মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ঠ হবে জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২১, ৩:৪৯ পিএম

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমরা তোমাদের ঈমানকে খাঁটি করো, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ঠ হবে। অর্থাৎ ইখলাস থাকলে আল্লাহকে খুশি করার জন্য অনেক আমল করার দরকার নেই। ইখলাস থাকলে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য অল্প আমলই যথেষ্ঠ। আজ বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় প্রচুর মুসল্লিদের রাস্তার উপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার বয়ানে বলেন, বিপদে ধৈর্যধারণ করা মুমিনের দায়িত্ব। মানুষ বিভিন্ন দিক থেকে বিপদের মুখে পড়েন। আর মনে রাখতে হবে বিপদ যত বড় হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানও তত বড়। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা করেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব (কখনও) ভয়-ভীতি, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জানমাল ও ফলফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা, আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। সূরা বাকারা (২) : ১৫৫। অপর আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা করেন, তোমরা তোমাদের জান-মালের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরীক্ষার মুখোমুখি হবে আর তোমরা আহলে কিতাব ও মুশরিকদের পক্ষ থেকে অনেক পীড়াদায়ক কথা শুনবে। তোমরা যদি সবর ও তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে অবশ্যই তা বড় হিম্মতের কাজ। সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৮৬। পবিত্র কোরআনের আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে রয়েছেন। সূরা বাকারা (২) : ১৫৩। রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে, আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো আপনজনকে মৃত্যু দিই আর সে সবর করে, তখন আমার কাছে তার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪২৪। পেশ ইমাম বলেন, মুমিন বান্দা নিজের কৃত অপরাধের কারণেও বিপদের মুখোমুখি হতে পারে, আবার বিপদাক্রান্ত হতে পারে প্রভুর সঙ্গে তার ভালোবাসার যাচাইস্বরূপও। যে কারণেই হোক, অনাকাঙ্খিত এ বিপদও তার জন্যে রহমত হয়ে থাকে। বিপদ যদি অপরাধের শাস্তিস্বরূপ হয়ে থাকে, তাহলে এ বিপদে ভুগে সে গোনাহমুক্ত হয়ে ওঠে। আর বিপদ যদি হয় প্রভুর প্রতি তার ভালোবাসার পরীক্ষা, তাহলে সবর করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে ভালোবাসার বন্ধন হবে আর দৃঢ়। আল্লাহপাক আমাদেরকে সর্ব ধরণের বিপদাপদ থেকে হেফাজত ও ধৈর্যধারণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
ঢাকা ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার ইমাম ও খতিব মাওলানা মো.মনিরুল ইসলাম আজ জুমার বয়ানে বলেন, মানজীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি। কোরবানি ঈদ আমাদেরকে এ শিক্ষা দিয়ে গেল। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: “হে নবী, আপনি বলুন: আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ বিশ্বের প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য। সকল ইবাদতের একমাত্র লক্ষ্য হলো ইখলাস বা আল্লাহর সন্তুষ্টি। ইখলাস বিহীন কোন ইবাদত আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। আর আল্লাহ তায়ালা নবীদেরকেও এই ইখলাসের আদেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: “তাদেরকে (নবীদেরকে) এছাড়া আর কোন আদেশ দেয়া হয়নি যে, তারা একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।” নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমরা তোমাদের ঈমানকে খাঁটি করো , অল্প আমলই নাজাতের জন্য সথেষ্ঠ হবে। অর্থাৎ ইখলাস থাকলে আল্লাহকে খুশি করার জন্য অনেক আমল করার দরকার নেই। ইখলাস থাকলে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য অল্প আমলই যথেষ্ঠ।

ঢাকা উত্তরা ৩ নং সেক্টরস্থ মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, সৃষ্টির সেবা সুন্দর আচরণ মানবতা সহানুভূতি ও দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করা, জিকির-আজকার তসবীহ-তাহলীল তাহাজ্জুদ ইত্যাদি এবাদতের চেয়ে সাওয়াব কম নয় । যদিও এর গুরুত্ব সম্বন্ধে আমরা অনেকেই ওয়াকিফহাল নই। মুসলিম শরীফে এসেছে নবী কারীম (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন ’হে আদম সস্তান আমি অসুস্থ হয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। তিনি বলবেন হে রব্ব আপনি তো রব্বুল আলামিন, আমি কিভাবে আপনাকে দেখতে যাব? তিনি বলবেন তুমিতো জেনেছিলে যে আমার ওমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, তবুও তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে তবে আমাকে তার কাছে পেতে। আবু দাউদ শরীফের মধ্যে এসেছে নবী কারিম (সা.)বলেছেন যার আচারণ-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি।

সুন্দর আচরণের ৬টি দিকের প্রতি হাদিস শরীফে বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রথমত সকলের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা ও কথাবার্তা বলা, বিনয়-বিন¤্রতা ও অহংকার বর্জন, বিতর্ক পরিহার করা, মানুষের আচরণে কষ্ট পেলে ধৈর্য ধরা, মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও কম কথা বলা এবং উপকারির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আখেরাত মুখি জীবন গঠনের সৌভাগ্য দান করুন।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমার বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি মানুষের নৈতিক ও আবশ্যিক কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্বগুলো যথাযথ পালন করা মোমেনের অপরিহার্য। যদি আমরা সকলেই নিজের দায়িত্বের প্রতি সচেতন হই, তবে দুনিয়া ও আখেরাত আমাদের জন্য কল্যাণ কর হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন। উপাসনা করো আল্লাহর। শরিক করো না তার সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং নিকট-আত্মীয়, এতিম-মিসকিন,প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির, এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও সৎ আচরণ করো। সূরা নিসা ৩৬। আল্লাহ সবাইকে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন! ঢাকার লালমাটিয়া বাতুল হারাম মসজিদের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ:) এর স্মৃতি বিজড়িত পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের ইতিহাস পশু কোরবানির মাধ্যমে আমরা ঈদ উদযাপন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ। কিছু সংখ্যক নাস্তিক বিভিন্নভাবে বলতে চেয়েছিল যে, করোনার মধ্যে কোরবানি না করে এর অর্থ গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার কথা, তারা মূলত: গরীবদের প্রতি কোন দায়িত্বই পালন করে না। তারা ইসলামের সু-মহান নিদর্শন কোরবানির বিরোধিতার জন্যই এসব বলেছে। কিন্ত এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের এসব ইসলাম বিরোধী তৎপরতার মুখে ছাই দিয়ে আগের চেয়ে বেশী হারে কোরবানি দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

খতিব বলেন, করোনা কালীন সময়ে আমরা দ্বিতীয়বার কোরবানি দিয়েছি অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে গরীব-অসহায় মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব এখন অনেক বেশি। আল্লাহ তায়ালা বলেন," তোমাদের কোরবানির পশুর গোশত, রক্ত বা কোন অংশ আল্লাহর নিকট পৌঁছায়না, পৌঁছায় শুধু তোমাদের তাকওয়া বা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি। সুতরাং এর অংশ থেকে তোমরা খাও এবং ফকির-মিসকিনদের ও খাওয়াও ।

খতিব বলেন, জিলহজ মাসের সেরা দিনগুলো আমরা অতিবাহিত করছি। মুসলিম উম্মাহসহ সারা বিশ্ব থেকে করোনা নামক গজব তুলে নেয়ার জন্য মহান রবের দরবারে আরজি পেশ করব। আসুন ঈদুল আজহার শিক্ষায় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ব হয়ে আমরা সকলে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াই আর তওবার মাধ্যমে তার কাছে ক্ষমা চাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন