ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পরীমনির মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তুহিন সিদ্দিকী অমির জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ৫ দিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার থানার পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন। অন্যদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাদী তাহমীদা তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। তবে নাসির ও অমি দু’জনেই বিমানবন্দর থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার আছেন এবং অমি মানব পাচার ও পাসপোর্ট জালিয়াতির আরেক মামলায় গ্রেফতার আছেন। ফলে পরীমনির মামলায় জামিন পেলেও তাদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে না।
এর আগে বুধবার ২৩ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসান শুনানি শেষে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৫ জুন সাভার থানার পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। নাসির ও অমি মাদক মামলায় রিমান্ডে যাওয়ায় ওই দিন রিমান্ড শুনানি হয়নি। মাদক মামলায় রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিচারক তাদের পরীমনিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার মামলায় করা রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। গত ১৪ জুন ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নাসির উদ্দিন ও অমির নাম উল্লেখ করে এবং চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পরীমনি সাভার থানায় মামলা করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় পুলিশ। পরীমনির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় করা মাদক মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরীমনি নিজেই মদ খেয়ে অপকর্ম করার চেষ্টা করেছেন : আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতে শুনানিকালে বলেছেন, পরীমনি নিজেই মদ খেয়ে অপকর্ম করার চেষ্টা করেছেন। আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন এ এইচ ইমরুল কাউসার, আমানুল করিম লিটন, জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়াসহ অনেকে। তারা আসামিদের জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ হেমায়েত হোসেন, সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ এইচ ইমরুল কাউসার বলেন, ‘পরীমনি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করেছেন। এ ঘটনার সঙ্গে আসামিরা জড়িত নন। ওই ক্লাবে রাত তিনটা পর্যন্ত কী করলেন, সেই ব্যাখ্যা এজাহারে নেই। তিনি (পরীমনি) মদ খেয়েছেন, টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে আছে। দাঁত ভেঙে গেছে, ঠোঁট ফেটে গেছে, পায়ে লেগেছে, সেই লোক কীভাবে মদ খায়? এখানে বাড়তি কথার সুযোগ নেই।
ইমরুল কাউসার বলেন, আমার আসামি নাসির উদ্দিন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। উনি উত্তরা ক্লাবে কয়েকবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ৬৫ বছরের একজন বয়স্ক লোক, উনার দ্বারা এই কাজ করা সম্ভব? ঘটনার ৪ দিন পরে পরীমণির মামলা রুজু হয়েছে। উনি আগে মিডিয়ার অ্যাডভান্টেজ নিয়ে মামলা করেছেন। পরে মিডিয়া সেই ভুল বুঝতে পেরেছে। আসামি অসুস্থ মানুষ। দুই বারে তাকে মোট ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নতুন তথ্য বের হয়নি। আসামি জামিন পেলে পলাতক হবেন না। করোনার মধ্যে সকলের অবস্থা খারাপ, সেখানে জেল হাজতের অবস্থা কী? তাই যেকোনও শর্তে আসামি নাসির উদ্দীনের জামিনের প্রার্থনা করছি, স্যার।
আসামি অমির পক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামি অমি পরীমনিকে বলেছিলেন, আমি এই ক্লাবে যাচ্ছি, তুমি নামতে পারো। এখানে পরীমনিকে কোনো প্রকার জোর করা হয়নি। তার বোনের কথা বলে তিনি নিজেই গেছেন। ভিকটিমের শরীরের কোনো স্পর্শকাতর জায়গাও স্পর্শ করেননি। পরীমনিকে আসামিরা কোনো আঘাত করেননি। আসামি অমি তাকে মদ পান করাননি। এমন কথা এজাহারেও উল্লেখ নেই। উনি নিজেই মদ খেয়ে অপকর্ম করার চেষ্টা করেছেন। আসামি অমি একজন ব্যবসায়ী লোক। আসামির ডায়বেটিস, হাঁটতে পারেন না। অ্যাজমাও আছে। উনি অসুস্থ। তাই যেকোনও শর্তে তার জামিনের প্রার্থনা করেন তার আইনজীবী।
শুনানিতে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, মামলাটি দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রপক্ষ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। মামলার বিষয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য নন, তিনি তা উহ্য রেখেছেন। আসামিরা প্রভাবশালী, জামিনে গেলে মামলার ওপরে প্রভাব পড়তে পারে।
ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের আইনজীবী মো. আমানুল করিম লিটন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে মাদকের মামলাটি রয়েছে, সেটিতে জামিন পেলে তারা মুক্তি পাবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন