রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যার চরিত্র সবচেয়ে ভাল। (মিশকাত শরীফ)। নৈতিক চরিত্র ঈমানের পূর্ণঙ্গতা লাভের শর্ত। হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী সে ব্যক্তি, যার চরিত্র সর্বোত্তম। (তিরমিযী শরীফ) অন্য হাদীসে উত্তম চরিত্রকে পূণ্যের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরকালীন জীবনে সাফল্য লাভ করতে চাইলে নৈতিক চরিত্র অনুসরণের বিকল্প নেই। আজ মসজিদে জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। অধিকাংশ মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তার উপর মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করেন।
ঢাকা বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারী খতিব ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ইসলামকি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে আমরা এক অস্থির সময় পার করছি। মানুষের অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। সমাজ-রাষ্ট্র সর্বত্র একই চিত্র। মানুষের মনুষত্ববোধ, সামাজিক দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতাবোধ হ্রাস পেয়েই চলছে। মানুষ ক্রমেই অতি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পরছে। বিশেষত নতুন প্রজন্মের মাঝে এই প্রবণতা বেশি। এমনকি মা-বাবা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথেও তারা কাক্সিক্ষত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করছে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নৈতিকতার চরম স্খলনকে এর জন্য দায়ী করে থাকেন অনেকেই।
খতিব বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক হাদীসে নৈতিক চরিত্র অনুসরণের গুরুত্ব আলোচিত হয়েছে। হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হল কোন জিনিস মানুষকে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র। আবারও জিজ্ঞাসা করা হল, কোন জিনিস বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিযী শরীফ) অপর হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে প্রাসাদ নির্মাণের জন্য জামিন হব। (আবূ দাউদ শরীফ)।
পার্থিব জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে চাইলেও নৈতিকতা অনুশীলনের বিকল্প নেই। নৈতিকতা মানুষকে ভালো ও ন্যায় চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করে, যা শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজকে সাফল্যের দিকে ধাবিত করে। অপরদিকে অনৈতিকতা মানুষকে মন্দ ও অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে, যা সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করার মাধ্যমে সমাজকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়। নতুন প্রজন্মকেও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে, নৈতিকতা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, জীবনের প্রতিটি স্তরে নৈতিকতা চর্চার তৌফিক দান করুন। আমীন !
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমা বয়ানে বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে আমাদের আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে। এটা ইসলামেরই শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হাঁচি দিতেন তখন হাত বা কাপড় দ্বারা চেহারা ঢেকে নিতেন এবং আওয়াজকে ক্ষীণ করতেন। আজ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞাপন সেই পরামর্শই দিচ্ছে। যা’ দেড় হাজার বছর পূর্বে নবী (সা.) শিখিয়েছেন। পেশ ইমাম বলেন, মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ চার পাশেই ছড়িয়ে পড়ছে। সুরা রুমের ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান। যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। তিনি বলেন, এই মহামারি ও বিপর্যয় থেকে বাচতে হলে আমাদেরকে ঈমান ও আমলকে সংশোধন করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। এ জন্য খাঁটি তওবাহ করতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষের প্রতি সহায়তার হাত নিয়ে আরো বেশি মানবিক হতে হবে। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি দয়াশীল হও তবেই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। বিপদগ্রস্ত ও অসুস্থ্য মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন !
ঢাকা উত্তরা ৩ নং সেক্টরস্থ মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম আজ জুমার খুৎবায় বলেন, জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা লাভ করা ও দুনিয়ার জীবনে আত্মার প্রশান্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার যিকর অনেক বড় আমল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, তোমারা অধিক পরিমাণে আল্লাহ তায়ালার যিকর করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো (সূরা জুমুআ আয়াত ১০)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও নারী তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার (সূরা আহযাব আয়াত ৩৫)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) সূত্রে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) কল্যাণকর কাজ তো অনেক রয়েছে, কিন্তু আমি সবগুলো করার ক্ষমতা রাখি না। তাই আমাকে এমন একটি জিনিসের কথা বলে দিন যা আমি দৃঢ. ভাবে ধরে থাকবো। এর সাথে এটাও অনুরোধ যে, আমাকে যেটা বলবেন সেটা যেন খুব বেশি না হয়। কেননা হয়তো আমি মনে রাখতে পারবো না। নবী (সা.) বললেন তোমার জিব্বা যেন আল্লাহর যিকির দ্বারা সিক্ত থাকে। (তিরমিজি শরিফ)। নবী কারীম (সা.) বলেন,সকল বাক্যের মধ্যে এ চারটি বাক্য সর্বোওম। সুবহানাল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আল্লাহুআকবর। (মুসলিম শরিফ) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সব সময় তার যিকর করার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন! ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মারুফ বিল্লাহ আজ জুমার খুৎবায় ''সুন্দর আচরণ'' সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন হাদীসে এসেছে, পরস্পর হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও ইবাদাত হিসেবে গণ্য। রাসুল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারি আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে তাকে আল্লাহ ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সাওয়াব লাভ করবে" (তিরমিজি :৪/৩৬২-৩৬৩)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, " নিজের মতামত সঠিক হওয়া সত্তে¡ও যে ব্যক্তি বিতর্ক পরিত্যাগ করে আমি তার জন্য জান্নাতের পাদদেশে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। আর যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা পরিত্যাগ করে,হাসি-মস্করাচ্ছলেও মিথ্যা বলে না,তার জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। আর যার আচরণ-ব্যবহার সুন্দর আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি"। (আবু দাউদ ( ৪/২৫৩)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, "সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো আল্লাহর ভয় এবং সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে তা হলো মুখ এবং গুপ্তাঙ্গ"। (তিরমিজি: ৪/৩৬৩)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সবার সাথে সুন্দর আচরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন !
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন