শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে কর্মসংস্থান

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার

মহামারি করোনার কারণে আগামী (২০২১-২২) বাজেটে জিডিপিকে গুরুত্ব না দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নতুন এ বাজেট। থাকছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল। এমনকি আগে চেয়ে আরো বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার। পাশাপাশি করোনায় কর্মহীন মানুষের জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তাও একটি বড় কাজ। যতোদিন কর্মের ব্যবস্থা না হচ্ছে ততোদিন অন্তত তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা থাকবে বাজেটে। একইসঙ্গে সরকারের চলমান কর্মকান্ড বিশেষ করে মেগা প্রকল্পের কাজে অর্থায়ন অব্যাহত রাখাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে শিল্পে প্রণোদনার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে হচ্ছে সরকারকে। আগামী অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

নতুন বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য বাজেটে জায়গা করে দেবো। সরকারের আগামী বাজেট দরিদ্রদের জন্য নিবেদিত থাকবে।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের জন্য প্রস্তুত অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম মুস্তফা কামাল। আগামী ৩ জুন বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি। পরের দিন শুক্রবার ৪ জুন বাজেটত্তোর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন অর্থমন্ত্রী। তখন বাজেটের খুঁটিনাটি নিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেবেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছরও এই সংবাদ সম্মেলন হবে ভার্চুয়ালি। এটি হবে শেখ হাসিনা সরকারের বর্তমান মেয়াদের তৃতীয় বাজেট। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালেরও তৃতীয় বাজেট এটি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থাকছে এবার। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার আরো বাড়ছে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। কারণ বহু দিন উৎপাদনের চাকা ঘোরেনি। নিম্নআয়ের মানুষ জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম ভোগান্তি মোকাবিলা করছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এসএমই খাতে আরো অর্থায়ন করা হবে, কারণ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারের।

আগামী বাজেট বিষয়ে পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজেটে করোনার টিকাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ লক্ষ্যে বাজেটে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ রাখতে হবে।
বাজেট বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের জন্য বাজেট প্রণয়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ, রাজস্ব আহরণে কৌশল নির্ধারণের চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বাস্তবায়ন। বাজেট করলেই হবে না। অর্থ বরাদ্দ দিলেই চলবে না। বাস্তবায়নের সক্ষমতা থাকতে হবে। অনেক সময় টাকা ফেরত যায়। এটিও প্রতিবছরের চিত্র বলে মনে করেন তারা।
বিশ্লেষকরা আরো জানান, উপস্থাপিত বাজেটে খাতভিত্তিক বরাদ্দ দিয়ে বাহবা নেওয়ার কিছু নেই। বরাদ্দকৃত অর্থ খরচের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তারা আরো মনে করেন, এ বছরও গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সেই বরাদ্দ যেন চলতি অর্থবছরের মতো অব্যবহৃত না থাকে। টাকা যেন ব্যবহার করা হয়, খরচ হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনা মোকাবিলার লক্ষ্যে তৈরি করা নতুন অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮০ কোটি টাকার কম বেশি। বরাবরের মতো নতুন অর্থবছরের বাজেটেও (প্রস্তাবিত) ঘাটতি দাঁড়াতে পারে দুই লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাতামাতি হবে না। লক্ষ্যমাত্রা ঘুরে ফিরে সাত শতাংশের ঘরেই রাখছেন বলে জানা গেছে। মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার চেষ্টা চলবে পাঁচের ঘরে। সূত্রমতে পাঁচ শতাংশ ঘাটতি রেখেই চলছে বাজেট তৈরির কাজ। ঘাটতি অর্থায়নের প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহ করার টার্গেট করা হচ্ছে। ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার আশা করছে সরকার। যা ঘাটতি অর্থায়নে সহায়ক হতে পারে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে আয় করার লক্ষ ঠিক করা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেট প্রসঙ্গে বিআইডিএস’র গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ জানিয়েছেন, ২০২০-২১-এর মতো আগামী অর্থবছরও হবে করোনার ক্ষতি যতোটা সম্ভব কমানো এবং সে ক্ষতি উত্তরণ করে উন্নয়নের পুরনো গতিধারায় ফেরাতে চ্যালেঞ্জের বছর। সে কারণেই নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একটি বিশেষ তহবিল রাখা যেতে পারে, যাতে করোনা নিয়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে বাজেটে। এ ক্ষেত্রে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি নগদ সহায়তা দেওয়ার জন্য অর্থের সংকুলান করতে হবে।

ড. নাজনীন আরো জানান, সরকারের যেসব প্রকল্পে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, সেগুলোর বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখে বরাদ্দ দিতে হবে। করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ টাকা করা যেতে পারে। করপোরেট করও কমাতে হবে। আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় সহজ করতে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে তামাকপণ্যের জন্য নির্ধারিত সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর আকারে আরোপ করা যেতে পারে। বিলাসপণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

বেসরকারি গবেবষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি’র ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় ১২ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে আসছে। কিন্তু এর ফলে নিরুৎসাহিত হয়ে কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, তা হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আগামী তিন বছরে কোম্পানির করহার ধাপে ধাপে সাড়ে সাত শতাংশ কমানোর কথা বলেছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। এটি কমানোর পর যে করহার হবে, তাও বৈশ্বিক গড় করপোরেট হারের তুলনায় বেশি বলে জানান তিনি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন