জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বব্যাংকের একটি ফান্ড আছে, সেই ফান্ড থেকে সরকার গত কয়েকবছরে ৭শ’ কোটি টাকা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই ফান্ড থেকে পাওয়া টাকার অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে, আর বাকী অর্ধেক ফেরত দিয়েছে। কোন কাজই করতে পারেনি। গতকাল শনিবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে সারাবিশ্বের রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন বিশ্বনেতাদের কমিটমেন্ট দরকার। বিশ্বনেতাদের পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টা করার কমিটমেন্ট। যা ইতোপূর্বে প্যারিস চুক্তিতে হয়েছিল। ঠিক একইভাবে আমাদের দেশে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষ করে সরকারে যারা থাকেন, তাদের কমিটমেন্টটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। সদ্য ঘোষিত বাজেটে পরিবেশ রক্ষায় কত রয়েছে, তা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্ব ব্যাংকের সেই ফান্ড থেকে ওরা (সরকার) টাকা পেয়েছিল গত কয়েক বছর ধরে ৭শ কোটি টাকা। সেই টাকার অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে, অর্ধেক ফেরত দিয়েছে। কাজ করতে পারে নাই। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাজেটে মেগা প্রকল্পগুলোতে অর্থ বরাদ্দের সমালোচনাও করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষকে বাঁচানো। ৬ কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। তাদেরকে যদি বাঁচাতে হয়, তাহলে তাদের কাছে ক্যাশ ট্রান্সফার করতে হবে, তাদের কাছে টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেইদিকে কোনো লক্ষ্য নেই তাদের।
পরিবেশ-প্রকৃতিকে রক্ষা মানুষকে সচেতন করে তুলতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রতিও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, প্রতিটি জেলায় ৫ হাজার করে নিম গাছ লাগাতে হবে। বিরূপ পরিস্থিতিতে বিএনপির কর্মীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বানও জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে হবে। হতাশাকে বাদ দিয়ে আশার আলোর দিকে, সামনের দিকে এগুতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অতি দ্রুত সুস্থ হবেন এবং তিনি সেই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন।
‘বৈশ্বিক দুযোর্গ: ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান এবং পরিবেশের উপর তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মদ আক্তার হোসেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের দেশে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে দুর্নীতিপরায়ন পলিসির কারণে।
ফারাক্কা চুক্তিতে ফাঁকির কারণে বাংলাদেশ প্রাপ্য পানি পাচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, ফারাক্কা চুক্তিটাই শুভংকরের ফাঁকি। ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে পানি ৪০ কিউসেক দেবে। কিন্তু পানির উৎস থেকে ফারাক্কার পয়েন্ট পর্যন্ত কয়েকশ নদী আছে। সেই নদীর উৎসমুখগুলোতে তারা গতি প্রবাহ পরিবর্তন করে দিচ্ছে। ফলে ফারাক্কা পয়েন্টে অটোমেটিক্যালি পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। ভারত তো চুক্তি অনুযায়ী মিথ্যা কথা বলেনি। তারা ফারাক্কা পয়েন্টের পানি হিসাব করে ৪০ শতাংশ দেবে। ফারাক্কায় তো কোনো পানিই আসে না, পানি আসবে না। এটাই হলো ভারতের চানক্য বুদ্ধি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ৫৪টা নদী ভারতের মধ্য দিয়ে আসে। প্রত্যেকটা নদীর ওপর ভারত অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করেছে। যার ফলে আমাদের পানির প্রাপ্যতা কমেই যাচ্ছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনে বেআইনি। এটা নিয়ে অন্য সরকার সবাই প্রতিবাদ করেছে। এখন যে ভারত পানি আটকিয়ে রেখেছে, এই সরকার কি কোনো প্রতিবাদ করেছে কোনোদিন? করে নাই। বাংলাদেশে কোনো পানিসম্পদমন্ত্রী আছে বলে মনে হয়? কেউ নাম শুনেছেন? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঢাকার ‘ফুসফুস’ অভিহিত করে সেখানে গাছ কাটা বন্ধের দাবিও জানান তিনি।
বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সহ সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম, প্রফেসর জামাল উদ্দিন রুনু এবং সেইভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. ফরিদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিম গাছের চারা বিতরণ করেন প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন