প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানের অববাহিকায় উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক এলাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এরফলে বিশেষত উজানে ভারতের ঢলের তোড়ে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে উত্তর জনপদ, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে ভাটি অঞ্চলে চাঁদপুর পর্যন্ত অনেক জেলা-উপজেলা, বন্দর-গঞ্জে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় দিশেহারা নদীতীরের বাসিন্দারা।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল রোববার জানায়, দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৮টিতে হ্রাস পায়। ৪টি স্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে। শনিবার নদ-নদীসমূহের ৪৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫৫টি স্থানে হ্রাস পায়। শুক্রবার ৬৩টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৭ স্থানে হ্রাস পায়। বৃহস্পতিবার ৭৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ২২টিতে হ্রাস পায়। বুধবার ৭৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ২২টিতে হ্রাস পায়। বর্তমানে কোন নদীর প্রবাহ বিপদসীমায় নেই।
নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে গতকাল পাউবো জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাসে গতকাল জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম ও মেঘালয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
পাউবোর ১০ দিনের পূর্বাভাস
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে ৩ জুলাই শনিবার ১০ দিনের অন্তবর্তী পূর্বাভাস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৯ জুলাই নাগাদ বাহাদুরাবাদ স্টেশনে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ৭ দিনে আপাতত গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই। ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এই অববাহিকায় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই।
ফের ভারী বর্ষণ
দুয়েকদিন বিরতি দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরে মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানের অববাহিকায় উত্তর-পূর্ব ভারতে উল্লেখযোগ্য ভারী বর্ষণ হয়েছে, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ২৮০, শিলংয়ে ৪৬, ধুবরিতে ৩৭ মিলিমিটার। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, ডালিয়ায় ১৪৩, ওরাজশাহী ও জামালপুরে একশ’, ফরিদপুরে ৯৬, কুমিল্লায় ৭০, ময়মনসিংহে ৬৮ মিলিমিটার।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল বিকাল পর্যন্ত প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়, উত্তর জনপদের তিস্তা নদী ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ১৬ ও ৩১ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। ধরলা নদী কুড়িগ্রামে বিপদসীমার ৭২ সে.মি. নিচে রয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদ নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে যথাক্রমে ১২১ ও ৭৮ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদী ছয়টি পয়েন্টে বিপদসীমার ১০১ থেকে ২১৬ সে.মি. নিচে রয়েছে। গঙ্গা-পদ্মা নদী ৮টি পয়েন্টে বিপদসীমার স্থানভেদে ৪৫ থেকে ৪১০ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন