শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনোদন প্রতিদিন

তপনের সুখের আকাশ

প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফজলে রাব্বী দ্বীন
সামনে আসছে ঈদ। সেই আনন্দে তপনের চোখে ঘুম নেই। সারাদিন শুধু বাড়ির সবাইকে তোতা পাখির মত বকবক করে জ্বালাতে থাকে। প্রশ্ন করতে করতে অস্থির করে তোলে সবাইকে। তাও আবার যেমন তেমন প্রশ্ন নয়। সকাল বেলা মাকে গিয়ে বলছে-‘এখনও চাঁদ উঠছে না কেন? আপু বলেছে সন্ধ্যার সময় চাঁদ দেখা যায়। কিন্তু দিনের বেলায় কেন উঠে না এটা বলেনি। তাহলে চাঁদ কি দিনের বেলা ঘুমায়। নাকি দিনের আলো দেখে ভয় পায়?’
পরের উত্তরগুলো না দিয়ে শুধু প্রথমটার ক্ষেত্রে মা বলল, ‘চাঁদ তো ঈদের আগের দিন উঠবে তপন। তুমি কি এটা জান না বুঝি!’
‘তাহলে বছরে অনেক রাতেই তো চাঁদ দেখতে পাই তাহলে তার পরদিন কেন ঈদ হয় না?’
মায়ের মুখ স্তব্ধ না করা পর্যন্ত তপন ছাড়ে না। আবার বাবার কাছে গিয়ে আরেকটা প্রশ্ন-‘চাঁদটা কেন ঈদের আগের রাতেই উঠে? সারা মাস কেন আসল না? তার কি জীবন আছে নাকি? নাকি হাতে আমার মত হাতঘড়ি পড়ে ও? সেটা দেখে দেখে সময় করে খালি সন্ধ্যার সময় আসে। তাও আবার ঈদের খবর জানিয়ে। আচ্ছা ছোট্ট ঐ জিনিসটার এত তেজ কেন?  সবাই তার আশায় বসে থাকে। অথচ আমার জন্যও তো কেউ বসে থাকে না।’
প্রশ্ন শুনে বাবার যখন আর জবাব দেওয়ার মত কিছু থাকে না তখন তপন আর বাবার কাছে বসে থাকে না। ‘বুদ্ধু ছেলে’ বলে স্থান ত্যাগ করে সে। বুদ্ধু কথাটা এসেছে দাদুর মুখ থেকে। দাদু তাকে বলেছে ছোটবেলায় বাবা নাকি স্কুলে খালি দেরী করে যেত। দেরী করার কারণটা হয়ত আজও কেউ জানে না। তবুও যতটুকু অনুমান করা যায় আর কি তা হল, সময় মত স্কুলে গেলে লাভের থেকে লোকশানই হত বেশি। এই লাভ লোকশান কিন্তু টাকার ব্যাপারে না। স্যারের হাতে মার খাওয়ার ব্যাপারে। প্রতিদিন ঠিক সময়ে স্কুলে গেলে ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই বেশ কিছুক্ষণ সময় পাওয়া যায়। সেই সময়টুকুতে তো আর ক্লাসের ভিতর চুপটি করে বসে থাকা যায় না। যেহেতু একটু চঞ্চল টাইপের ছেলে বলে কথা! মিছিমিছি যেকোন কারণেই হোক আর নাইবা হোক ছাত্রদের সাথে ঘুষাঘুষি আর শার্ট ছিড়ে ফেলা, মুখের কয়েক জায়গায় নখের চিমটি খাওয়া, দেওয়ার দাগ, আর চামড়া ছিঁড়ে ফেলে রক্ত বের করার মত অসংখ্য ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে যেত। যার জন্য গুবরধণ স্যারের হাতে লাঠিদোলাই আর কান ধরে এক পায়ে দাড়িয়ে রোদের দিকে মুুখ করে থাকা এসব আর ব্যাপার মনে হত না তপনের বাবার কাছে। অহরহ এমন শাস্তির একটিও যদি কোনদিন বাদ পড়ে যেত সেদিন আর ভালমত স্কুল করা হত না। কিন্তু তার বাবার ভয় ছিল একটিমাত্র জায়গায়। আর সেটা হচ্ছে দাদু। গুবরধণ স্যার সরাসরি দাদুকে খবর দিত এসমস্ত কীর্তিকলাপের ব্যাখ্যা জানিয়ে। ব্যাস্ বাবার বেজে যেত বারটা। সেই জন্যই স্কুলে দেরী করে যেত। কেননা স্কুলে দেরী করে গেলে তো আর ক্লাস শুরুর আগেই সেই সমস্ত উদ্ভট কা-গুলা হত না, তাই। তবে দেরী করে স্কুলে যাওয়ার অপরাধে অবশ্য কয়েকটা করে বেতের বারি আর মাফ হত না তবুও এই খবরটা তো আর দাদুর কাছে পৌঁছাত না, তাতেই তপনের বাবা অনেক খুশি। অনেক অনেক খুশি। এতটা খুশি যে এসব কথা বলতে গেলে এখনও মুখের কথা কেড়ে নিয়ে নিজেই বলতে শুরু করে।
তপন এবার দাদুর কাছে ছুটে। গিয়েই আরেকটা প্রশ্ন। ‘আচ্ছা দাদু, বুদ্ধু ছেলেটা সবসময় আমাকে কেন শাসন করতে চায়? আমি কি কম বুদ্ধিমান নাকি? প্রথম শ্রেণীতেই ফ্রার্স্ট হয়েছি। সুন্দর দামী একটা মেডেলও পেয়েছি। তারপরেও আমাকে সারাদিন পড়ার কথা বলে। আমি কি বাবার থেকে কম পড়া জানি নাকি? বাবা আগে সবসময় পড়ার জন্য মার খেত স্কুলে গিয়ে। আর আমি ঠিক তার উল্টো। এই জীবনে কখনও মার খেয়েছি সেকথা কখনও মনেই করতে পারিনা। আর তুমি কেন এখনও আগের মত লাঠি দিয়ে বাবাকে দৌড়ানি দিতে পার না? আজ প্রমিজ কর, বাবা অফিস থেকে আসলেই লাঠি দিয়ে দৌড়ানি দিবে, কেমন?’
মিষ্টি দুষ্টু আর চঞ্চলা তপনের মুখ থেকে মিষ্টি মিষ্টি কথার রকম শুনে দাদু কি বলবে ভেবে পায় না। শুধু হাসে আর অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে তপনের দিকে। তপনও দাদুর এক তাকিয়ে থাকার রহস্যটা খুঁজে পায় না। তাই সে আর অপেক্ষা করেনা তার উত্তরের। দাদুকেও বাবার মত শক্ত করে বুদ্ধু উপাদিটা দিয়ে পা বাড়ায় দিদির কাছে। [অসমাপ্ত]

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন