জয়পুরহাট জেলার অরক্ষিত ২৬টি রেলক্রসিং এখন এলাকাবাসীর মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল যেন আর থামছেই না। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর দায়সারা পদক্ষেপেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে প্রশাসনিক উদ্যোগ। কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের দায় এড়ানো সীমাবদ্ধতার কথা।
জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর পাঁচবিবি ও আক্কেলপুর উপজেলা নিয়ে জেলায় মোট ৪৮.৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে রেলক্রসিং রয়েছে ৪৪ টি। বৈধ রেলক্রসিং রয়েছে ৩৮টি। ৬টি রয়েছে অবৈধ রেলক্রসিং। এছাড়া ২৬টি রেলক্রসিংই রয়েছে অরক্ষিত। আর ১৮টি রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলেও রয়েছে দায়িত্বে অবহেলা অভিযোগ। ২০০৬ সালে আক্কেলপুর আমুট্ট রেলক্রসিংয়ে রেল ও বাসের সংঘর্ষে প্রাণ হারায় ৪০ জন ২০০৯ সালে জয়পুরহাট শহরের কাশিয়াবাড়ী রেলক্রসিংয়ে ট্রেন ও বালুবাহী ট্রাকের সংর্ঘষে প্রাণ হারায় ৯ জন। সর্বশেষ ২০২০ সালে ১৯ শে ডিসেম্বর পুরানাপৈল রেলক্রসিংয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্সে ১৪ জননের প্রাণহানী ঘটে। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় মাটিচাপা পড়ে তিন তরুণ প্রকৌশলী স্বপ্ন। ঝরে পড়ে আরো তিন মেধাবী ছাত্র।
এছাড়া জামালগঞ্জ, তিলকপুর, আক্কেলপুর, বড়তাজপুর, তেঘর রেলঘুমটি, সাহাপুর, তেঘর কুমারপাড়া, ডাকবাংলা বাইপাস, পূর্ব মাতাপুর, রাধা বাড়ি উত্তর, বারোঘাটি পুকুর সংলগ্ন অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় আরও প্রাণ হারায় অন্তত ৩৫ জন। গত এক যুগে প্রায় ৯৮ জনের প্রাণহানী ঘটে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ৮৯ শতাংশই ঘটছে অরক্ষিত ক্রসিংয়ের কারণে।
গত ১৯ ডিসেম্বর পুরানাপৈল গেটে, গেটম্যান ভোরে ঘুমিয়ে থাকার ফলে রেল ও যাত্রীবাহীবাসের সংর্ঘষে ১৪ জনের প্রাণহানী ঘটে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তা উঠে এসেছে। অপরদিকে কাশিয়াবাড়ী ও আমুট্ট রেলক্রসিংয়ে কর্তব্যরত গেটম্যান দায়িত্ব পালন না করায় দুর্ঘটনা ঘটে, তদন্ত রিপোর্টে এমনটি উঠে এসেছে। এছাড়াও বিভিন্ন অবৈধ ও বৈধ রেলক্রসিংয়ে প্রাণহানী ঘটেই চলেছে। কর্তৃপক্ষ কোন দুর্ঘটনা হলেই দায়সারা একটি রিপোর্ট দিয়েই খালাস। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন আর কত মৃত্যুর মিছিল হলে এই ট্রেন দুর্ঘটনার অবসান হবে। মৃত্যুঝুঁকি কমাতে কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ না নেয়া, অসচেতনতা, দায়িত্বহীনতা আর অরক্ষিত রেলক্রসিংকে দুষছেন সচেতন নাগরিকরা। তাদের প্রশ্ন রেলপথে আর কতো প্রাণ ঝরলে নেয়া হবে কার্যকর উদ্যোগ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ বলছে, আইন অনুযায়ী রেললাইন ছাড়াও লাইনের দুই পাশে মোট ২০ ফুটের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় নির্দিষ্ট লোক ছাড়া কেউ এমনকি গবাদিপশুরও প্রবেশ নিষিদ্ধ। ওই সীমানার মধ্যে কাউকে পাওয়া গেলে তাকে গ্রেফতার করার বিধান আছে । তবে সে বিধান কেবল কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিদর্শক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, নিয়ম হলো রেলের উপর গেট নেয়ার সময় ১০ বছরের অগ্রিম টাকা দিয়ে গেট নিতে হয়, কিন্তু যারা গেট নিয়েছে তারা তা না করে উল্টো রেল কেই অনেকটা বিপদগ্রস্ত করে ফেলেছে। আমাদের লোকবল অত্যন্ত লিমিটেড। ফলে ইচ্ছা থাকলেও বৈধ রেলগেট গুলোতে গেটম্যান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রেলওয়ের ডি এম শহিদুল ইসলাম বলেন, রেলগেটে দুর্ঘটনা রোধে সরকার ইতোমধ্যে অটো মেশিন বসানোর পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটি করা গেলে ট্রেন রেল ক্রসিংয়ে আসার পূর্বেই পথচারীরা সিগন্যাল পাবে ফলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন