শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঝুঁকি নিয়েই বসছে কোরবানি পশুর হাট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এ ভাইরাস আরও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে সরকার। তবে পবিত্র ঈদ-উল-আযহার কারণে লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। এর মধ্যে করোনা বিস্তারের ঝুঁকি নিয়েই আয়োজন চলছে ঢাকাসহ সারাদেশে কোরবানি পশুর হাটের। হাটে সারি সারি বাশ পুতে পশু রাখার স্থান ঠিক করা হয়েছে। বেশিরভাগ হাটে কিছু কিছু গুরু, ছাগল ইতোমধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। হাট পরিচালনার জন্য ইজারাদারদের ৪৬টি শর্ত মানার কথা বলা হলেও স্বাস্থ্যবিধি ঠিক থাকবে কী না তা নিয়ে সন্দিহান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, কোরবানীর পশুর হাট নিয়ে কঠোর না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। যারা গরু-ছাগলের খামার করেন, তাদের বেশিরভাগই পশু বিক্রর জন্য কোরবানী ঈদকে টার্গেট করেন। ফলে কারো করোনা উপসর্গ থাকলেও পশু বিক্রর জন্য তা গোপন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত দিয়ে খুব বেশি কাজ হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর ইজারা প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঢাকার দুই সিটিতে ২০টি অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বলছে, আগামী ১৭ জুলাই থেকে হাট বসবে এবং ৫ দিন সময় থাকবে পশু বিক্রির জন্য। তবে হাটগুলোতে ইতোমধ্যে পশু হাটে নিয়ে আসা শুরু হয়েছে।
এদিকে আজ আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকে অস্থায়ী হাটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা হবে। হাটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী নির্দেশনা দেন সেটি অনুসরণ করব। অনলাইনে পশুর হাট এরই মধ্যে উদ্বোধন করেছি। মানুষদের এই ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পশু কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। এতে কোভিডের ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন এবং ঘরে বসেই পশু কিনতে পারবেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতির করাণে তারা অন্তত ৫টি হাট কমিয়েছে। হাটগুলোর প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক নজরদারিসহ স্থাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে ৪৬টি শর্ত মানতে ইজারাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ঠাণ্ডা, কাশি থাকলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
সংস্থা দু’টির পক্ষ থেকে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও অতীত অভিজ্ঞতায় তা কতটা মানা হবে এ নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। গত বছরও কোরবানী পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার চেয়ে পশু বেচাকেনায় বেশি নজর ছিল ইজারদারদের।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন জানান, এরইমধ্যে ১১টি হাটের চূড়ান্ত কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে তা পালন করা বাধ্যতামূলক। কোনো ইজারাদার তা না মানলে হাট বন্ধ করে দেওয়া বা জামানত বাজেয়াপ্ত করাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারাও কোরবানি পশুর হাট নিয়ে একই কথা বলেছেন।
অন্যদিকে, করোনার বিস্তার রোধে এরইমধ্যে গত ৪ জুলাই থেকে অনলাইনে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবারও ডিজিটাল কোরবানি হাট বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। এতে কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে এটুআইয়ের অনলাইন প্ল্যাটফরম একশপ। তাছাড়া খামারি ও ফার্মগুলো নিজেদের নামে পৃথক পৃথকভাবেও অনলাইনে পশু বিক্রি করছেন।
ই-ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চালু হওয়া অনলাইন হাট থেকে বেচাকেনা হয়েছে ২৭ হাজার পশু। আর অনলাইন থেকে ছবি দেখে পরে সরাসরি কৃষকের বাড়ি ও খামার থেকে ৯০ হাজারের বেশি গরু কিনেছেন ক্রেতারা। জেলাভিত্তিক সরকারি প্ল্যাটফর্মে কমপক্ষে ১ হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে আরও ৫০০ কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। এবার তাদের প্রত্যাশা দ্বিগুণ।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে জনসমাগম এড়িয়ে অনলাইনে পশু বেচাকেনা করতে জোর তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, এই সময়ে জনসমাগ হয় এমন যে কোনো পদক্ষেপই আত্মঘাতী। তাই অনলাইনে বা ঢাকার আশাপাশে বড় কোনো খোলা জায়গা কোরবানি পশু বেচাকেনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারতো।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় হাট সংখ্যা কমানো হয়েছে। লোকালয়ে কোনো হাট দেওয়া হচ্ছে না। একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, যারা ঘুরে ঘুরে হাটগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। তাছাড়া সংক্রমণ রোধে অনলাইনে পশু বেচাকেনা করতে উৎসাতি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক দিক দিয়ে প্রবেশ এবং আরেক দিক দিয়ে বের হতে হবে। হাটগুলোতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
নূরউদ্দিন ১৩ জুলাই, ২০২১, ৫:৫১ এএম says : 0
খাসী করা পশু কোরবনী যায়েজ হবে কি না -এ নিয়ে আমর মনে যথেস্ট সন্দেহ আছে। ইহা একটি ভয়ংকর খুত এবং মানুষ-সংগঠিত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন