শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফাইজার বিতরণকারী কেন্দ্র এখনই মডার্না নয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১১:৫৫ এএম

করোনা প্রতিরোধে দেশে নেয়া কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকা যুক্ত করা হচ্ছে। সংরক্ষণ ও পরিবহন জটিলতার কারণে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে এ টিকা প্রয়োগ করা হবে না। শিগগিরই রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে মডার্নার টিকা দেয়া শুরু হবে। তবে রাজধানীর যে সাতটি কেন্দ্রে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলোতে আপাতত মডার্না না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা প্রয়োগ শেষ হওয়ার পরই মডার্নার টিকা দেয়া হবে।
সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সূত্রে জানা যায়, মডার্না ও ফাইজার একই ধরনের টিকা। এ টিকা দুটি এমআরএনএ-ভিত্তিক হওয়ায় একই কেন্দ্রে একসঙ্গে প্রয়োগ করা হবে না। এতে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মডার্নার তৈরি নভেল করোনাভাইরাসের টিকা দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় দেয়া হবে। সংরক্ষণ তুলনামূলক জটিল বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের আওতায় চলতি মাসের শুরুতে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। একই সঙ্গে চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের ২০ লাখ ডোজ টিকাও এরই মধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবারো সারা দেশে গণটিকাদান শুরু করে সরকার। যদিও মডার্নার টিকা দেয়া শুরু হয়নি।

মডার্নার টিকা যে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, সারা দেশে সে ধরনের কোল্ড চেইন নেই। এ টিকা মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। রাজধানী ঢাকায় এ সুবিধা থাকলেও দেশের অন্যান্য জায়গায় তা নেই। তবে অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য এমন তাপমাত্রার ফ্রিজার সংগ্রহে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মডার্নার টিকা ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। আর ৮-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা ১২ ঘণ্টা ব্যবহারের উপযোগী থাকে। বাংলাদেশে আসা অন্য সব টিকার মতো মডার্নার টিকাও দুই ডোজ করে নিতে হয়। প্রথম ডোজ দেয়ার ২৮ দিন পর দিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ।
ইপিআই বলছে, ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হলে এ টিকা গলে যায়। একটি ভায়াল থেকে ১০ ডোজ দেয়া যায়। ফাইজারের টিকাও এক ধরনের মিশ্রণ মিশিয়ে গলানো হয়। দুই টিকা একই ফর্মুলার (এমআরএনএ) হওয়ায় তা একসঙ্গে একই কেন্দ্রে দেয়া হবে না। এতে প্রয়োগের জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই ফাইজার বিতরণকারী রাজধানীর সাত কেন্দ্রে এ টিকা দেয়া শেষ হওয়ার পরই সেসব কেন্দ্রে মডার্নার টিকা দেয়া হবে। বর্তমানে রাজধানীর সাতটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকার প্রয়োগ চলছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।
এদিকে কবে নাগাদ মডার্নার টিকা গণপরিসরে দেয়া হবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ টিকা গণপরিসরে দেয়া শুরু হতে পারে। তবে মডার্নার টিকার ট্রায়াল না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফাইজারের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হওয়ায় মডার্নার ক্ষেত্রে তা জরুরি নয়। কারণ দুটি টিকা একই ফর্মুলায় তৈরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ফাইজারের টিকাদানকারী কেন্দ্রে এখনই মডার্নার টিকা দেয়া হচ্ছে না। ফাইজারের টিকা দেয়া শেষ হলে মডার্নার টিকা যুক্ত করা হবে। তবে কবে নাগাদ গণপরিসরে মডার্না দেয়া হবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত সিনোফার্মের টিকাই দেয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকা দেয়ার জন্য ফ্রিজ সংগ্রহ করা হলে তা সারা দেশের সিটি করপোরেশনে পাঠানো হবে।’

এ পর্যন্ত দেশে জরুরি প্রয়োগের জন্য নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী আটটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ টিকাগুলো হলো ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুতনিক-৫, চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না, বেলজিয়ামের জনসন অ্যান্ড জনসন এবং সুইডেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।

উল্লেখ্য, দেশে এখন পর্যন্ত চারটি টিকা এসেছে—এগুলো হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্টাজেনেকা, সিনোফার্ম, ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না। গত ২৭ এপ্রিল দেশে পরীক্ষামূলক করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা নিয়ে গণটিকা প্রয়োগ শুরু করে সরকার। পরে টিকার সংকট দেখা দিলে অন্যান্য উৎসে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোভিশিল্ডের ১ কোটি ২ লাখ, ফাইজারের ১ লাখ ৬০০, সিনোফার্মের ৩১ লাখ, মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন