প্রায় পৌনে একশ’ বছরের প্রাচীন দেশের প্রথম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলামে অনলাইন চালু হয়েছে। শেয়ারবাজারে লেনদেনের মতো এখন থেকে অনলাইনে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী কৃষিজ-শিল্প পণ্য চা বিকিকিনি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। অদূর ভবিষ্যতে চায়ের বাণিজ্য পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনে উন্নীত হবে। বিশেষত করোনাকালে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে চা পানের চাহিদা বেড়ে গেছে।
দেশে প্রথম ও পরীক্ষামূলক অনলাইনে চা বিপণন কার্যক্রমে ১২ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে। সোমবার বন্দরনগরীর আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্রে চলতি চা নিলাম বর্ষের (২০২০-২১) সর্বশেষ ৪২তম নিলামের আংশিক কার্যক্রম অনলাইন ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ চা শিল্প, উৎপাদক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী টি লিমিটেডে প্রতিকেজি ৩১২ টাকা দরে প্রথম লট কিনেছে। নিলামে ন্যাশনাল ব্রোকার্সের মাধ্যমে ইস্পাহানী মির্জাপুর বাগানের চা প্রথম বিক্রি হয়। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ২৫ জন বিডার অনলাইন নিলামে অংশগ্রহণ করেন।
চা বোর্ড ও বিপণনকারীরা জানান, এবারে সূচিত পরীক্ষামূলক অনলাইন নিলামের ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২১-২২ চা নিলাম বর্ষের শুরু থেকেই অনলাইনে চা নিলাম কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রথমদিকে পরীক্ষামূলক অনলাইন চা বিপণন কার্যক্রমের ত্রæটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করেই এর ভিত্তিতে আসছে চা নিলাম বর্ষেই শতভাগ অনলাইনে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা আশাবাদী।
দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বিডাররা অনলাইনে ঘরে বসে সহজেই চা বিপণনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এরফলে কমেছে নানামুখী জটিলতা-দীর্ঘসূত্রতা। করোনাকালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। আসবে চা বিপণনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
চা বোর্ডের সদস্য (অর্থ ও বাণিজ্য) ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী অনলাইন চা নিলামের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম উদ্বোধনকালে বলেন, অনলাইনে চা নিলাম দেশের চা নিলাম-বিপণন কার্যক্রমকে গতিশীল করবে। কোভিড পরিস্থিতিতে চায়ের বাণিজ্যে গতিসঞ্চার হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের এই বছরে অনলাইন চা নিলাম দেশের চা শিল্পের ইতিহাসে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
চা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিটিএবি) দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষামূলক অনলাইন চা নিলাম কার্যক্রম চালুতে সক্ষম হয়েছে। এ সময় টিটিএবি সভাপতি শাহ মঈনুদ্দীন হাসান, চা বোর্ডের বিপণন কর্মকর্তা আহসান হাবিবসহ ব্রোকার প্রতিনিধি ও চা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরে প্রায় পৌনে ৬ কোটি কেজি, গেল বছরে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও সর্ব-উত্তর জনপদের পঞ্চগড় জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চায়ের আবাদ ও উৎপাদন প্রসার ঘটছে। দেশে চা শিল্প-বাণিজ্য খাতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজার। এটি শ্রমনিবিড় কৃষিজ-শিল্পের সুপ্রাচীন খাত।
তবে চায়ের আবাদ-উৎপাদনের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক দেশের অতীতের রফতানি বাজার লুপ্তপ্রায়। তাছাড়া চায়ের রঙ-ঘ্রাণ-স্বাদের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ এখনও অপ্রতুল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন