বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আসর

তপনের সুখের আকাশ

প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফ জ লে রা ব্বী দ্বী ন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
‘আচ্ছা দিদি, ঈদ কি শুধু বড়লোকদের জন্য?’
‘ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ হচ্ছে সবার জন্য। এটা কারও একার নয়। দুনিয়ার সকল মুমিন মুসলমানরা একসাথে এই ঈদের দিনটিকে উৎযাপন করে। তাই সবাই নিজেদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেয় সবার সাথে।’
‘ঈদের আনন্দ সবার জন্য হলে পাশের বাড়ির ঐ রকিব ছেলেটা ঈদের দিনে কান্না করে কেন? তার তো কোন জামা কাপড়ও নেই। ঠিকমত খেতেও পারেনা। সারা বছর কি যে কষ্টে থাকে! তাহলে ঈদের দিনটা আনন্দের হল কিভাবে? তাহলে কি-ধনীদের জন্য ঈদ আর গরীবদের জন্য ঈদ নয়? এটাই হবে?’
দিদির চোখে নিস্তব্ধ দুনিয়া। আকাশে উড়ে যাওয়া পাখিগুলো যেন লজ্জায় মুখ ঢাকে। কারও মুখে কিচিরমিচির নেই। কে বুঝাবে এসব প্রশ্নের উত্তর! আর কেইবা পারবে তপনের মত এমন প্রশ্ন করতে? তবুও দিদি আড়ালে কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখটা মুছে তপনকে বলল, ‘চল্ দাদুভাই, তোরে নিয়ে ছাদে যাই। তারপর সব বুঝতে পারবি।’
ছাদে যাওয়ার কথা শুনে চমকে উঠল তপন। দিদি এমনিতেই নড়বড়ে। ঠিকমত কথাই বলতে পারেনা। সবসময় হাত পা কাঁপে। তার উপর আবার হাতে লাঠি দিয়ে ভর করে চলে। কেন যে ছাদে যেতে চাচ্ছে? রাগ করেই বলছে নাতো? কিছুই বুঝে আড়ছে না।
কেমন করে উঠবে-প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না দিদি। তিন তলা বাড়ির ছাদ। তপনকে ধরে ধরে অতি কষ্টে দিদি ঠিক উঠতে পারল ছাদে। তপন সাধারণত এই সময়টাই ছাদে আসে না। কেমন যেন ভয় ভয় লাগে তার, তাই। দিদি তপনকে নিয়ে ছাদের এক কোণায় এসে দাড়াল। বাড়ির ছাদে প্রচ- বাতাস। বেশ ভালো লাগছে। সারি সারি অনেকগুলো ফুলের টব রয়েছে ছাদের একপাশ জুড়ে। গোলাপের সুন্দর টুকটুকে মুখটা আরও টুকটুক করছে। বেলী ফুলের গাছটা আজ যেন কিছু বলতে চায়। কিন্তু বলতে পারছে না। কারণ তপনের খেয়াল হঠাৎ সেইদিকে নেই। কেমন যেন অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। দিদি তপনকে একেবারে নিকটে আসার জন্য ডাকল। তারপর হাত নেড়ে তপনকে বলল, ‘ঐ যে দূরে বটগাছটার নিচে ভালভাবে তাকিয়ে দেখ্তো ওখানে কে কি করছে?’
তপন দিদির কথামত সেদিকেই লক্ষটা স্থির করল। তাকিয়েই তার বিস্ময়ের যেন শেষ হচ্ছিল না। সে দেখতে পেল তার বাবাকে। অনেকগুলো ছোট ছোট গরীব ছেলেমেয়েদের হাতে একটা করে ব্যাগ। দিদি বলল, ঐসব ব্যাগের ভিতর ঈদের জন্য নতুন জামা কাপড়। প্রতি বছর বেতনের সব টাকা দিয়ে গরীব ছেলেমেয়েদের জন্য...
তপন আর কিছু শুনতে পায় না। দিদির জন্যই আজ সে সত্যিকারের একটা চিত্র দেখতে পেল। তার মনে আর কোন ঈদ বিষয়ক প্রশ্ন নেই। সব উত্তর সে পেয়ে গেছে এক মুহূর্তেই। ছোটবেলার সেই দেরী করে স্কুলে যাওয়া বুদ্ধু ছেলেটাই আজ তার আনন্দ অশ্রুর কারণ। বাবার জন্য গর্ব হচ্ছে তার। তপন এক দৌড়ে ছাঁদ থেকে নেমে পড়ল। কোন কথাই আর বলল না। দিদির অনেক থেমে থাকা প্রশ্নের কোন উত্তরও দিল না। উপায় না দেখে দিদি একা একাই ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ তপন বাড়ি থেকে বের হয় গেল। ছাদ থেকে নিচের দিকের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দিদি দেখতে পেল এক দৌড়ে সেই বটগাছের দিকেই সে ছুটছে। তার হাতে উপহার পাওয়া দুইটা নতুন ড্রেস আর হাতে সেই একজোড়া নতুন জুতার ব্যাগ। সমাপ্ত

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন