হজের সর্বোত্তম পাথেয় বা সম্বলের কথা মহান আল্লাহ পাক আল কুরআনে অত্যন্ত পরিষ্কার ও মনোজ্ঞ ভাষায় তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে: ‘হজের কয়েকটি সুবিদিত মাস আছে। এসব মাসে যে লোক হজের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীর সাথে নিরাভরণ হওয়া অশোভন কাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা হজের সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যা কিছু সৎকাজ করো আল্লাহ তা জানেন। আর তোমরা পাথেয় বা সম্বল সাথে নিয়ে যাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন করা। আর আমাকে ভয় করতে থাক হে বুদ্ধিমানগণ’। (সূরা আল বাকরাহ : আয়াত ১৯৭)। এই আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ পাক চারটি বিষয়ের কথা তুলে ধরেছেন।
প্রথমত, হজ আদায়ের সুবিদিত মাস আছে। এ মাসগুলো হচ্ছে শাওয়াল, যিলকদ এবং যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন। এ সময়ের মধ্যেই হজ সম্পাদন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, হজের পরিপূর্ণ নিয়ত অর্থাৎ ইহরাম বাঁধার পর স্ত্রীর সাথে নিরাভরণ হওয়া, ফাসেকী ও অশোভন কাজ করা এবং ঝগড়া-বিবাদ করা হারাম।
তৃতীয়ত, হজ আদায়ের পাথেয় বা সম্বল সাথে নিয়ে যাওয়া। আর সর্বোত্তম সম্বল হচ্ছে ‘তাকওয়া’ অবলম্বন করা।
চতুর্থত, সর্বদা আল্লাহকে ভয় করা এবং আল্লাহমুখী জীবনযাপন করা।
এখানে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে হজের জন্য প্রয়োজনীয় পাথেয় বা খরচপত্রের ব্যবস্থা না করে হজের নিয়তে বেরিয়ে পড়া অনুচিত। বরং হজের উদ্দেশ্যে সফর করার আগে প্রয়োজনীয় পাথেয় সাথে নেয়া বাঞ্ছনীয়। এটা তাওয়াক্কুলের অন্তরায় নয়। সামর্থ্য অনুযায়ী হজের পাথেয় সাথে নিয়েই আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) তাওয়াক্কুলের অর্থ এভাবে করেছেন : ‘প্রথমে উদ্যত উটটিকে বাঁধ, তারপর তাওয়াক্কুল করো’। সুতরাং পাথেয় সংগ্রহ করে তাওয়াক্কুল করতে হবে। (ওমদাতুল ক্বারী; তাফসীরে কুরতুবী)।
আল কুরআনে ‘তাকওয়া’ শব্দটি পনেরবার ব্যবহৃত হয়েছে। তাকওয়া শব্দটি ‘ওয়াকায়াতুন’ হতে উৎপন্ন। অিিভধানিক অর্থ ভয় করা, বিরত থাকা, রক্ষা করা, সাবধান হওয়া, আত্মশুদ্ধি, পরহেজগারি, বিপদ ও অনিষ্ট হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। সাধারণ অর্থে আল্লাহভীতিকে তাকওয়া বলা হয়। ইসলামী পরিভাষায় ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে ইসলামী বিধানে নিষিদ্ধ সকল প্রকার কাজ ও চিন্তা পরিহার করে কুরআন ও সুন্নাহ্র নির্দেশমতো জীবনযাপনের মাধ্যমে আল্লাহকে প্রতিনিয়ত প্রেম-মাখা ভয় করে চলাকে তাকওয়া বলে। তাত্ত্বিক অর্থে তাকওয়া বলা হয়- আল্লাহ ভীতির যাচিত মানুষের মনের সে অনুভূতিকে, যা তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মপ্রকাশ করে। মোট কথা, যে সকল ভাব, প্রবৃত্তি এবং কাজ পরজগতে ক্ষতিকর এবং যে সমস্ত কার্যকলাপ দৃশ্যত বৈধ বলে মনে হলেও পরিণতিতে মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে, সে সকল ভাব, প্রবৃত্তি ও কার্যকলাপ হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করাকে তাকওয়া বলে। তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। এই গুণ একজন হজ আদায়কারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার শৈল শিখরে পৌঁছে দেয়। (ওমদাতুল ক্বারী শারহে বুখারী)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন