পটুয়াখালীর লেবুখালী নদীতে নির্মাণাধীন পায়রা সেতুর দুই প্রান্তের সংযুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের অবসান হলো। গত মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে সেতুর পটুয়াখালী ও বরিশাল প্রান্তের অসমাপ্ত ৪ মিটার কাজের কংক্রিট কাস্টিংয়ের কাজ শুরু করে সেতু কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল ৫টা ৫৬ মিনিটে কাস্টিং কাজ সমাপ্তির মধ্য দিয়ে যুক্ত হয় দুই প্রান্ত।
পায়রা সেতু প্রকল্পের উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান জানান, পায়রা সেতুর পটুয়াখালী ও বরিশাল প্রান্তের মূল ১৪৭০ মিটার সংযুক্তির মাধ্যমে সেতুর কাজের আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। বর্তমানে পটুয়াখালী ও বরিশাল প্রান্তের এ সংযুক্তির মাধ্যমে মূল সেতুর ৬৩০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হলো। এর মাধ্যমে মূল সেতুর ৯৩ ভাগ কাজ শেষ হলো।
২০১২ সালে ৮ মে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের পায়রা সেতুর জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। ৪১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাল ধরা হয় ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা কুয়েত ফান্ড থেকে ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ এবং সরকারের নিজস্ব ৭৭ কোটি ৩ লাখ। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রতিশ্রæত প্রকল্প হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেবুখালী নদীতে পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তিতে বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় ২০১৫ সালে প্রাক্কলন বাড়িয়ে ৪১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল কুয়েত ফান্ড ফর ইকোনমিক ডেভোলপমেন্ট কেএফএইডি ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) এর যৌথ অর্থায়নে ১১৭০.০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লংজিন রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে পূর্ত কাজ শুরু হয়। দেশের দ্বিতীয় এক্সট্রা ডোজড ক্যাবল স্টেইড ১৪৭০ মিটার দীর্ঘ, চারলেন বিশিষ্ট ফুটপাথসহ ১৯.৭৬ মিটার প্রশস্থতা সম্পন্ন সেতুটির মূল সেতুর ৪টি স্প্যানসহ ৩২টি স্প্যানের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সবচেয়ে দীর্ঘতম ২০০ মিটার স্প্যান ও ১৩০ মিটার পাইলের গভীরতা সম্পন্ন ভায়াডাক্ট সেতুর ২৬৬টি পাইল এবং ২৬টি পাইল ক্যাপের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের ৬৩০ মিটার বক্স-গার্ডারের পুরো কাজই সম্পন্ন হয়েছে।
খরস্রোতা পায়রা নদীর ভাঙন থেকে নদী তীর রক্ষা কাজের জন্য কাজের জন্য হাইড্রোলজিক্যাল স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে সিসি বøক ও জিওব্যাগের ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পর চলমান ফেরিঘাটের নদী শাসনের কাজ শেষ করা হবে। ইতোমধ্যে নদী শাসনের কাজ ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম।
তিনি আরো জানান, প্রথমবারের মতো কোন সেতুতে ব্রিজ স্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম চালুসহ ভ‚মিকম্প নিরোধক যন্ত্রাদি সংযোজন করা হচ্ছে এ সেতুতে। এছাড়াও সেতু সংলগ্ন নদীর পাড়ে সুন্দর একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক করা হবে। এ সেতুর মূল প্রাক্কলিত ব্যয় ১৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৬৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা সরকারের ও কুয়েতের ১০৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২২ থাকলেও সেতু কর্তৃপক্ষ আশা করছে চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে মূল সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অন্যান্য কাজও সমাপ্ত হবে।
পায়রা সেতুর নির্মাণ সমাপ্তির মধ্য দিয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ একধাপ এগিয়ে যাবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম বাড়বে। এছাড়া এ অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন ও বাজারজাতকরণে সহজ হবে। যা এ অঞ্চলের জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন