রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি ও কোভিড ব্যুরোক্র্যাসির গ্যাঁড়াকল ভাঙতে হবে

জামাল উদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

কোভিড-১৯ ভাইরাস অতিমারীর প্রথম আঘাতটা লেগেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিতে। অভাবনীয়, অভূতপূর্ব ও অপ্রত্যাশিত এই আঘাতে সেসব উন্নত দেশের সুশৃঙ্খল ও সুপ্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল। হাসপাতালে ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ বেড নেই, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভেন্টিলেটর নেই, অক্সিজেন ব্যবস্থা অপ্রতুল, প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই এমন সব অভিজ্ঞতার মধ্যে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রতিদিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকা হাজার হাজার মানুষের লাশের মিছিল থামিয়ে জনজীবনে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার সুকঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে দেশগুলো। করোনার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত জনজীবন, মাসের পর মাস ধরে লকডাউন, শাটডাউনে ভীতিকর গৃহবন্দীত্ব কাটিয়ে তারা যখন নিও নরমাল সিচুয়েশনে প্রবেশ করেছে, তখন আমরা বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় অনেকটা প্রস্তুতিহীন কসরত করে চলেছি। করোনা ভ্যাকসিনেশনের মধ্য দিয়ে পশ্চিমা দুনিয়া যখন করোনার ধাক্কা সামলে পুনরায় সামনের দিকে এগিয়ে চলতে শুরু করেছে, তখন আমরা যেন বালিতে মুখ গুঁজে ঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। শতকরা ৬০ ভাগ নাগরিককে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এনে লন্ডন-নিউইয়র্কের বাসিন্দারা এখন মাস্ক পরা বাদ দিতে শুরু করেছে। যদিও ভারতীয় ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ ও সতর্ক বার্তা জারি করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। আমরা এখনো শতকরা ৩ ভাগ নাগরিককে ভ্যাকসিন দিতে পারিনি। এরই মধ্যে করোনার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ঢেউ তার মৃত্যুর থাবা বিস্তার করে চলেছে। এই নিবন্ধ লেখার সময় গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনায় মারা গেছে ১১৯ ুজন। একদিনে এই সংখ্যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সীমান্ত জেলাগুলোতে শনাক্তের হার কোথাও কোথাও শতভাগের কাছাকাছি বলে জানা যাচ্ছে। তবে অত্যন্ত সংক্রামক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সময়ও করোনা পরীক্ষার হার বা সংখ্যায় তেমন কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সর্বসাকুল্যে সারাদেশে ২০-২৫ হাজার লোকের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে গড়ে শনাক্তের হার দাড়াচ্ছে ২০-২২ ভাগ। সোমবার প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, দক্ষিণের জনপদ পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতে করোনা শনাক্তের হার শতকরা ৬০ভাগের বেশী। কিছু কিছু এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে, গণপরিবহন বন্ধ রেখে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের নতুন ফরমান জারি করে করোনার নতুন ঢেউ মোকাবেলার চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও করোনা ভ্যাকসিনেশন নিয়ে তেমন কোনো সুখবর নেই।

দেশে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশে করোনা বিধিনিষেধ জারি হলেও সেসব তেমন কোনো কাজে আসেনি। সোমবার শুরু হওয়া লকডাউন বৃহস্পতিবার থেকে পূর্ণ শাট ডাউনে পরিনত হতে চলেছে। অর্থাৎ বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করে নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন আমরা নিজেদের সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে থাকার বাইরে আর কিছুই ভাবতে পারছি না। অথচ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকর অন্তত ৭টি প্রধান ভ্যাকসিন প্রকল্প থেকে শত শত কোটি ডোজ টিকা উৎপাদিত হয়ে অসংখ্য হীমশীতল গোডাউনে জমা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী টিকা মজুদ করে এখন ভ্যাকসিন কূটনীতি ও খয়রাতি শুরু করেছে। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে অস্বাভাবিক একপাক্ষিক ভারত নির্ভরতা আমাদের জাতীয় অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপপত্তা, জননিরাপত্তা ও জনস্বার্থ যে কতটা হুমকির সম্মুখীন গত কয়েক বছরে তা বার বার প্রমানিত হওয়ার পরও আমাদের সরকার করোনা টিকার জন্য অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনাকে অগ্রাহ্য করে কেবলমাত্র ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। যে ভারত কোনো আলোচনা বা সতর্ক বার্তা ছাড়াই বিশেষ সময়ে বাংলাদেশে চাল বা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়ে দেশের কোটি কোটি ভোক্তাকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিতে কুণ্ঠিত হয়না, যে ভারত বাংলাদেশের সাথে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন না করলেও মিথ্যা অজুহাতে বাংলাদেশের পাটের উপর এন্টিডাম্পিং ট্যাক্স ব্যারিয়ার সৃষ্টি করেছে, বিশ্বের বৃহত্তম গোমাংস রফতানিকারক দেশ ভারত রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দিলেও সীমান্তে গড়ে ওঠা মাদক কারখানা ও মাদক চোরাচালান বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয় না, করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সেই ভারতের উপর একক নির্ভরশীলতার মানে হচ্ছে, বাংলাদেশকে সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার গতি থেকে বিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র অথবা ফাঁদে পা দেয়া। আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে আমাদের অভিন্ন নদীগুলোর উপর এককভাবে বাঁধ নির্মান করার অন্যায় কাজগুলো ভারত অবিরামভাবে করে চলেছে। তিস্তার উজানে বাঁধ দিয়ে তিস্তা-যমুনা অববাহিকার বিশাল এলাকার কোটি কোটি মানুষকে পরিবেশগত ও ভাগ্যবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে টালবাহানা করে ভারত প্রমান করেছে তারা আসলে বাংলাদেশকে সবদিক থেকে দাবিয়ে রাখতে চায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না’। পাকিস্তানীরা তা পারেনি। সেই ৭ কোটি এখন ১৭ কোটিতে পরিনত হয়েছে। অব্যাহত ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও দাবিয়ে রাখার অপতৎরতার নাগপাশ ডিঙিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। তবে দাবায়া রাখার গুটি নাকি এখন রাওয়াল পিন্ডি থেকে নয়াদিল্লীতে ন্যাস্ত হয়েছে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, দেশ স্বাধীন হলেও এর শাসনদÐ দেশের জনগণের হাতে নেই! মূলত: এই পুুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনৈতিক বিশ্বে কোনো দেশই এককভাবে স্বাধীন নয়। সা¤্রাজ্যবাদী কর্পোরেট জায়ান্টদের হাতে ছোট দেশগুলোর প্রায় সবই বিশ্বযুদ্ধোত্তর গত এক শতকে কোনো না কোনোভাবে বানানা রিপাবলিক হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের রফতানি বাণিজ্য, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোকে বিচার করলেও সহজেই বুঝা যায়, কোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ দিল্লীর উপর নির্ভরশীল নয়। রফতানি বাণিজ্য ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্স এই উভয় ক্ষেত্রেই ভারতের অন্যতম বড় সোর্স কান্ট্রি হচ্ছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশে ভারতীয় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশের এক কোটি কর্মী বিদেশ থেকে যে রেমিটেন্স দেশে পাঠায়, তার এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে যাচ্ছে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত অবৈধ ভারতীয় কর্মীরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হলেও ভারতের সাড়া পাওয়া যায়নি। শতকোটি জনসংখ্যার প্রতিবেশি বড় দেশ হিসেবে ভারতের বিশাল আমদানি পণ্যরাশির মধ্যে বেশকিছু পণ্যের চাহিদা মেটাতে পারে বাংলাদেশ। ভারত অন্যদেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করলেও বাংলাদেশ থেকে তা করছে না। এ ক্ষেত্রে, ভারতের সদিচ্ছা থাকলে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতি কমে ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য শত শত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ঘোষণা করা হলেও ভারতের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সুযোগ কখনো দেয়া হয়নি। উপরন্তু তৈরী পোশাক রফতানির সুযোগ এবং বাংলাদেশি পাটের উপর শুল্কবাঁধা তৈরী করে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়েছে। ভারত এখনো বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দেশ নয়। চীনসহ বিশ্বের সাথে ভারতের হাজার হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতির এক শতাংশও যদি বাংলাদেশ পেত তাহলে ভারতের সাথে বাণিজ্যে হয়তো ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত। ভারতের সদিচ্ছা এবং বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ট্রেড-ইন্টিলিজেন্সের ঘাটতি সম্ভবত এ ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হয়ে আছে। এভাবেই ভেতর এবং বাহির থেকে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

দেশে করোনা ভ্যাকসিনের ২ ডোজ পাওয়া মানুষের সংখ্যা ২ শতাংশের বেশি নয়। করোনা টেস্ট হওয়া মানুষের সংখ্যাও ৩ শতাংশের বেশি নয়। অথচ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমেই ব্যাপক হারে করোনা টেস্টের উপর জোর দিয়েছিল। অত:পর ভ্যাকসিন সফল হওয়ার পর যত দ্রæত সম্ভব ভ্যাকসিনেশন সম্পন্ন করার উপর জোর দিচ্ছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। তবে করোনা ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে ইক্যুইটি বজায় রাখার উপর জোর দেয়া হলেও সব দোহাই ও নীতিবাক্য উপেক্ষিত হয়ে ইতিমধ্যে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য তৈরী হয়ে গেছে। ধনী রাষ্ট্র ও সোর্স কান্ট্রিগুলো এ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। অর্থের অভাবে অনেক দেশ করোনা ভ্যাকসিনেশন শুরুই করতে পারেনি। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এতটা পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ ছিল না। উপযুক্ত মূল্য দিয়ে করোনা ভ্যাকসিন কিনে সার্বজনীন টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার মত অর্থের যোগান দেয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের ছিল এবং আছে। প্রকাশ্য ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে সাড়ে তিন কোটি ডোজ টিকার দাম আগাম পরিশোধ করেও ভারত সরকারের অনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ টিকা কার্যক্রম চালু রাখতে পারেনি বলেই এখন ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের আতঙ্কে ত্রাহি অবস্থা। বিভিন্ন দেশের কোম্পানীগুলো যখন করোনা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের সুখবর দিচ্ছিল, ঠিক তখনি বাংলাদেশের গেøাব বায়োটেক কোম্পানীও নিজস্ব টিকা তৈরীতে অগ্রগতির খবর দিয়েছিল। অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের সাফল্যের খবর প্রকাশের আগেই চীনা একাধিক ভ্যাকসিনের সাফল্যের খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশকে ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছিল চীন। ভারতের ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসির ফাঁদে পা দিয়ে সে সুযোগ হাত ছাড়া না হলে বাংলাদেশের কয়েক কোটি মানুষ ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনেটেড হতে পারত। আমাদেরকে এমন ত্রাহি অবস্থায় পড়তে হতো না। করোনা ভ্যাকসিনেশনে সাফল্যের উপর জাতির অনেক কিছুই নির্ভর করছে। ভ্যাকসিনেশনে এগিয়ে থাকা মানে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকার গ্যারান্টি। দেশের অভ্যন্তরে রাজনীতিতে ও আমলাতন্ত্রে লুকিয়ে থাকা বিদেশি এজেন্টরা তা চায়নি বলেই ভ্যাকসিনেশনে বার বার পিছিয়ে দেয়ার তৎপরতায় তারা সক্রিয় রয়েছে। সেরামের চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ার পর চীনা ভ্যাকসিনের চুক্তির শর্ত ফাঁস করে দিয়ে দ্বিতীয় দফায় চুক্তি বাতিল করে দেয়ার অপতৎপরতাও দেখা গেছে।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চীনের সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান দেশে পৌঁছবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে। এর উপর ভিত্তি করে দেশে আবারো করোনা গণাটিকা কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে। ফেব্রæয়ারিতে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচি পরিকল্পনামাফিক অব্যাহত থাকলে ইতিমধ্যে অন্তত দুইকোটি মানুষ টিকা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারত। এটা সম্ভব হলে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই হয়তো সবচেয়ে এগিয়ে থাকত। পর্দার অন্তরালে থাকা কোনো সংঘবদ্ধ চক্র সেটা চায় না। ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, এমনটা তারা প্রত্যাশা করে না। ষাটের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটর ম্যাকার্থারের (ম্যাকার্থিজম) কমিউনিস্ট খোঁজার মত বাংলাদেশকে পিছিয়ে রাখার ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে আমাদের প্রশাসনে-আমলাতন্ত্রে লুকিয়ে থাকা এজেন্টদের খুঁজে খুঁজে বহিষ্কার করার পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার দাবী ক্রমে জোরালো হয়ে উঠেছিল। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে চলার মধ্যে নতুন করে লকডাউন, শাটডাউনের বাস্তবতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরো বেশকিছুদিন বন্ধ রাখার নতুন মওকা পাওয়া গেল। ইতিমধ্যে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অনলাইনে ফরম পূরণ করার তারিখও ঘোষণা করা হয়েছিল। ২৯ জুন থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ফরম পূরণ করতে সরকারিভাবে ঘোষণা দেয়ার পর গত রবিবার ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্তৃপক্ষ এইচএসসি ফরম পূরণ স্থগিত করে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। উচ্চশিক্ষার ভাগ্য নির্ধারণে উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা, পরীক্ষা ও ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। করোনাকালীন বাস্তবতায় ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ না থাকায় এসএসসি ও জেএসসি’র ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এইচএসসিতে অটোপাস করিয়ে দেয়া হয়। দেশের উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত শিক্ষার সামগ্রিক মানের ক্ষেত্রে এ ধরণের অটোপাস বড় ধরণের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এসব বিবেচনায় এবার করোনার বাস্তবতা মাথায় রেখেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগের কথা ভাবছে সরকার। এ জন্য ইতিমধ্যে পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসও প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে এইচএসসি ফরম পূরণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা শিক্ষাবোর্ড তা স্থগিত করে দিয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও পরিবারের মধ্যে নতুন আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। অলাইনে ফরম পূরণের ক্ষেত্রে নতুন করে বিপত্তি কোথায় তা আমাদের বোধগম্য নয়। ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি বাংলাদেশের কোটি মানুষের জীবনকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আর কোভিড ব্যুরোক্রেসি জাতির শিক্ষাব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে অকার্যকর করে তুলেছে। গত জানুয়ারীতে ইউনিসেফের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, আরো একবছর শিক্ষাঙ্গণ বন্ধ রাখার ঝক্কি শিশু-কিশোররা বইতে পারবে না। যে করেই হোক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। গত এক বছরে করোনা সংক্রমণ ওঠা-নামা করেছে। এক সময় শনাক্তের হার ৫ ভাগের নিচে নেমে আসলেও স্কুল-কলেজ খোলার ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এখন অনলাইনে ফরম পূরণ বন্ধ করার মধ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষ আবারো এইচএসসিতে অটোপাস সিস্টেমে চালিয়ে যাওয়ার দিকে এগোচ্ছে কি না, সেই সন্দেহ জোরালো হয়ে উঠেছে। করোনাকালে রয়ে সয়ে সবকিছুই চলছে, শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থাকেই অচল করে রাখার অচলায়তন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
bari_zamal@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন