শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অন্যায় কর্মকান্ড ও সীমালঙ্ঘনেই মহামারি জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২১, ৪:১৫ পিএম

পৃথিবীতে সৃষ্ট মহামারি, বিপদাপদ ও বিপর্যয়সমূহের পেছনে রয়েছে মানুষের অন্যায় কর্মকান্ড ও সীমালঙ্ঘন। মানুষের পাপাচার, নৈতিক স্খলন, অসহায়ের প্রতি নির্মম নির্যাতন যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে সাবধান করতে এ ধরনের বিপর্যয় বা বিপদ-আপদ আবিভর্‚ত হয়। মহামারি থেকে মুক্তি পেতে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, সতর্ক থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন। কঠোর লকডাউন চলাকালে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন মসজিদে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারী খতিব অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার বয়ানে বলেন, গত দেড় বছর যুদ্ধ-সংঘাত ব্যতীতই পৃথিবীর প্রায় চল্লিশ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে। পৃথিবীর অর্থনীতি, সমাজ কাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, সতর্ক থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
খতিব বলেন, পৃথিবীতে সৃষ্ট মহামারি, বিপদাপদ ও বিপর্যয়সমূহের পেছনে রয়েছে মানুষের অন্যায় কর্মকাÐ ও সীমালঙ্ঘন। মানুষের পাপাচার, নৈতিক স্খলন, অসহায়ের প্রতি নির্মম নির্যাতন যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে সাবধান করতে এ ধরনের বিপর্যয় বা বিপদ-আপদ আবিভর্‚ত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের জন্য বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (আল কুরআন, সূরা রুম: ৪১)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবের পূর্বে অনেক শক্তিশালী জাতি-গোষ্ঠীকে তাদের কৃত সীমালঙ্ঘনের দরুণ ভয়াবহ শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। কোনো কোনো জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আপনি কি দেখেননি আপনার প্রতিপালক আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কী আচরণ করেছিলেন। তাদের দৈহিক গঠন ছিল স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ এবং তাদের এত শক্তি ও বলবীর দেয়া হয়েছিল যা সারা বিশে^র শহরসমূহে অন্য কোনো মানবগোষ্ঠীকে দেয়া হয়নি। এবং সামূদ গোত্রকে যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করত। আর বহু সৈন্য শিবিরের অধিপতি ফিরাউন-এর প্রতি। যারা দেশের সীমাসমূহ লঙ্ঘন করেছিল। আর সেখানে বহুবিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। ফলে আপনার প্রতিপালক তাদের উপর শাস্তির কশাঘাত করলেন। (আল কুরআন, সূরা ফজ্র : ৬-১৩)।
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে মহামারি এবং এমন সব রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পরে, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি। (ইবনু মাজাহ) কোন অঞ্চলে যখন মহামারি প্রকাশ পায় তখন ঐ অঞ্চলের ভালো-মন্দ, সৎ-অসৎ নির্বিশেষে সকলেই সমানভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো বিশ^াসীদের জন্য রহমত এবং অবিশ^াসীদের জন্য গযবস্বরূপ।
মহামারি, রোগব্যধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি সঙ্কটে করণীয় সম্পর্কেও ইসলাম দিয়েছে যুগোপযোগী দিকনির্দেশনা। যা অনুসরণের মাধ্যমে মানব জাতি যেকোনো রোগব্যাধি, বিপদাপদ থেকে মুক্তি পেতে পারে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন (সাহায্যকারী হিসেবে)। আল কোরআন, সূরা বাকারা : ১৫৩)।

যেকোন ধরনের রোগব্যাধি, ক্ষতিকর ভাইরাস, মহামারি ইত্যাদি থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। পবিত্র হাদিসের আলোকে মহামারি থেকে পরিত্রান পাওয়ার লক্ষ্যে আমরা এই দোয়া পাঠ করতে পারি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়া মিন সায়্যিইল আসকাম।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা যখন কোন এলাকায় মহামারি প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোন এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেও না’। (বুখারী)

সংক্রমণ ব্যধি থেকে আত্মরক্ষার্থে নবীজী (সা.) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছেন। নবীজী (সা.) বলেন, তুমি কুষ্ট রোগী থেকে এক বর্শা বা দুই বর্শা পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখ। (মুসনাদে আহমদ, ২২৩১)। রাসূলুল্লাহ (সা.) পবিত্রতাকে ঈমানের অংশ বলে ঘোষণা করেছেন। হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পূর্বে ওযুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে, খাবার গ্রহণের পূর্বে হাত ধোয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলামের এসব নির্দেশ প্রতিপালনের মাধ্যমে আশা করা যায় করোনায় সংক্রমণ থেকে আল্লাহর রহমতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করুণ। দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুণ। আমীন!
বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিসহ গোটা বিশ্বেই অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হচ্ছে। মানুষ খাদ্য সঙ্কটে রয়েছেন। এই সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে ইসলাম আমাদের শেখায় মানবিক হতে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তাদের দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দিতে।

মানবতার মুক্তির দূত, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবতার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাইতো তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের আসনে আসীন হয়েছেন। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যখন হেরা পর্বতে জীবরীল আমিন ওহী নিয়ে এসেছিল। ওহীর প্রভাবে এক পর্যায়ে রাসুল (সা.) খাদিজা (রা.) আনহাকে বললেন ‘আমি আমার জীবন সম্পর্কে আশঙ্কা করছি।’ হযরত খাদিজা (রা.) সান্তনা দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! তা কখনও হতে পারে না, তিনি (আল্লাহ তায়ালা) আপনাকে অপদস্থ করবেন না। প্রথমত আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সংরক্ষণ করেন, দ্বিতীয়ত আপনি দুস্থ মানুষের বোঝা হালকা করেন, তৃতীয়ত নিঃস্বদের আহার করান চতুর্থত অতিথিদের সেবা করেন এবং পঞ্চমত সত্যের পথে নির্যাতিতদের সাহায্য করেন। (সহীহ বোখারি)। অভুক্ত ব্যক্তিকে আহার্য দেয়ার ফযিলত বলতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষের কল্যাণ-সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা। (বুখারি, হাদিস : ১২) । রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে, আল্লাহ তায়ালাও ততোক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ (তিরমিজি)। পেশ ইমাম বলেন, করোনা মহামারি মাঝে আজই আমাদের মোক্ষম সময় রাসুলের মহানুভবতা, মানবতা ও আতিথেয়তার নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের এবং বৃদ্ধ দিনমজুর, মিসকিন ও শিশুদের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোর। তাই আসুন আমরা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি মানবিক আচরণ করি । একে অপরের পাশে দাঁড়াই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন