শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নিয়মিত এবং তীব্র হবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাশিয়ান সাইবেরিয়ার ইয়াকুটস্ক বিশ্বের শীতলতম শহর হিসাবে পরিচিত। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে শীতের মাসগুলোতে এমনকি নাক উন্মুক্ত থাকলেও চোয়াল অবশ হয়ে যেতে পারে, প্রচ- যন্ত্রণা হতে পারে। এ অঞ্চলের লোকেরা হিমায়িত তাপমাত্রার বিরুদ্ধে সাবধানতা অবলম্বন করতে এবং তারা বহু স্তরের পোশাক পরার জন্য সকালে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে অভ্যস্ত। কিন্তু এখন শীতলতম শহরটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। কারণ এর নিকটবর্তী বনের দাবানল কয়েক সপ্তাহ ধরে বনাঞ্চল ছারখার করে দিয়ে শহরটির ওপর তাপ ছড়াচ্ছে। দাবানলটি এত বড় এবং বাতাস এতোটাই শক্তিশালী যে, এর ধোঁয়া আলাস্কার মতো দূরবর্তী স্থানেও পৌঁছে গেছে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি একটি তীব্র লাল সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করেছে। সেই সাথে শহরটির মানুষ বন্য আগুনের গন্ধ এবং একটি ঘন বাদামী ধোঁয়ার মধ্যে জেগে উঠেছে। সাধারণত, আকাশে অশুভ রক্ত-লাল সূর্যকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, তবে বাস্তবে বিষয়টি তার থেকেও বেশি বিপজ্জনক। চীনের হেনান প্রদেশের ঝেংঝুতে মঙ্গলবার রাতে ভয়াবহ বন্যার ফলে টানেল আটকে ৩৩ জন মারা গেছে। চীনের ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জার্মান শহর এফ্ট্স্ড্যাট বন্যার পানিতে টিস্যু পেপারের মতো ছিঁড়ে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রায় ১শ’ ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রার দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার শহর লিটন। ভারতে বন্যা মারাত্মক ভূমিধ্বস ঘটিয়েছে এবং পশ্চিমা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার আকাশ দাবানলের আগুনে ঢেকে গেছে। নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া এবং ইরানও অনাকাক্সিক্ষত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। লন্ডনে বন্যার তোড়ে কয়েকটি রাস্তা অচল এবং আন্ডারগ্রাউন্ড রেল ব্যবস্থা আংশিক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ২শ’ পৃথক পৃথক দাবানল রাশিয়ার সাইবেরিয়াকে পুড়িয়ে আলাস্কার দিকে ধেয়ে চলেছে। অতি বর্ষণে জার্মানি, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়া এবং নেদারল্যান্ডসে বন্যায় কমপক্ষে ১শ’ ৯৯ জন মারা গেছে এবং আরও শতাধিক নিখোঁজ রয়েছে। উত্তরদিকে, ফিনল্যান্ড তার উষ্ণতম জুন প্রত্যক্ষ করেছে। বিজ্ঞানীরা এবং পরিবেশকর্মীরা বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা স্বাভাবিক স্তরের চেয়ে ২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি থেকে রোধ করার উদ্দেশ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে বিশ্বকে একজোট করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন যে, এ মাসে প্রশান্ত মহাসাগরীরের উত্তর-পশ্চিমে আরও নজিরবিহীন দুর্যোগের সৃষ্টি হতে পারো। লন্ডনের স্কুল অফ ইকোনমিক্সের পরিবেশগত ভূগোলের সহকারী অধ্যাপক টমাস স্মিথ বলেছেন, ‘দাবানলের মওসুম দীর্ঘ হচ্ছে, আগুন আরও বাড়ছে, এগুলো আগের চেয়ে আরও তীব্রভাবে জ্বলছে।’ কোপারনিকাস আবহাওয়া পরিবর্তন পরিষেবা নিরীক্ষা অনুসারে, ইউরোপের বেশিরভাগ, পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ-পশ্চিম কানাডা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু কিছু অঞ্চল জুনে স্বাভাবিকের থেকে বেশি শুষ্ক হয় হতে শুরু করেছে, যা দাবানলের জন্ম দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ক্রমেই বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। এভাবে চলতে থাকলে আবহাওয়া পরিবর্তনে বিশ^জুড়ে দাবানল, দুর্ভিক্ষ এবং ব্যাপক উপকূলীয় বন্যার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আরও নিয়মিত এবং তীব্র হয়ে উঠবে। রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, সিএনএন, রয়টার্স, দ্য ইকোনোমিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন