ার পর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফায় থাকা (৪) পাথর নিক্ষেপ করা (৫) হজে ক্বেরান ও হজে তামাত্তু পালনকারীর পশু যবেহ করা (৬) মাথা মু-ানো বা চুল ছোট করা (৭) মাথা মু-ানোর কাজটি হারাম শরিফে এবং ক্বোরবানির দিনগুলোতে সম্পন্ন করা (৮) মাথা মু-ানোর পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করা (৯) হজে ক্বেরান ও হজে তামাত্তু পালনকারীর পাথর নিক্ষেপ ও মাথা মু-ানোর মধ্যবর্তী সময়ে পশু যবেহ করা (১০) ক্বোরবানির দিনগুলোতে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করা (১১) হজের মাসগুলোতে সাফা-মারওয়ার মধ্যখানে সায়ী করা (১২) গ্রহণযোগ্য তাওয়াফের পর সায়ী করা। (১৩) ওযর ব্যতিত পায়ে হেঁটে সায়ী করা (১৪)সাফা থেকে সায়ী আরম্ভ করা (১৫) বিদায়ি তাওয়াফ করা (১৬) বায়তুল্লাহ শরিফের সবকটি তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে শুরু করা (১৭) ডান দিক থেকে তাওয়াফ শুরু করা (১৮) ওযর ছাড়া পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করা (১৯) ছোট-বড় উভয় প্রকার হাদাস থেকে পবিত্র থাকা (২০) সতর ঢাকা (২১) তাওয়াফে যিয়ারতের অধিকাংশ চক্কর (ক্বোরবানির দিনগুলোতে) সম্পন্ন করার পর অবশিষ্ট চক্করগুলো সম্পন্ন করা (২২) নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা যেমন : পুরুষরা সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা এবং মাথা ও চেহারা ঢাকা, মহিলারা চেহারা ঢাকা, যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলা, গুনাহের কাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, শিকার বা শিকারের প্রতি ইশারা করা কাউকে শিকার দেখিয়ে দেয়া ইত্যাদি।
হজের কার্যাবলি পুরোপুরিভাবে সম্পাদনের পদ্ধতি : যখন কেউ হজ করার ইচ্ছা করবে তখন সে মিক্বাত থেকে ইহরাম বাধবে। ইহরাম বাধার নিয়ম এই যে, ইহরাম বাধার প্রারম্ভে গোসল কিংবা ওযু করে নেয়া। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসলই উত্তম। কাজেই হায়েয ও নেফাসগ্রস্ত নারীর যদি গোসল করলে ক্ষতি না হয় তাহলে গোসল করবে। নখ ও গোফ কেটে, বগলের পশম পরিষ্কার করে, নাভির নিচের পশম মুড়িয়ে, গোসল করে সুগন্ধি লাগিয়ে তেল ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হওয়া মুস্তাহাব। পুরুষ লোক একটি ইযার ও চাদর পরিধান করবে, যা নতুন কিংবা ধৌতকরা হতে পারে। তবে নতুন সাদা কাপড় উত্তম। চাদরটি বোতামবিহীন হতে হবে। কোন প্রকারের জোড়া বা কাপড় ছিড়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ধরনের কাজ করা মাকরুহ। এ জন্য তার উপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন