করোনা মহামারীর চতুর্থ ঈদের শেষে নতুনকরে শুরু হওয়া লকডাউনের প্রাক্কালে দক্ষিণাঞ্চল থেকে বৃহস্পতিবার দিনরাতই রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চল সহ উত্তরবঙ্গমুখি যানবাহন ছিল যাত্রীতে ঠাসা। এমনকি বরিশাল মহানগরীর দুটি বাস টার্মিনাল ও নৌ টার্মিনাল মুখি সড়কগুলোতে পর্যন্ত বৃহস্পতিবার দিনভরই যানজট লেগে ছিল। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি নদী বন্দর সহ সবগুলো নৌ স্টেশনেও তিল ধরার ঠাই ছিলনা।
সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বরিশাল থেকে ১০টি ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহন করে সরকারী-বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বরিশাল বিমান বন্দরে প্রতি ঘন্টায় দুটি করে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। যা ছিল বরিশাল বিমান বন্দরের গত ২৬ বছরের বাণিজ্যিক পরিচালনের ইতিহাসে প্রথম ও বিরল ঘটনা। বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবন সহ কনকর্স হলে পর্যন্ত যাত্রীদের দাঁড়াবার স্থান ছিল না।
অপরদিকে, বরিশাল নদী বন্দর থেকেও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত ১৩টি সরকারী-বেসরকারি নৌযান অন্তত ৫০ হাজার যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এরমধ্যে সরকারী একমাত্র নৌযানটি ছাড়াও আরো কয়েকটি বেসরকারি নৌযানে বিপুল সংখ্যা যাত্রী চাঁদপুর পৌঁছে সড়ক ও রেলপথে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলে গেছেন। এছাড়াও ভোলা এবং পটুয়াখালী নদী বন্দর ছাড়াও পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী স্টেশন সহ দক্ষিণাঞ্চলের আরো অর্ধশতাধিক নৌ-স্টেশন থেকেও অন্তত ৬০টি নৌযানে দেড়লক্ষাধীক মানুষ ঢাকায় কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
তবে প্রায় সব নৌযানেই কথিত সামাজিক দূরত্বের নামে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের কথা বলে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ডেক শ্রেণীতে নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ অর্থ আদায় করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বরিশাল সহ বিভিন্ন নদী বন্দরে ভ্রাম্যামান আদালত সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীও ছিল।
সড়ক পথেও শুধু বরিশাল-ঢাকা রুটেই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অন্তত দেড়শ বাস যাত্রী বহন করছে। এর বাইরে বরিশাল থেকে কাঠালবাড়ী ফেরি ঘাট পর্যন্ত বিআরটিসি সহ বেসরকারি বিপুল সংখ্যক বাসে যাত্রীদের পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা সদর ছাড়াও ৪০টি উপজেলা সদর থেকেও আরো বিপুল সংখ্যক বাসে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা সহ উত্তর বঙ্গ এবং খুলনা বিভাগের বিভিন্ন রুটে যাত্রী বহন অব্যাহত রয়েছে।
তবে এরপরেও ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে এসেছেন, স্বাভাবিক অবস্থায়ও তাদের কর্মস্থলে ফিরতে আরো অন্তত দশদিন লাগার কথা। উপরন্তু ঈদের দিন সহ পড়ের দিন বৃহস্পতিবারেও আরো বিপুল সংখ্যক মানুষ নাড়ীর টানে দক্ষিণাঞ্চলে ফিরছেন স্বজনদের সাথে ঈদ পরবর্তী আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
কিন্তু এরা কবে কিভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন তা বলতে পারছেন না কেউই।
মন্তব্য করুন