রাজধানীর পল্লবীতে নিজ সন্তানের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাহিনুদ্দীনকে হত্যা মামলার অন্যতম দুই আসামি ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে মো. মনির গোয়েন্দা পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় ওই মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ নম্বর আসামি মো. মানিক র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আউয়ালকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এদিকে হত্যাকান্ডের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, নিহতের ঘাড়ে একের পর এক কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মনির। গত শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মনিবর নিহত হয়। তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল সকালে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের মিরপুর জোনাল টিমের এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের একটি জোনাল টিমের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গুরুতর আহত হয় মো. মনির। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের দু’জন সদস্য আহত হয়েছেন।
পল্লবী থানার এসআই বুলবুল বলেন, নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। নিহত মনির পল্লবীর চাঞ্চল্যকর সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে সে সরাসরি জড়িত ছিল।
গত ১৬ মে বিকেলে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দীনকে পল্লবী থানার ডি ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আকলিমা বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৭ মে পল্লবী থানায় হত্যা মামলাদায়ের করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৬ মে বিকেল ৪টার দিকে সুমন ও টিটু নামের দুই যুবক সাহিনুদ্দীনকে জমির বিরোধ মেটানো হবে জানিয়ে ফোন করে ডেকে নেয়। সাহিনুদ্দীন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে যায়। সেখান থেকে সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যায়। এ সময় সাহিনুদ্দীনের ছয় বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল।
গ্যারেজে ঢুকিয়ে সাহিনুদ্দীনকে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারা। এরপর তাকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে নিয়ে আবার কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
আকলিমার অভিযোগ, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করেছে। পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবরদখলে বাধা দেয়ায় তাকে খুন করা হয়।
মামলার প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল। অপর আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরণ আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবু। আসামিরা সবাই পল্লবী থানা এলাকার বাসিন্দা।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ভৈরব এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আউয়ালকে গ্রেফতার করে র্যাব। এছাড়া এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মো. সুমন বেপারী (৩৩) এবং মো. রকি তালুকদারকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার চার-পাঁচদিন আগে মূল পরিকল্পনাকারী নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি আউয়ালের কলাবাগান অফিসে ২ নম্বর আসামি আবু তাহের ও ৩ নম্বর আসামি সুমন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। বিষয়টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সুমনকে। সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২ জন কিলিং মিশনে অংশ নেয়।
জমি বিরোধের মীমাংসার কথা বলে আগে থেকেই সাহিনুদ্দীনকে ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়েছিল। প্রথমে সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল ও মুরাদসহ ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাহিনুদ্দীনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ঘটনার শেষ পর্যায়ে শরীরের ওপরের অংশে মনির এবং হাঁটু ও হাত-পায়ে কুপিয়ে মানিক সাহিনুদ্দীনের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
তিনজন ৪ দিনের রিমান্ডেঃ প্রকাশ্যে ছেলের সামনে সাহাবুদ্দীনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় তিনজনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন- শরীফ, টিটু ও ইকবাল। গতকাল রোববার তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদেরকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল তাদের প্রত্যেককে চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন