অনুক‚ল আবহাওয়া ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ তেমন না থাকায় মৌলভীবাজারের হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে মাঠ থেকে কৃষকরা হাসি মুখে পাকা বোরো ধান বাড়িতে তুলছেন। কৃষি বিভাগ বলছে গেল মৌসুমে ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় ২৮১৫ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। তবে আগাম বন্যা ও ঝড়-বৃষ্টিসহ চলমান করোনাভাইরাসে শ্রমিক সঙ্কটে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। হাওর এলাকায় কৃষকদের উৎসাহ যোগাতে রাজনগর উপজেলার সুনাটিকি গ্রামে ধান কাটার উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারীসহ কৃষি বিভাগের অন্যন্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষক।
অপর দিকে কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী প্রতিদিন কৃষকদের ধান কর্তনে উৎসাহ যোগাতে জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেরাচ্ছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের মানিক হাওরে কম্বাইন্ড হারভেষ্টারে ধান কর্তন পরিদর্শনে যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কান্তি দত্তসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষক।
দেশের অন্যতম প্রধান হাওর হাকালুকিসহ অন্যান্য হাওরে একযোগে মাঠ থেকে পাকা বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়া ও নতুন ধানের মৌ- মৌ গন্ধে যেন মুখরিত চারপাশ। কৃষকরা মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করে অনেকেই মাঠে অথবা রাস্তার পাশে সেরে নিচ্ছেন মাড়াই কাজ। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন থাকায় রয়েছে কিছুটা শ্রমিক সঙ্কট। এতে করে অতিরিক্ত মজুরী দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। গেল মৌসুমে ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় বোরো আবাদের জমির পরিমান কৃষকরা বৃদ্ধি করেছেন। তবে তারা হাইব্রিড ধানের বীজসহ বালাই নাশকের ন্যায্য মূল্যে দাবি করেন।
ভুকশিমইল এলাকার কৃষক বারিক মিয়া জানান, গেল মৌসুমে ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় বোরো আবাদের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগান। মূল্য ভালো পাওয়ায় এ বছর ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলনও তার জমিতে ভালো হওয়ায় খুশিতে ধান কাটছেন নিজের জমিতে।
হাকালুকি হাওরের মীরশঙ্কর গ্রামের রমজান আলী জানান, ব্রি-ধান ২৯, ৮৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছেন ১৭ বিগা জমিতে। এ বছর পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন ভলো হয়েছে। ৪ বিঘা জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি ও আগাম বন্যার না হলে অবশিষ্ট জমির ধান কাটতে আরও ১০-১২ দিন সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন হাইব্রিড ধানের ফলন ভালো হয়। কিন্তু বীজের মূল্য অত্যাধিক যা প্রতি কেজি কিনতে হয়েছে তার ৪০০ টাকায়। পাশাপাশি সরকারি বিএডিসির ১০ কেজি বীজ মিলে ৪০০ টাকায়। এ ছাড়াও বালাইনাশক ঔষধের দামও অনেক বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে বছর বোরো আবাদ হয়েছে জেলায় ৫৬৩৪৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে ২৮১৫ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এছাড়াও গেল আমন ধানের চাষ হয়েছে জেলায় ১ লক্ষ ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। গেল বছর (২০২০ সাল) আউস ধানের আবাদ হয়েছে ৫৫৪৪০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর আউস এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬৫৯৩ হেক্টর জমি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন