শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

পথ নির্দেশ মাসাঈলে হজ

প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হে হজ বা ওমরাহ পালনকারী ব্যক্তি! এবার আপনি দু’রাকাত নামায পড়–ন। অতঃপর বলুন, হে আল্লাহ আমি হজ পালন করার ইচ্ছা করেছি, সুতরাং আপনি আমার জন্য কাজটি সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নামাযের পর তালবিয়া পড়–ন “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা”। যখন আপনি হজ বা ওমরার নিয়তে তালবিয়া পড়লেন তখনই আপনার ইহরাম বাধা হয়ে গেল। সুতরাং এ সময় থেকে আপনি রাফাস তথা স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকবেন। সবসময় তালবিয়া পড়–ন, তবে চিৎকার দেয়ার প্রয়োজন নেই। যার দ্বারা নিজের বা অন্যের ক্ষতি হয়। যখন আপনি মক্কায় পৌঁছবেন তখন আপনার গোসল ও দরজায়ে মুআল্লা দিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব।
হজের প্রকারভেদ : হজ মোট তিন প্রকার। ১. হজে ইফরাদ ২. হজে তামাত্তু এবং ৩.হজে ক্বেরান।
হজে ইফরাদের পরিচয় : ইফরাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ : একা, একাকি বা পৃথক। শরিয়তের পরিভাষায় মিক্বাত হতে শুধু হজের নিয়ত করে ইহরাম বেধে শুধুমাত্র হজ্ব সম্পন্ন করার নাম ইফরাদ।
হজে তামাত্তু এর পরিচয় : তামাত্তু এর আভিধানিক অর্থ : উপকারিতা অর্জন করা, উপভোগ করা। পরিভাষায় মিক্বাত হতে প্রথমে ওমরার ইহরাম বেধে তার কার্যাবলি সমাপন করে হালাল হওয়ার পর হজের সময় হজের ইহরাম বেধে তার আহকামসমূহ সম্পাদন করাকে তামাত্তু বলে।
হজে ক্বেরান এর পরিচয় : ক্বেরানের শাব্দিক অর্থ : মিলানো, মিশ্রণ করা। পরিভাষায় মিক্বাত হতে একসাথে হজ ও ওমরার নিয়ত করে ইহরাম বেধে উভয়টিকে একই ইহরামে সমাপ্ত করাকে ক্বেরান বলে।
সর্বোত্তম হজ কোনটি : তিন প্রকারের হজের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম আবু হনিফা (রহ.)’র মতে হজে ক্বেরান হচ্ছে সর্বোত্তম হজ। এরপর তামাত্তু তারপর ইফরাদ। কেননা নবীয়ে করিম (সা.) বিদায় হজের সময় ক্বেরান হজ করেছেন এবং তার পরিবারবর্গকেও তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া এটা পালন করা খুবই কষ্টকর। কারণ এতে দুটি ইবাদত একসাথে করা হয়। ইমাম শাফি ও ইমাম মালিক (রহ.)’র মতে ইফরাদ হচ্ছে সর্বোত্তম। এরপর তামাত্তু, তারপর ক্বেরান। এখানে ইমামে আযম (রহ.)-এর মতটিই গ্রহণযোগ্য।
ক্বেরান হজের প্রথম কাজ : ক্বেরানের মধ্যে সর্বপ্রথম ওমরার কাজ সম্পন্ন করে দিতে হবে, তারপর হজের কাজ শুরু করতে হবে। এ কারণে কোন ব্যক্তি প্রথমে হজের নিয়তে তাওয়াফ করলেও উমরার তাওয়াফই হবে। ক্বেরানকারীর কোরবানির বিধান : ক্বেরানকারীগণ কোরবানির দিবসে হজ ও ওমরা উভয়ের জন্য কোরবানি করবে। কেননা আল্লাহতা’লা তাকে একই সময়ে একই ইহরামে হজ ও ওমরা দুটিই আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আল্লাহর শুকরিয়া হিসেবে তার উপর একটি কোরবানি ওয়াজিব হবে। আর যদি কোরবানির সামর্থ্য না থাকে তাহলে দশটি রোযা রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে তিনটি হজের দিন সমূহে তথা সাত, আট ও নয় তারিখে রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে “ফামান তামাত্তাআ বিল ওমরাতি ইলাল হাজি ফামাস তাইসারা মিনাল হাদয়ি ফামাল লাম ইয়াজিদ ফা সিয়ামু সালাসাতি আইয়্যামিন ফিল হাজি ওয়াসাব আতিন ইলা রাজা’তুম তিলকা আশারাতুন কামিলাহ”। অর্থাৎ “যে ব্যক্তি হজের সাথে ওমরাকে একত্রিত করে আদায় করবে সে তার সাধ্যানুযায়ি কোরবানি দেবে। আর যে ব্যক্তি কোরবানি দিতে অক্ষম হবে সে হজের সময় তিনদিন রোযা রাখবে আর যখন তোমরা হজ হতে প্রত্যাবর্তন করবে তখন আরও সাতটি রোযা রাখবে।
ক্বেরান নিয়তকারী ওমরা ছেড়ে দিলে তার হুকুম : ক্বেরান পালনকারী যদি মক্কায় প্রবেশ না করে সোজা আরাফায় চলে যায় তবে তার ওমরা বাতিল ও মুফরিদ হিসেবে গণ্য হবে। এ ওমরা ছেড়ে দেয়ার কারণে তার উপর একটি দম ও পুনরায় ক্বাযা ওয়াজিব হবে। কেননা সে নিয়তের মাধ্যমে তার উপর ওয়াজিব করে নিয়েছিল আর ওয়াজিব পরিত্যাগের জন্য ক্বাযা ওয়াযিব হয়েছে। আর যদি মক্কায় দাখিল হয়ে ওমরার অধিকাংশ কাজ করার পূর্বেই আরাফায় চলে আসে তাহলে উপরোক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে, তবে ওমরার তাওয়াফের অধিকাংশ যেমন : সাত চক্করের স্থলে চার চক্করের পর আরাফায় চলে গেলে তার ওমরা বাতিল হবে না। বরং কোরবানির দিবসে তা পূরণ করে দিবে।
হজে তামাত্তুর পরিচয় : তামাত্তুর আভিধানিক অর্থ উপকৃত হওয়া বা লাভবান হওয়া। শরিয়তের দৃষ্টিতে তামাত্তু বলা হয় হজের মাসসমূহে তথা শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ মাসে মিক্বাত হতে শুধু ওমরার ইহরাম বেধে ওমরার কার্যাবলি সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর যিলহজ মাসের আট তারিখে পুনরায় ইহরাম বেধে হজ সমাপন করা। তামাত্তুকারী তাওয়াফের সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে : তামাত্তু আদায়কারী হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের পর ওমরার তাওয়াফ শুরু করার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে। মহানবী (সা.) হতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইমাম (রহ.) বলেন : ‘বাইতুল্লাহ শরিফের প্রতি দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন