বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চলতি অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা ঋণ ছাড়াও এসএমই ও কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রকল্পে আরো প্রায় ৮০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে। এছাড়া কোভিড-১৯’এ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের ৪% সুদে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচী ও মুজিব জন্ম শতবর্ষ ঋন কার্যক্রমের আওতায় কৃষি ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা ঋন বিতরন করেছে। ব্যাংকটি দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতেও প্রায় ৯০ কোটি টাকা ঋণ বিতরন করেছে চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে।
কৃষি ব্যাংক এই প্রথমবারের মত বরিশালে অনলাইনে কৃষি ঋন আবেদনপত্র গ্রহন শুরু করেছে। ফলে কোন দালাল বা মধ্য সত্বভোগী ছাড়াই যেকোন কৃষক ঋন গ্রহন করতে পারছেন। এলক্ষ্যে বরিশাল জেলার ৮৫টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত ডাটা সেন্টারের কর্মীদের প্রশিক্ষনও প্রদান করেছে ব্যাংকটি। ফলে কৃষকরা স্ব স্ব ইাউনিয়ন পরিষদ অফিসের ডাটা সেন্টারে গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র ও জমির খতিয়ান দিয়ে কোন ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়াই অনলাইনে কৃষি ঋনের আবেদন করতে পারছেন।
গত ২০ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটি দক্ষিনাঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় তার ১০৯টি পল্লী শাখা ও ২০টি আরবান শাখার মাধ্যমে প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা ঋন বিতরন করতে সক্ষম হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার প্রায় ৬০%। পাশাপাশি ব্যাংকটির লোকশানী শাখার সংখ্যা গত অর্থ বছরের জুনের ৬৪ থেকে ৫৫-তে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। চলতি অর্র্থ বছরের শেষে লাভজনক শাখার সংখ্যা ৮০-তে উন্নীত করার লক্ষে কাজ করছেন কতৃপক্ষ। এমনকি ব্যাংকটির বকেয়া ঋন আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বিগত অর্থ বছরের ৬৮৭.৩৮ কোটি থেকে চলতি অর্থ বছরে ৬৯২.৫৪ কোটিতে উন্নীত করা হলেও ২০ মার্চ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৫% বা সাড়ে ৪শ কোটি টাকা আদায় সম্ভব হয়েছে বলেও জানা গেছে। গত বছর একই সময়ে আদায়ের পরিমান ছিল ৪২৯ কোটি টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৬২%। চলতি অর্থ বছরে এ পর্যন্ত কৃষি ব্যাংক বরিশাল বিভাগে নতুন প্রায় ৪৮ হাজার গ্রহিতাকে ঋন প্রদান করায় ব্যাংকটির মোট ঋন গ্রহীতার সংখ্যা দাড়িয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজারের মত। দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রয়ত্ব এ বিশেষায়িত ব্যাংকটির আমনত স্থিতি বর্তমানে প্রায় ১৮ শ কোটি টাকা।
এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ব্যাংক সাম্প্রতিককালে বৈদেশিক রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি করতেও সক্ষম হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে কর্মরত দক্ষিণাঞ্চলের রেমিট্যান্স যোদ্ধাগন প্রায় ১১৪ কোটি টাকা প্রেরন করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া রাষ্ট্রয়ত্ব বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি দক্ষিণাঞ্চলে তার শাখাগুালোত ত্রৈমাসিক মুনফা ভিত্তিক সঞ্চয় প্রকল্প, ডবল প্রফিট স্কিম, মিলিনিয়াম স্কিম, মাসিক ডিপোজিট স্কিম, লাখপতি স্কিম ও মাসিক মুনফা স্কিমের প্রায় ১৪ হাজার নতুন হিসেব চালু করতে সক্ষম হয়েছ।
ব্যাংকটি ‘কোভিড-১৯ এর প্রাদূর্ভাব নিরসনে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন ঋন প্রণোদনার আওতায় ৪৪৫ কোটি টাকা ঋন প্রদান করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ। মাত্র ৪ ভাগ সুদে কৃষিÑশষ্য ও ক্ষুদ্র ব্যাবসা সহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি ভিত্তিক কাজে এ ঋন বিতরন করা হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সরকারের ৫% ভতর্’কি অর্থে দক্ষিণাঞ্চলে এসব ঋন প্রদান করেছে কৃষি ব্যাংক। এর বাইরেও কৃষি ব্যাংকের নিজস্ব ৩শ কোটি টাকার তহবিল থেকে ‘মুজিব জন্ম শতবার্ষিকী ঋন বিতরন কার্যক্রম’এর আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় আরো প্রায় ৩৭ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋন বিতরন করা হয়েছে।
তবে রাষ্ট্রয়ত্ব বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি মারাত্মক জনবল সংকটে এখন নুহ্যমান। লোকবলের অভাবে পল্লী এলাকার বেশীরভাগ শাখার কার্যক্রমই ব্যাহত হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলার ১২৯টি শাখা সহ বিভাগীয় ও আঞ্চলিক অফিসগুলোর জন্য মঞ্জুরীকৃত প্রায় সাড়ে ১৬শ জনবলের মধ্যে বর্তমান কর্মরত আছেন মাত্র সাড়ে ৯শর মত।
সার্বিক বিষয় নিয়ে ব্যাংকটির বরিশাল বিভাগীয় জিএম মোহম্মদ সালাহ উদ্দীন রাজিব-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা চেষ্টা করছি কৃষি ব্যাংককে জনগনের আরো কাছে নিয়ে যেতে। কৃষকদের হয়রানী মূক্ত সেবা প্রদানের লক্ষে কৃিষ ব্যাংকের প্রতিটি শাখা সহ আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিসে যে কেউ অভিযোগ করতে পারেন। যে কোন অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও জানান তিনি। জনবল সংকটের বিষয়টি সদর দপ্তর অবগত আছে বলে জানিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন