নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জে। স্থানীয় আনন্দপুর গ্রামে পরিচালিত অনুসন্ধান কূপে সেরকম আলামতই মিলছে বলে মনে করছেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। সম্ভাবনাস্থলে শেষ পর্যন্ত সৌভাগ্য শিখা জ্বালাতে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রীয় এ কোম্পানিটি। এরমধ্যে দিয়ে দেশের গ্যাস শিল্পের ইতিহাসে সংযোজিত হতে পারে ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র। গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল সোয়া ১০ টায় ডিএসটি (ড্রিল স্টিম টেস্ট) সৌভাগ্য শিখা জ্বালাতে সক্ষম হয় তেমন সম্ভাবনা এখন বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে।
কূপটির অভ্যন্তরে চাপ রয়েছে ৬ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) আর ফ্লোটিং চাপ রয়েছে ১৩ হাজারের বেশি। প্রথমমত একটি স্তরের টেস্ট এখন চলমান। গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে বাপেক্স কূপটির মোট ৪টি স্তরে। নতুন এই ফিল্ডটি থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে প্রবাসী অধ্যূষিত বিয়ানীবাজার। এছাড়া গোলাপগঞ্জ অবস্থিত মাত্র ৪৬ কিলোমিটার দূরে।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেছেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না এখনই। ভালো কিছু আশা করছি, অনেক সময় পকেট থাকতে পারে। তাই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, ঘণ্টা দু’য়েক পর্যবেক্ষণের পর বলতে পারবো। তার আগে বললে সেটি সঠিক নাও হতে পারে। সম্প্রতি একটি সেমিনারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান ওই ফিল্ডটি সম্পর্কে বলেছিলেন, নতুন একটি ফিল্ডে সফল হতে চলেছি আমরা। সেখানে কূপের প্রেসার ৬০ হাজারের রয়েছে অধিক। পরীক্ষা চলছে দারুণ সুখবর হতে পারে এটি আমাদের জন্য। খুব শিগগিরই ভালো খবর দিতে পারবো আশা করছি।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, হয়তো বড় মজুদ হবে না। তবে ভালো কিছু সম্ভাবনা দেখছি। আরও বেশ কিছু গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি আমরা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ, আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ। এরমধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩টিসিএফ, আরও ৭ টিএসএফ’র মতো রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ।
১১৩টি কূপ দিয়ে প্রতি বছরে উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় ১ টিসিএফ’র মতো। এরমধ্যে দেশীয় কোম্পানির ৭০টি কূপের (দৈনিক) ১ হাজার ১৪৫ এমএমসিএফডি, আইওসির ৪৫টি কূপের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৬১৫ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট)। দৈনিক কমবেশি উত্তোলিত হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্যাসের ঘাটতি মোকাবেলায় আমদানি করতে হচ্ছে এলএনজি।
জানা যায়, ২০১৬ সালের শুরুতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেট্রোবাংলার একটি কোম্পানী বাপেক্স জকিগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম আনন্দপুরে গ্যাস অনুসন্ধান কূপ বাস্তবায়নের গ্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্রহণ করে উদ্যোগ। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রূপকল্প-২ নামে এ প্রকল্পটি সংশিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়। অনুমোদন প্রাপ্তির পর জকিগঞ্জ উপজেলার অর্ন্তগত মধুদত্ত মৌজায় ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর বাপেক্স কর্তৃক জকিগঞ্জ-১ অনুসন্ধান কূপের লোকেশন চিহ্নিত করে সরেজমিনে। কূপ এলাকার ভূমি উন্নয়ন এবং এপ্রোস রোড নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মোট ৫.০১ একর ভূমি অস্থায়ী হুকুম দখলে নেন। ২০১৮ সালের ২৩ মে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে ‘রূপকল্প-২’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন ‘জকিগঞ্জ-১’ অনুসন্ধান কূপ খনন এলাকায় বালি ভরাটের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন ও অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের লক্ষ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ প্রকল্পে প্রদান করে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন