বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন দুর্যোগ বজ্রপাত

দেড় মাসে দেশে ১৬৭ জনের মৃত্যু প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয় : ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম প্রাক-সতর্কীকরণ ও বজ্রপাত নিরোধক স্থাপন করতে হবে : ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

বজ্রপাতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। প্রতিবছর বৃষ্টির মৌসুমে (কাল বৈশাখি) বজ্রপাত বেশি হয়। চলতি বছরেও দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু ও আহতের ঘটনা বাড়ছে। তাপমাত্রা ও বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, প্রচুর মোবাইল ফোন ব্যবহার ও এর রেডিয়েশন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, নদী নালা ভরাট ও নদী দখলসহ নানা কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে।

বজ্রপাত বাড়ার সঙ্গে বিশ্বময় তাপমাত্রা পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বজ্রপাত বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হওয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল রহমান বজ্রপাত নিয়ে সরকারের কর্মকাণ্ড ও দিকনির্দেশনা তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
দেশে গত মাস থেকে প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত দেড় মাসে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১৬৭ জনের। এর মধ্যে এপ্রিলে ১১০ জন ও চলতি মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত ৫৭ জন মারা গেছে। দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আন্তর্জাতিক গবেষণামতে, আমাদের প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয়। বাংলাদেশ পৃথিবীর বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ঝুঁঁকিপূর্ণ দেশ। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।
ডিজাস্টার ফোরামের সমন্বয়কারী মেহেরুন নেসা জানান, বাংলাদেশে গত দেড় মাসে বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা গেছেন সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং গাইবান্ধা জেলায়। আর বিভাগের হিসাবে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে সিলেটে। বজ্রপাতে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই খোলা মাঠে কাজ করছিলেন বা মাছ ধরছিলেন। কালবৈশাখীর কারণে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে এপ্রিল ও মে মাসে। বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ বলেও ডিজাস্টার ফোরামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ডিজাস্টার ফোরামের প্রতিবেদন মতে, বজ্রপাতের কারণে একজন মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে আশেপাশের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হিসাব। আর বজ্রপাতে আহতদের প্রায় সবাই স্থায়ীভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাওর ও বিস্তীর্ণ বিল এলাকার জেলাগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা মাঠে যারা কাজ করেন, নৌকায় বা পথঘাটে চলাচল করেন, তারাই বজ্রপাতের শিকার হন বেশি। দেশে গত কয়েক বছরে বজ্রপাতের ঘটনা ১৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। গত এক দশকে অন্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতে মৃত্যুকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমে বেড়ে যাওয়া এবং এর প্রতিকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। এই ব্যাপারে আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা) ও লাইটেনিং এরেস্টর (বজ্রপাত নিরোধক) স্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া যায়। আর এ কাজটি সরকারকে করতে হবে। পাশাপাশি মানুষকে আরও বেশি সচেতন ও সাবধান হতে হবে। কালবৈশাখীর এই সময়ে আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে, খোলা মাঠে-ঘাটে কাজ করা যাবে না। বাসাবাড়িতে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাছাড়া মাঠে-ঘাটে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগালে তা এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, এতকিছুর পরও কৃষককে ধান কাটতে মাঠে যেতে হবে। তাই বজ্রপাতের প্রকোপ কমাতে হাওর ও বিল অঞ্চলে মোবাইল ফোনের টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগিয়ে বজ্রপাতের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
মোবাইল ফোনের টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগানোর বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. সেলিম হোসেন বলেন, টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগানোর বিষয়ে সরকারিভাবেও বিবেচনা করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটি লাগানোর পরে একটি টাওয়ার মাত্র ৯০ মিটার এলাকা কাভার করবে। এর একেকটি যন্ত্রের দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা। কাভারেজ এলাকার তুলনায় এটা যথেষ্ঠ ব্যয়সাপেক্ষ। তাই পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। বর্তমানে বজ্রপাত এলাকা বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের কৃষকদের সচেতন করার পাশাপাশি সেসব এলাকায় নতুন গাছ লাগানো এবং বড় গাছ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
শওকত আকবর ২২ মে, ২০২১, ২:০৩ এএম says : 0
হে আল্লাহ তুমি তোমার আসমানী বালা থেকে আমাদের হেফাজত করো।আমরা পাহাড় পরিমান গুনাহ করে ফেলেছি।তুমি তো বলেছ বান্দা পাহাড় পরিমান গুনা করে নিরাশ হওনা তওবা করো বান্দা আমি মাফ করে দেবো।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন