খুলছে স্বপ্নের পায়রা সেতু। পটুয়াখালীর বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ। এখন শেষ মুহূর্তে চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। আগামী মাসেই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পায়রা সেতু খুব শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে। আগামী মাসে এ সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সেতুমন্ত্রী বলেন, পায়রা বা লেবুখালি সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলে মানুষের জন্য আরেকটি পদ্মা সেতুর মতো। গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি তিন জেলার ১১টি সেতু উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকায় নির্মিত পায়রা সেতুটি প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ। সওজ সূত্র জানায়, সেতুটি চালুর জন্য দিন-রাত কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে সেতুর শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। সেতটিু চালুর খবরে খুশি স্থানীয়রা। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এ সেতু খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশের সর্ব দক্ষিণে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে, যা বর্তমান সরকারের একটি নতুন মাইলফলক।
পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল হালিম জানান, বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ৩৯ কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর ‘লেবুখালী পায়রা সেতু’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে উপকূলের ৫০ লাখ মানুষের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। ইতোমধ্যে ৩১টি পিয়ারে সেতুটির সড়কবাতি স্থাপনসহ সম্পূর্ণ সেতু এখন দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুটি যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে পটুয়াখালী-বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্টি হবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। খুলে যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সম্ভাবনার দ্বার।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। এটি চার লেনবিশিষ্ট সেতু। নদীর উভয় প্রান্তে মোট ১ হাজার ২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, টোলপ্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ইলেকট্রিফিকেশনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও শেষের পথে। সওজ বিভাগ বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল জানান, নৌপথ সচল রাখার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার কথা বিবেচনা করে পায়রা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে এক্সট্রা ডোজ কেবল স্টেট পদ্ধতিতে। এটি নির্মাণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর আদলে নান্দনিক নকশায়। পায়রা সেতু বরিশালের সবচেয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং আকর্ষণীয়। তিনি জানান, ২০০ মিটার করে দেশের দীর্ঘতম দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে পায়রা সেতুতে। নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশের সর্ববৃহৎ। বিদ্যুতের আলোয় রাতে নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হবে পায়রা সেতুতে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। বরিশালের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (কেএফএইডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওএফআইডি) যৌথ অর্থায়নে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড। কার্যাদেশে সেতু নির্মাণে ৩৩ মাস সময় বেঁধে দেয়া হলেও দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তার পরও নির্ধারিত সময়ের আগেই যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
এদিকে শিগগিরি পায়রা সেতু উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এ সেতু চালুর মধ্য দিয়ে লেবুখালী ফেরিঘাটে হয়রানি ও ভোগান্তির অবসান হবে আশা পরিবহন শ্রমিকসহ যাত্রীদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন